ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কর খেলাপীদের সেবা বন্ধের কথা ভাবছে রাসিক

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ১১ মে ২০১৯

  কর খেলাপীদের সেবা বন্ধের  কথা ভাবছে রাসিক

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ সরকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানসহ দেড় হাজার ব্যক্তির কাছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া পড়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক)। এর মধ্যে ১০টি সরকারী প্রতিষ্ঠান কখনই হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করেনি। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে রাসিকের রাজস্ব শাখা থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কয়েকবার চিঠি দেয়া হয়েছে। তাতেও বকেয়া হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করেনি প্রতিষ্ঠানগুলো। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হোল্ডিং কর খেলাপী সবার পরিষেবা বন্ধ করাসহ সংশ্লিষ্টদের মালামাল ক্রোকেরও কথা ভাবছে রাসিক। বকেয়া হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের আহ্বান জানিয়ে রাসিকের ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে গত ১৯ এপ্রিল। সেখানে বলা হয়েছে, ‘রাজশাহী মহানগরীতে হোল্ডিং রয়েছে ৬০ হাজার ১৪৬টি। বেশির ভাগ হোল্ডিং মালিক ট্যাক্স পরিশোধ করেন। কিন্তু মাত্র দেড় হাজার ব্যক্তির কাছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া পড়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের। আর ১০টি সরকারী প্রতিষ্ঠান কখনই পরিশোধ করেনি এই ট্যাক্স। এসব বকেয়া ট্যাক্স দ্রুত পরিশোধে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।’ মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ট্যাক্সের টাকায় নাগরিকদের বিভিন্ন সেবা প্রদান করে সিটি কর্পোরেশন। সম্মানিত নাগরিকরা বকেয়া হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদান করলে সিটি কর্পোরেশনের সেবা আরও বৃদ্ধি পাবে। এজন্য তিনি নাগরিকদের আহ্বান জানান, এসব বকেয়া ট্যাক্স পরিশোধের। রাসিকের সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ খানা জরিপ অনুযায়ী রাজশাহী মহানগরীতে ৬০ হাজার ৩৪৬টি হোল্ডিং রয়েছে। বছরে এসব হোল্ডিং থেকে ১১ কোটি ৩৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা ট্যাক্স আদায় হওয়ার কথা। কিন্তু বছরে আদায়যোগ্য ট্যাক্সের ২০ শতাংশও আদায় হয় না। এতে অন্যান্য খাতের টাকা দিয়ে নাগরিক পরিষেবাগুলো চালু রাখতে বাধ্য হয় তারা। সূত্রটি জানায়, ১৬ এপ্রিল থেকে নগরীর হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় পক্ষ শুরু হয়েছে। চলবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। এরই মধ্যে বড় বড় ট্যাক্স খেলাপীদের জরুরী চিঠি দিয়েছে রাসিক। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হোল্ডিং কর পরিশোধ না করলে পরবর্তী পদক্ষেপের কথাও জানিয়ে দেয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েকটি সরকারী প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় দেড় হাজার হোল্ডিংধারীর কাছে রাসিকের বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) কাছে বকেয়া রয়েছে ১ কোটি ৪১ লাখ ৪১ হাজার টাকা। এছাড়া জেলা শিল্পকলা একাডেমির কাছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার, রাজশাহী রাইফেলস ক্লাবের কাছে ৪ লাখ ১১ হাজার, বিভাগীয় স্টেডিয়ামের কাছে ৪৮ লাখ ২০ হাজার, জেলা স্টেডিয়ামের কাছে ৯৮ লাখ ৯১ সহাজার ৬৯৮, রাজশাহী মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজের কাছে ১ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার ৬৯০, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে ৭ লাখ ৪১ হাজার ৬০০, আন্তর্জাতিক টেনিস কমপ্লেক্সের কাছে ১৫ লাখ ৩৮ হাজার ৪৪৯ টাকা, রাজশাহী টেক্সটাইল মিলসের কাছে ২ কোটি ৩৬ লাখ ২৭ হাজার ৮৭৬ এবং রাজশাহী সার্ভে এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের কাছে ১৫ লাখ ৭ হাজার ৯২০ টাকা বকেয়া রয়েছে। রাসিকের সূত্র মতে, এই ১০টি প্রতিষ্ঠান আগে কখনই হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করেনি। এছাড়া এক শ্রেণীর চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার ও ধনিক শ্রেণীর লোকেরাই হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধে অনীহা এবং অসহযোগিতা করে আসছে। বরং মধ্যম আয়ের মানুষেরাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিয়মিত ট্যাক্স পরিশোধ করে থাকে। রাসিকের হোল্ডিং ট্যাক্স রিভিউ কমিটির সভাপতি ও কাউন্সিলর নিযাম উল আযীম বলন, মাত্র দেড় হাজার ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের কাছে এই মোটা অঙ্কের টাকা বকেয়া পড়েছে। ট্যাক্স পরিশোধে তাদের একাধিকবার চিঠিও দেয়া হয়েছে। তাতেও সাড়া নেই। এ অবস্থায় খেলাপীদের সব নাগরিক পরিষেবা বন্ধ করার কথা ভাবছে রাসিক।
×