ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জরুরী সংবাদ সম্মেলন

ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার হুমকি কাদের সিদ্দিকীর ॥ আল্টিমেটাম

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ১০ মে ২০১৯

 ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার হুমকি কাদের সিদ্দিকীর ॥ আল্টিমেটাম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটের বিজয়ীদের শপথ গ্রহণ, ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচীসহ নানা ইস্যুতে টানাপোড়েন যাচ্ছিল ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে। এক কথায় বললে শরিকদের তীব্র আপত্তির মুখে বিএনপি ও গণফোরামের সাংসদের শপথ নেয়ার পরই নতুন এই রাজনৈতিক মোর্চায় ঐক্যের সঙ্কট দেখা দেয়। বৃহস্পতিবার জোটে অনৈক্যের বিষয়টি কাদের সিদ্দিকীর সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আরও স্পষ্ট হলো। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে বলে দাবি করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী। তিনি ফ্রন্ট ছাড়ার হুমকি দিয়ে বলেছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে থাকা অসঙ্গতি আগামী এক মাসের মধ্যে নিরসন করা না হলে তার দল এই জোট ছেড়ে দেবে। এজন্য তিনি আগামী ৮ জুন পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বলেন, এই সময়ের মধ্যে জোটের মধ্যে সকল অসঙ্গতি দূর করতে হবে। অন্যথায় ঐক্যফ্রন্ট থেকে আমাদের দলকে প্রত্যাহার করে নেব। বৃহস্পতিবার মতিঝিলে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে এমন ঘোষণা আসে। জোট ছাড়তে এক মাসের আল্টিমেটাম দেয়ার পরপরই কামাল হোসেনের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। তিনি জোটের শরিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের পথ অনুসরণ করতে পারে ঐক্যফ্রন্টের আরও একাধিক শরিক দল। এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা ও প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে কামাল হোসেনের সঙ্গে কাদের সিদ্দিকীসহ আরও একাধিক রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে দেখা যায়। যদিও রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই ঐক্য কোন দিনই স্থায়ী রূপ নেয়নি। এবারও ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম মিত্র হিসেবে সর্বশেষ রাজনৈতিক দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এতে যোগ দিয়েছিল। ছয় মাসের মাথায় ঐক্যে ফাটল ধরে। বিরক্ত হয়ে ফ্রন্ট নেতাদের আল্টিমেটাম দিতে বাধ্য করেন শরিক এই নেতা। সংবাদ সম্মেলনে কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, গত ১৩ অক্টোবর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল। সেই বছর ৫ নবেম্বর আমরা ঐক্যফ্রন্টে যোগদান করি। কিন্তু এই জোটে নির্বাচনের পর অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন পরবর্তী কিছু কিছু কাজে মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তারা সঠিকভাবে চলতে পারেনি। নির্বাচনী সহিংসতায় আহত-নিহতদের পাশে দাঁড়াতে পারেনি ঐক্যফ্রন্ট। সর্বশেষ ফেনীর নুসরাত হত্যাকা-ের প্রতিবাদে ৩০ এপ্রিল শাহবাগে গণজমায়েত করতে ব্যর্থ হয়েছি আমরা।’ কাদের সিদ্দিকীর অভিযোগ, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে নির্বাচনের নামে জঘন্য নাটক হয়েছে। যা শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর কোন দেশেই এমন নাটকের নজির নেই। নির্বাচন পরবর্তী ঐক্যফ্রন্ট থেকে বলা হয়েছিল, আমরা এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করছি। সেটা ছিল যথার্থ, রাজনৈতিক স্বার্থে। পরবর্তীতে কিছু সময় যেতে না যেতে গণফোরামের সদস্য সুলতান মনসুর সংসদে যাওয়ার জন্য পাঁয়তারা করলেন, তাকে যাওয়ার জন্য বারণ করা হলো। কিন্তু তিনি শপথ নিলেন এবং সংসদে গেলেন। জোট নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করার পরও গণফোরামের সুলতান মনসুর শপথ নিলে তাকে বহিষ্কার করা হয়। আবার মোকাব্বির খান শপথ নিলে ড. কামাল হোসেন তাকে গেট আউট বলেন। পরে দেখা যায় গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিলে মোকাব্বির খান উপস্থিত হন। এসব নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। মানুষ এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আমরা জবাব দিতে পারি না। তিনি বলেন, ‘বিএনপির তথাকথিত নির্বাচিত ছয় জনের মধ্যে প্রথম যখন একজন শপথ নিলেন, তখন তাকে বহিষ্কার করা হলো। পরবর্তীতে চার জন যখন শপথ নিলেন তাদের স্বাগত জানানো হলো। কিন্তু মির্জা ফখরুল শপথ নেয়া থেকে বিরত থাকলেন। এসব মানুষকে বিভ্রান্ত করে। মানুষের কাছে এসবের জবাব দিতে হয়।’ এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কাদের সিদ্দিকী বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার আল্টিমেটাম দেয়ার আগে জোটের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন, আ স ম আবদুর রব, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মাহমুদুর রহমান মান্না, মোস্তফা মহসিন মন্টুর সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের জোটের মধ্যকার অসঙ্গতির কথা বলেছি। কাদের সিদ্দিকী বলেন, আজ আমাদের দলের বর্ধিত সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পরবর্তী পর্যায়ে যে সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায়নি, বিশেষ করে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে এবং সেই ফ্রন্টের সাত জন কারও সঙ্গে আলোচনা না করে শপথ নিয়েছে, কেন ঐক্যফ্রন্ট পরিচালনায় এতো দুর্বলতা ও সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে আমরা জোটকে এক মাস সময় দিয়েছি।’ ভোটারবিহীন নির্বাচনে অংশ নিয়ে যারা সংসদে গেছেন ভবিষ্যতে এরা সবাই মীরজাফরের চাইতেও ঘৃণীত মানুষ হিসেবে বিবেচিত হবেন বলেও উল্লেখ করেন জোটের এই নেতা। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার। গত সংসদ নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, এ নির্বাচনে ভোটারদের ভোট দিতে হয়নি। স্থানীয় নির্বাচনেও মানুষ ভোট দিতে উৎসাহবোধ করেনি। তিনি বলেন, দেশে মানুষের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। ঘুম থেকে উঠলে দুঃসংবাদ ছাড়া সুসংবাদ প্রত্যাশা করা যায় না।
×