ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

২০ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধি ॥ পাল্টা ব্যবস্থা নেবে বেজিং

যুক্তরাষ্ট্র-চীন ফের বাণিজ্যযুদ্ধ

প্রকাশিত: ০৮:৫৮, ১১ মে ২০১৯

 যুক্তরাষ্ট্র-চীন ফের বাণিজ্যযুদ্ধ

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধে নতুন মাত্রা যোগ হলো। যুক্তরাষ্ট্র ২০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের চীনা পণ্যের ওপর দ্বিগুণের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে। বসে নেই চীনও। দেশটি পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। চীনা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা আগে ছিল মাত্র ১০ শতাংশ। ইউএস কাস্টমস এ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন বিভাগের উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্স জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় রাত ১২টা ১ মিনিটে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্র অভিমুখী রওনা হওয়া পণ্যের ওপর এই বর্ধিত শুল্ক প্রযোজ্য হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এর আগের তিন দফা শুল্কের সময় এই অতিরিক্ত সময় দেয়া হয়নি। চীন জানিয়েছে, এই পদক্ষেপে তারা খুবই মর্মাহত। পাল্টা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ঘোষণা করেছে দেশটি। এমন এক সময়ে এই পদক্ষেপ নেয়া হলো যখন ওয়াশিংটনে দু’দেশের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা বাণিজ্য চুক্তি রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি চীন ও যুক্তরাষ্ট্র দুদেশের বিগত দিনের বৈরিতা অবসানের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাদের ওয়েবসাইটে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, সহযোগিতা ও পরামর্শের মাধ্যমে বর্তমান সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনা কর্তৃপক্ষ একসঙ্গে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সময়সীমা অতিক্রম হওয়ার পর চীনা স্টক মার্কেটে সামান্য পরিবর্তন এসেছে। হ্যাং সেং বাণিজ্য সূচক শূন্য দশমিক ছয় শতাংশ বেড়েছে এবং সাংহাই কম্পোজিট এক দশমিক পাঁচ শতাংশ উর্ধগতি হয়েছে। রবিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ক বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়ার পর মার্কেটে কিছুটা দরপতন হয়েছিল। বর্তমানে চীনা পণ্য মাছ, হাতব্যাগ, কাপড় ও ফুটওয়্যারের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। বছরের শুরুতে এসব পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ার কথা ছিল। তবে আলোচনা অগ্রসর হওয়ায় এটা বিলম্বিত হয়। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন বলছেন, আলোচনা খুব ধীরগতিতে এগুচ্ছে। গত কয়েক বছরে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। এতে বাণিজ্য ও ভোক্তাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এই অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছেন, তিনি ৩২ হাজার পাঁচ শ’ কোটি ডলারের চীনা পণ্যের ওপর শীঘ্রই ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে পারেন। অন্যদিকে চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী লিউ হে এবং মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটিজার ও অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মুনচিনের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা বৃহস্পতিবার অব্যাহত ছিল। বৃহস্পতিবার সকালে ট্রাম্প বলেন, তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের থেকে দারুণ একটি চিঠি পেয়েছেন এবং ফোনে তাদের কথা বলার সম্ভাবনা রয়েছে। হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র বলেন, মার্কিন কর্মকর্তারা চীনা উপ-প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শুক্রবার সকালে পুনরায় আলোচনা করতে রাজি হয়েছেন। শুল্ক বৃদ্ধির ফলে মার্কিন অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ার বিষয়টি উড়িয়ে দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে কিছু মার্কিন কোম্পানির জন্য এটা চরম সঙ্কট সৃষ্টি করবে এবং ভোক্তাদের চড়া মূল্যে জিনিসপত্র কিনতে হতে পারে। এশিয়ান ট্রেড সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক দেবোরাহ এলমস বলেন, অর্থনীতিতে এটা বড় একটা ধাক্কা হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এর ফলে সকল মার্কিন কোম্পানিকে হঠাৎ করে মূল্যের ওপর ২৫ শতাংশ বেশি গুনতে হবে। আর এটাও মনে রাখতে হবে যে, চীনারা পাল্টা ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। এদিকে শুক্রবার চীন জানিয়েছে, চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শত শত বিলিয়ন ডলার শুল্ক বৃদ্ধির বিরুদ্ধে পাল্টা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে চীন কী ধরনের ব্যবস্থা নেবে এবং কবে থেকে সেটা বাস্তবায়ন হবে সে সম্পর্কে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংক্ষিপ্ত ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে চীন। এতে মার্কিন অর্থনীতির জন্য খারাপ পরিণাম বয়ে আনবে এবং চীন শীঘ্রই এসব পদক্ষেপ নেবে বলে তাদের ধারণা। সেন্টার ফর চায়না এ্যান্ড গ্লোবালাইজেশনের সিনিয়র ফেলো এবং সাবেক চীনা সিনিয়র বাণিজ্য কর্মকর্তা হে ওয়েইওয়েন শুক্রবার গ্লোবাল টাইমসকে বলেন, আমি মনে করি চীন দ্রুত এটির জবাব দেবে। তিনি বলেন, নিজের কথার প্রতি চীন গুরুত্ব দেবে। অন্যথায় আলোচনার জন্য ওয়াশিংটনে থাকা প্রতিনিধিদের ওপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস এ্যান্ড ইকোনমিকস ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসের পরিচালক স্যাং বাইচুয়ান শুক্রবার গ্লোবাল টাইমসকে বলেন, আমার কাছে মনে হয়, দুদেশের সমঝোতায় পৌঁছানোর এখনও সুযোগ আছে। তিনি উল্লেখ করেন, বিরূপ মন্তব্য সত্ত্বেও দুই পক্ষই একটি সমঝোতায় পৌঁছতে আগ্রহী বলে এখনও মনে হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির জবাবে কয়েকটি সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে পারে চীন। এর মধ্যে রয়েছে বর্তমান শুল্ক বৃদ্ধি, মার্কিন পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপসহ অন্যান্য পদক্ষেপ।
×