ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বড় অবকাঠামো খাত নির্মাণে ব্যয় করা হবে;###;এই বিনিয়োগের আওতায় ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে দ্রুতগতির পৃথক রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা ;###;একই সঙ্গে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকার সঙ্গে বরিশাল ও পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ

সৌদি ৩৫ বিলিয়ন ডলার ॥ বিনিয়োগ আনার প্রক্রিয়া শুরু

প্রকাশিত: ০৯:২০, ১০ মে ২০১৯

সৌদি ৩৫ বিলিয়ন ডলার ॥ বিনিয়োগ আনার প্রক্রিয়া শুরু

এম শাহজাহান ॥ বড় অবকাঠামো খাত নির্মাণে সৌদি আরব থেকে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আনার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। বাংলাদেশী মুদ্রায় এই অর্থের পরিমাণ প্রায় (প্রতি ইউএস ডলার ৮৫ টাকা ধরে) ২ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সৌদি আরবের বিনিয়োগ আনতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ সংক্রান্ত গঠিত ‘নির্বাহী মনিটরিং কমিটি’। এই বিনিয়োগের আওতায় ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে দ্রুতগতির পৃথক রেলপথ নির্মাণ করতে চায় সরকার। একই সঙ্গে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকার সঙ্গে বরিশাল ও পায়রা বন্দর পর্যন্ত দ্রুতগতির রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্বের বৃহৎ তেল কোম্পানি সৌদির আরামকোর রিফাইনারি স্থাপন করা হবে বাংলাদেশে। বিদ্যুত খাতের বড় বড় প্রকল্পতে সৌদি আরব অর্থায়ন করবে। সৌদি আরবের বিনিয়োগ প্রস্তাব দ্রুত কার্যকর করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি রমজান মাসেই দেশটি সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, সৌদি আরবের বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়গুলোর পরিষ্কার ধারণা দিতে একটি কনসেপ্ট নোট চূড়ান্ত করে এনেছে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের সময় এই কনসেপ্ট নোট সৌদি সরকারের কাছে তুলে দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সৌদি বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে নির্বাহী মনিটরিং কমিটির তিনটি সভা এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে পরবর্তী বৈঠক আগামী ১৪ মে অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে সৌদি বিনিয়োগ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে। আগামী অর্থবছরের মধ্যেই সৌদি আরবের বিনিয়োগ দেশে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, সৌদির পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের ২৫০ বিলিয়ন ডলার বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে মধ্যপ্রাচ্যের তেল অর্থনীতি নির্ভর এই দেশটি। মূল লক্ষ্য, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বহুমুখীকরণ। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ নিয়ে সৌদি আরবের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনা সরকারের ধারাবাহিকতা, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে রোডম্যাপ গ্রহণ, বিনিয়োগে ওয়ানস্টপ সার্ভিস নিশ্চিত করা, ভিশন-২১ এর মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে পৌঁছানো এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যমাত্রার মতো কর্মসূচীতে আকৃষ্ট হয়েছে সৌদি আরব। বাংলাদেশের অবকাঠামো নির্মাণ, বিদ্যুত, জ্বালানি, সেবা ও উৎপাদনমুখী শিল্প খাতে বিনিয়োগ করতে চায় মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি। চলতি রমজানেই সৌদি আরর সফরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সৌদি বাদশা ও প্রিন্স সালমান। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত চুক্তিগুলো দ্রুত কার্যকরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, সৌদি আরব বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও তাদের বিনিয়োগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চলতি রমজান মাসে সৌদি সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে দেশটি। প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাব্য এই সফর সামনে রেখে বিডা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। কি ধরনের বিনিয়োগ কোথায় কোথায় হতে পারে তার একটি কনসেপ্ট নোট বা ধারণাপত্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় এই কনসেপ্ট নোটের ওপরও আলোচনা করা হবে। অবকাঠামো খাতে সৌদির বড় বিনিয়োগ ॥ সৌদি আরবের অর্থায়নে ঢাকা-বরিশাল-পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত দ্রুত গতির রেলপথ স্থাপন করা হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যেও দ্রুতগতির রেল সংযোগ প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে চায় সৌদি আরব। এখন ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে যে রেলপথ আছে, দ্রুতগতির রেল এই লাইন ব্যবহার করতে পারবে না। তাই নতুন করে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে দ্রুতগতির রেলপথ নির্মাণ করা হবে। বিশ্বের বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আরামকো বাংলাদেশে তেল রিফাইনারি প্রতিষ্ঠান করবে। এই প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত এলএনজি দিয়ে পাওয়ার প্ল্যান্ট করবে সৌদি আরবের আকুয়া প্র কোম্পানি। এছাড়া সৌদি আরবের এসএএলআইসি কোম্পানি, এসএবিআইসি কোম্পানি, মাদান কোম্পানি, আল-ফানার কোম্পানি, আল-বাওয়ানি কোম্পানি, আল সালাম এয়ারক্রাফট কোম্পানি, রিয়াদ ক্যাবলস গ্রুপ, ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশন কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। এছাড়া স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের লক্ষ্যে দুটি সৌদি কোম্পানির প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন। তারা বায়োমেডিকেল প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করবে। তারা ময়মনসিংহ ও জামালপুরে বাংলাদেশী টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষণ দেবে এবং তাদের সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচের অন্যান্য দেশে নিয়োগের সুযোগ করে দেবে। বিমান চলাচল খাতে রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও অন্যান্য সেবা অবকাঠামো তৈরিতে সৌদি আরব বিনিয়োগ করবে। লালমনিরহাটে এই সার্ভিস সেন্টার তৈরি করা হবে এবং উড়োজাহাজের সেবায় এটা আন্তর্জাতিক মানের একটি ফ্যাসিলিটি হবে। শুধু তাই নয়, ১০ কোটি ডলারের একটি সৌর বিদ্যুত প্রকল্প ফেনীতে করা হবে। কাজী এম আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় আগ্রহ রেলপথ ও তেল রিফাইনারি করার ব্যাপারে। এছাড়া উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণের মতো বড় প্রকল্প নিয়েও তাদের আগ্রহ রয়েছে। তিনি বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সৌদির আগ্রহ গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হচ্ছে। বাণিজ্য বাড়াতে হচ্ছে বিজনেস কাউন্সিল ॥ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে সৌদি আরবের সঙ্গে একটি বিজনেস কাউন্সিল গঠন করা হচ্ছে। এ কাউন্সিলে বেসরকারী খাতের প্রতিনিধিদের রাখা হচ্ছে। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধি ও রিয়াদ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও কাউন্সিল অব সৌদি চেম্বারের প্রতিনিধিদের এ কাউন্সিলের সদস্য হবেন। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে কাজ করবে এই কাউন্সিল। বাংলাদেশ থেকে হালাল ফুড আমদানি করবে সৌদি আরব। বিশেষ করে গরুর মাংস, মাছ ও শাক-সবজির ব্যাপারে সৌদির আগ্রহ রয়েছে। এছাড়া দেশের গার্মেন্টস পণ্য রফতানিরও উদ্যোগ রয়েছে। সৌদি আরব থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ সার আমদানি হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য পণ্যসামগ্রীও আমদানি হতে পারে। এ লক্ষ্যে কাজ করবে বিজনেস কাউন্সিল। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব মফিজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, সৌদির বিনিয়োগের বিষয়টি দেখছে বিডা। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত যেসব বিষয় রয়েছে তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে করা হচ্ছে। তিনি বলেন, দুদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে বিজনেস কাউন্সিল গঠন করা হচ্ছে। এ কাউন্সিলের সদস্যরা শীঘ্রই কাজ শুরু করবে।
×