ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

লাল ফিতায় বন্দী আনিসুল হকের ‘জলনিসর্গ’

প্রকাশিত: ০৮:৪২, ১১ মে ২০১৯

লাল ফিতায় বন্দী আনিসুল হকের ‘জলনিসর্গ’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানী ঢাকাকে ‘জলনিসর্গ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের। হাতিরঝিলের মতো আরও তিনটি জলাঞ্চল ও ওয়াটার পার্ক তৈরি করতে চেয়েছিলেন তিনি। তার অকাল মৃত্যুতে হোঁচট খায় সেই স্বপ্নগুলো। লাল ফিতার দৌড়ে অনেক ফাইলের আড়ালে চাপা পড়ে যায় ‘জলনিসর্গ’ প্রকল্পের ফাইলও। জানা গেছে, সেই ফাইলগুলো সচল করতে সম্প্রতি উদ্যোগী হয়েছেন আনিসুল হকের উত্তরসূরি বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম। ২০১৫ সালের ৬ মে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন আনিসুল হক। এর আড়াই বছরের মাথায় ২০১৭ সালের ৩০ নবেম্বর রাতে লন্ডনের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ঢাকাকে একটি নিরাপদ ও আধুনিক মহানগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ছিল তার। দুই বছরের মতো ডিএনসিসির মেয়র পদে ছিলেন তিনি। এ সময় ডিএনসিসি এলাকায় ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা করেন। উদ্যোগ নেন হাতিরঝিলের আদলে ‘জলনিসর্গ’ নামে তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়নের। রাজধানীর উত্তরায় ‘জলনিসর্গ’ নামে একটি প্রকল্প করার কথা ছিল আনিসুল হকের। এছাড়া, কল্যাণপুরের পেছনের অংশ হয়ে গাবতলী পর্যন্ত এবং রামপুরা-ত্রিমোহনী খাল খনন করে সেখানে জলাধার নির্মাণের কথা ছিল। এছাড়া ডিএনসিসি এলাকায় ৮৭টি পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানও রাখতে চেয়েছিলেন প্রয়াত মেয়র। জলাবদ্ধতা নিরসনে বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশে দ্বিগুণ মৌজায় ওয়াটার পার্ক নির্মাণ, যানজট নিরসনে ইউটার্ন নির্মাণ, ৬টি কোম্পানির মাধ্যমে গণপরিবহন পরিচালনা, আধুনিক ফুটপাথ ও ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ, বারবার রাস্তা কাটা বন্ধ করতে পৃথক ডাকটাইল ব্যবস্থা চালু করা, সবুজ ঢাকা গড়ে তোলা, বস্তিবাসীর আশ্রয়ণ প্রকল্প, নিজের প্রয়াত শিশুসন্তান সরাফের নামে ভ্রাম্যমাণ স্কুল প্রতিষ্ঠাসহ একাধিক প্রকল্প নিয়ে কাজ করছিলেন মেয়র আনিসুল হক। কিন্তু এগুলো পুরোপুরি শেষ করতে পারেননি তিনি। তার মৃত্যুতে গৃহীত এসব উদ্যোগ থমকে যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আনিসুল হকের মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রয়াত মেয়রের সব উদ্যোগ নিয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। মেয়রের মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন প্রয়াত ওসমান গনি ও জামাল মোস্তফা। তারা কেউই আনিসুল হকের স্বপ্নের উদ্যোগগুলো নিয়ে মাথা ঘামাননি। সম্প্রতি ডিএনসিসিতে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আতিকুল ইসলাম। এরইমধ্যে আনিসুল হকের সেই প্রকল্পগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছেন তিনি। মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়েছি মাত্র দেড় মাসও হয়নি। এর মধ্যে ছাত্র আন্দোলন ও অগ্নিকা-ের মতো ঘটনা ঘটেছে। আমাকে সেগুলো দেখতে হয়েছে। আমি অলরেডি ‘জলনিসর্গ’ ফাইলের বিষয়ে বলে দিয়েছি, আগামী মিটিংয়ে যাতে ওঠানো হয়। এরই মধ্যে ফাইল মুভমেন্ট শুরু হয়ে গেছে। আগে এলজিআরডি থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব।’ ডিএনসিসি মেয়র আরও বলেন, ‘কল্যাণপুর খাল উদ্ধার করে সেখানে কীভাবে জলনিসর্গ করা যায়, সেটা ভাবা হচ্ছে। আনিস ভাইয়ের যে প্রকল্পগুলো আছে সেগুলোর প্রতিটি আমার অগ্রাধিকারে রয়েছে। তার প্রকল্পগুলোর মধ্যে জলনিসর্গ ফাইলটি গত ১ মে আমি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। তারা আগামী সপ্তাহে মিটিং ডাকবে।’ তিনি বলেন, ‘বনশ্রীর সামনের খালটি ঢাকা ওয়াসার। তবুও আমরা ওয়াসার সঙ্গে আলাপ করব, কীভাবে এটাকে প্রবহমান করে সুন্দর করা যায়। আমি এগুলো আরও আগেই করতে পারতাম। ছাত্র আন্দোলনের কারণে আমার অনেক সময় চলে গেছে।’ এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘ইচ্ছা থাকলে যে পরিবর্তন করা সম্ভব, তা দেখিয়ে দিয়ে গেছেন আনিসুল হক। তার জলনিসর্গ ঢাকা গড়ার স্বপ্ন নগরবাসীকে আশা জাগিয়েছিল। আমরা আশা করেছিলাম, এবার নগরীর একটা পরিবর্তন হবে। কিন্তু এখন তিনি নেই। এসব পরিকল্পনার কী হবে, সেটা বলা যাচ্ছে না। এখন তারই উত্তরসূরি আতিকুল ইসলাম আছেন। আমরা বিশ্বাস করি, তিনি তার (আনিসুল হকের) ভাল উদ্যোগগুলো নিয়ে অগ্রসর হবেন। আর সরকার যদি চায়, তাহলে উচিত হবে খুব দ্রুত প্রকল্পগুলোর অনুমোদন দিয়ে বাস্তবরূপ দেয়া।
×