ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাজ শেষে দেড় বছরেও হস্তান্তর হচ্ছে না ভবন

প্রকাশিত: ১০:২২, ১০ মে ২০১৯

কাজ শেষে দেড় বছরেও হস্তান্তর হচ্ছে না ভবন

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ প্রায় দেড় বছর আগে ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হলেও মাত্র ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা বকেয়া বিদ্যুত বিলের কারণে ৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নতুন ১৫০ শয্যা ভবন হস্থান্তর হচ্ছে না। ফলে চালু হচ্ছে না বাগেরহাট ২৫০ শয্যা হাসপাতাল। স্বাস্থ্য ও গণপূর্ত বিভাগের মধ্যে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপকূলীয় এ জেলার মানুষ। ফলে অনাকাক্সিক্ষত ভোগান্তি ও মৃত্যুতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। বাগেরহাট জেলার সদর হাসপাতালের ১৫০ শয্যা ভবনেও স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালুর দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। পুরোদমে হাসপাতালটির কার্যক্রম চালু হলে জেলার স্বাস্থ্যসেবায় গুণগত পরিবর্তন আসবে। অনাকাক্সিক্ষত ভোগান্তি ও মৃত্যুর হার কমবে। প্রায় ১৭ লাখ মানুষের চিকিৎসার কেন্দ্রস্থল সদর হাসপাতাল। ১৯৯৭ সালে ৫০ শয্যা থেকে হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত হয়। ২০১৩ সালে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। ওই বছরের জুন মাসে ‘হেলথ পপুলেশন এ্যান্ড নিউট্রিশন সেন্টার ডেভেলপমেন্ট’ প্রজেক্টের আওতায় আধুনিক চিকিৎসা উপযোগী ১৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে নির্মাণ কাজ শেষ হলেও স্বাস্থ্য ও গণপূর্ত বিভাগের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় হাসপাতাল ভবনটির হস্তান্তর প্রক্রিয়া ঝুলে রয়েছে। এরই মধ্যে দুই বিভাগের মধ্যে কয়েক দফা চিঠি চালাচালিও হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা বিদ্যুত বিল বকেয়া থাকায় ভবনটি বুঝে নিচ্ছে না বাগেরহাট স্বাস্থ্য বিভাগ। এলাকাবাসী জানায়, নির্মাণ কাজ শেষ হলেও দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত রয়েছে ভবনটি। এটি চালু হলে রোগীদের উন্নত চিকিৎসা সেবা পেতে জেলার বাইরে যেতে হবে না। দ্রুত এ ভবনে হাসপাতালের কার্যক্রম চালুর দাবি জানান তারা। বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডাঃ জি কে এম সামসুজ্জামান বলেন, ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা বিদ্যুত বিল বকেয়া থাকার কারণে ভবনটি বুঝে নিতে পারছি না। এ বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। ভবন বুঝে নেয়ার আগের বিদ্যুত বিল স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পরিশোধের কোন সুযোগ নেই বলে দাবি করেন তিনি। গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোবারক হোসেন বলেন, ৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবনটি নির্মাণ কাজ দেড় বছর আগে শেষ হলেও স্বাস্থ্য বিভাগ ভবনটি বুঝে নিচ্ছে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শেষে তাদের অস্থায়ী মিটারের বিদ্যুত বিল পরিশোধ করেছে। সিভিল সার্জনের নামে মিটারে বিদ্যুত বিল বকেয়া থাকার বিষয়টি পরস্পর সমঝোতার ভিত্তিতে সমাধান করে দ্রুত হস্তান্তরের চেষ্টা চলছে। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, দ্রুত ভবনটি হস্তান্তরের জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। নীলফামারীতে জনবল সঙ্কট তাহমিন হক ববী নীলফামারী থেকে জানান, জনবল সঙ্কটে চালু হচ্ছেনা নীলফামারী সদর আধুনিক হাসপাতালের আড়াইশ শয্যার নবনির্মিত সাততলা ভবন। রোগীতে ঠাসা-জায়গার অভাবে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ১০০ শয্যার পুরনো হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীদের। জেলা শহরের কলেজ সড়কে ১৯৮৫ সালে সাড়ে সাত একর জমির ওপর প্রথমে নির্মাণ করা হয়েছিল ৫০ শয্যা হাসপাতাল। রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এলাকাবাসীর দাবির মুখে ২০০৩ সালে হাসপাতালটিকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে জনবল থেকে ওই ৫০ শয্যা হাসপাতালের আন্তঃবিভাগ বাদে প্রতিদিন বহির্বিভাগে গড়ে ৭ শতাধিক রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসে। বর্তমানে চালু থাকা ১০০ শয্যা হাসপাতাল হলেও নেই জনবল। ফলে ৫০ শয্যার জনবলে ২২ চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ডেন্টাল ও হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারসহ ১৪জন। আন্তঃবিভাগে পুরুষ, মহিলা, শিশু ও গাইনি ওয়ার্ডে গড়ে প্রতিদিন ভর্তি থাকেন ২৭০ রোগী। বিছানার সংখ্যা স্বল্পতার কারণে প্রতিদিনই মেঝে থেকে শুরু করে বারান্দায়ও কষ্ট করে রোগীরা চিকিৎসাসেবা নেন। সিনিয়র স্টাফ নার্স, স্টাফ নার্সের পদও শূন্য রয়েছে।। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান, হাসপাতালে জরুরী বিভাগ, পুরুষ ওয়ার্ড, মহিলা ওয়ার্ড, গাইনি ওয়ার্ড, শিশু ওয়ার্ড, চক্ষু ওয়ার্ড, নবজাতক ওয়ার্ড, লেবাররুম, জেনারেল ওটি, চক্ষু ওটি, এএনসি, ডায়রিয়া ওয়ার্ডসহ ১৩টি ওয়ার্ড রয়েছে। এসব ওয়ার্ড চলছে ২৭ নার্স দিয়ে। এ অবস্থায় নীলফামারী সদর আধুনিক হাসপাতালকে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হলে টেন্ডারের মাধ্যমে ৭ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। জানা যায়, ৭তলা ভবন নির্মাণ ও হাসপাতালে সকল আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতির জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ২৭ কোটি ৬৬ লাখ ৩২ হাজার ১৭০ টাকা। ফলে এই ভবনসহ সকল প্রকার স্থাপনের কাজ ২০১১ সালের জুলাই শুরু হয়ে ২০১৬ সালের জুন মাসে শেষ হয়। ভবনটি স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। জানা গেছে, নীলফামারী সদর আধুনিক হাসপাতালের আড়াইশত শয্যা হাসপাতালটি চালুকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে একটি প্রস্তাবনার মাধ্যমে জনবলের চাহিদাপত্র প্রেরণ করা হয়। এরমধ্যে বিদ্যমান ১২৮ পদ যোগ রেখে নতুন করে আরও ১৩৪ জনসহ মোট ২৬২ জন। এরমধ্যে চিকিৎসক চাওয়া হয়েছে ৫৮ জন। সকল পদের নার্স চাওয়া হয়েছে ৮০ জন। এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডাঃ রনজিৎ কুমার বর্মনের সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি জানান আমরা জনবলের জন্য চাহিদাপত্র প্রেরণ করেছি। জনবল নিয়োগ হলেই নতুন ভবনে কার্যক্রম যে কোন মুহূর্তে শুরু করা সম্ভব হবে।
×