ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আয়াক্সকে কান্নায় ভাসিয়ে ফাইনালে টটেনহ্যাম

প্রকাশিত: ১০:১৫, ১০ মে ২০১৯

 আয়াক্সকে কান্নায় ভাসিয়ে ফাইনালে টটেনহ্যাম

জাহিদুল আলম জয় ॥ এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লীগটা ইতিহাসের সেরা প্রত্যাবর্তনের গল্প হয়ে থাকবে। নকআউট রাউন্ডে প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই প্রথম লেগে যেসব দল বড় বা ন্যূনতম ব্যবধানে জিতেছে তারাই দ্বিতীয় লেগে অবিশ্বাস্যভাবে হেরে বিদায় নিয়েছে। সর্বশেষ দু’টি সেমিফাইনালেই এমন দৃশ্য দেখা গেছে। প্রথম লেগে লিভারপুলের বিরুদ্ধে ৩-০ গোলের জয়ের পর মঙ্গলবার রাতে দ্বিতীয় লেগে ৪-০ গোলে হেরে বিদায় নিয়েছে বার্সিলোনা। বুধবার রাতেও একই চিত্রনাট্যের দেখা মিলেছে। গত ৩০ এপ্রিল লন্ডনে ১-০ গোলে জিতে আসা আয়াক্স শেষ চারের ফিরতি লেগ খেলতে নামে নিজেদের মাঠ আমস্টারডামের জোহান ক্রুইফ এ্যারানায়। প্রথমার্ধেই ২-০ গোলে এগিয়ে যেয়ে ফাইনালও প্রায় নিশ্চিত করে ফেলে স্বাগতিকরা। কিন্তু ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে যা ঘটলো তা যেন রূপকথাকেও হার মানায়। ৫৫ ও ৫৯ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার লুকাস মউরা জোড়া গোল করে স্পার্সদের ম্যাচে ফেরান। এই অবস্থায়ও যদি খেলা শেষ হতো তাহলে ফাইনালে চলে যেত আয়াক্স। আর আরেক গোল পেলে ডাচ ক্লাবকে টপকে ফাইনালে যাবে টটেনহ্যাম। এমন অবস্থায় অলআউট খেলতে থাকে মরিসিও পচেট্টিনোর দল। বেশ কয়েকটি সুযোগও আসে, কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছিল না। স্পার্সদের আক্রমণাত্মক খেলার কারণে পাল্টা আক্রমণে আয়াক্সও বেশ কয়েকটি সুযোগ পায়। কিন্তু গোলরক্ষক হুগো লরিস ও পোস্টে বাধার কারণে গোল পায়নি ডাচ ক্লাবটি। ওই সময় আয়াক্স আরেক গোল পেয়ে গেলে আর কিছুই করার থাকতো না টটেনহ্যামের। কিন্তু বিধাতা যে ম্যাচের চিত্রনাট্য অন্যভাবে লিখে রেখেছিলেন। তাইতো ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে যোগ করা সময়ের পাঁচ মিনিটে হয়ে যায় অবিশ্বাস্য ঘটনা। অতিরিক্ত পাঁচ মিনিটও শেষ; রেফারি শেষ বাঁশি বাজার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অথচ তখনই মউরা আরেকটি গোল করে টটেনহ্যামকে ফাইনাল মঞ্চে তুলে নেন (৩-২)। কেননা তখন দুই লেগ মিলিয়ে ৩-৩ গোলে সমতা হলেও প্রতিপক্ষের মাঠে বেশি গোল করার সুবাদে জয় পায় ডেলে আলি, ফার্নান্ডো লরেন্টোরা। শেষ সময়ে গোল হজম করার পর টটেনহ্যামের ফুটবলাররা সবাই মাঠে লুটিয়ে পড়েন। স্টেডিয়ামে উপস্থিত প্রায় ৫৩ হাজার দর্শকও ১৯৯৬ সালের পর ফাইনালে খেলার সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় কান্না থামাতে পারেননি। অন্যদিকে টটেনহ্যাম শিবিরেও চলতে থাকে সুখের কান্না। বিশেষ করে বিজয়ী দলের কোচ পচেট্টিনোর কান্না অন্য মাত্র যোগ করে। সবমিলিয়ে হেরে যেমন আয়াক্স কান্নার সাগরে হাবুডুবু খেয়েছে, তেমনি জিতেও সুখের কান্নায় সিক্ত হয়েছে স্পার্সরা। ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার ডেভিড নেরেস ইনজুরিতে পড়লে তার পরিবর্তে আয়াত্মেস মূল একাদশে খেলতে নামেন কাসপার ডলবার্গ। ম্যাচ শুরুর পাঁচ মিনিটেই লাসে সোচেনের কর্নার থেকে ডি লিটের হেডে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। পরের মিনিটেই সং হেয়াং-মিনের ক্রস পোস্টে লেগে ফেরত আসে। ৩৫ মিনিটে টাডিচের পাস থেকে বাঁ পায়ের জোরালো শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন হাকিম জিয়েচ। দুই গোলে পিছিয়ে পড়ে স্পার্স সমর্থকরা অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়ে। দ্বিতীয়ার্ধে অনেকটাই উজ্জীবিত স্পার্সদের সামনে বেশিরভাগ সময়ই বিপদে পড়তে হয়েছে আয়াক্স রক্ষণভাগকে। ৫৫ মিনিটে ডেলে আলির সঙ্গে বোঝাপড়ায় মউরা স্বাগতিক গোলরক্ষক ওনানাকে পরাস্ত করেন। চার মিনিট পর বদলি খেলোয়াড় লরেন্টের বল ওনানা রুখে দিলে ফিরতি বলে মউরা দারুণ দক্ষতায় রক্ষণভাগকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়ান। টেনশনে থাকা আয়াক্স বারবার চেষ্টা করেও আরেকটি গোল আদায় করতে পারেননি। জিয়েচ একাই দুটি সুযোগ নষ্ট করেন। কিন্তু ইনজুরি টাইমের শেষ মিনিটে মউরা সব হিসেব-নিকেশ পাল্টে দেন। অথচ নেইমারকে দলে নিতে গিয়ে প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন মউরাকে বিক্রি করে দিয়েছিল। এই ম্যাচেও তারকা স্ট্রাইকার হ্যারি কেনের অনুপস্থিতিতে সুযোগ পান। আর সুযোগটা কাজে লাগিয়ে উপেক্ষার জবাব দিয়েছেন ২৬ বছর বয়সী এই ফুটবলার। মউরা ম্যাচ শেষে বলেন, ফুটবল এভাবেই এমন কিছু মুহূর্ত উপহার দেয় যা কেউ হয়তো কখনও কল্পনাও করতে পারে না। আমাদের এখন উদযাপনের সময়। আমার ক্যারিয়ারে এটাই সবচেয়ে সেরা মুহূর্ত। কান্নায় ভেঙ্গে পড়া টটেনহ্যাম কোচ পচেট্টিনো বলেন, আমার জীবনে এটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত হয়ে থাকবে। সর্বপ্রথম আমি খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানাতে চাই। তাদের জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে। আমি আগে বলেছি তারাই আমার নায়ক। আর আমি তাদের ‘সুপার হিরো’ হিসেবে আখ্যা দেব। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে এভাবেও যে যাওয়া যায় তারা সেটাই প্রমাণ করেছে। এটা সত্যি অবিশ্বাস্য।
×