ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিদায় সুবীর নন্দী

প্রকাশিত: ০৮:৫২, ১০ মে ২০১৯

 বিদায় সুবীর নন্দী

বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী আর নেই। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৪টায় সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার জীবনাবসান হয়। অসংখ্য কালজয়ী গানের কণ্ঠের জাদুকর চিরতরে সব কিছুকে পেছনে ফেলে চলে গেলেন। রেখে গেলেন তার অসাধারণ কণ্ঠের মর্মস্পর্শী সুর দ্যোতনা। ১৯৫৩ সালে সিলেটে জন্ম নেয়া এই কিংবদন্তি শিল্পী মাত্র ৬৬ বছর বয়সে নিকটজন, গুণগ্রাহী, শুভানুধ্যায়ীদের চোখের জলে সিক্ত করে চির বিদায় নিলেন। এ তো কোন মৃত্যু নয়। এক যুগস্রষ্টা সঙ্গীত সাধকের চিরস্থায়ী আবেদনের স্রোতে নিরন্তর ভেসে যাওয়া। মানুষের জন্য যাদের জীবন ও কর্মদ্যোতনা উৎসর্গিত তারা চিরদিন বেঁচে থাকেন তার অগণিত ভক্ত, শ্রোতার মাঝে। সুবীর নন্দীও সেই মাপেরই একজন শৈল্পিক ব্যক্তিত্ব, যিনি তার কণ্ঠের নান্দনিক শৌর্যে সবাইকে আবিষ্ট করে রাখতেন। এমন মর্মস্পর্শী, জাদুকরী কণ্ঠ কখনও হারিয়েও যাবে না। সঙ্গীতের পারিবারিক আবহে জন্ম নেয়া এই সুরসাধক ছোট বয়স থেকেই গানের জগতে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। ১৪ এপ্রিল সিলেটের মৌলভীবাজার থেকে ঢাকায় ফেরার জন্য রেলপথে রওয়ানা হন। কিন্তু যাত্রার মাঝখানেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে একুশে পদক প্রাপ্ত শিল্পীকে ৩০ এপ্রিল সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও তেমন কোন উন্নতি হয়নি। বরং কয়েকবার হার্ট এ্যাটাক হয়। চিকিৎসকদের সমস্ত চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে চিরপ্রস্থানে চলে যান তিনি। ‘দিন যায় কথা থাকে’ কিংবা ‘কত যে তোমাকে বেসেছি ভাল সে কথা যদি তুমি জানতে’ এমন মধুর কথা ও সুর সুবীর নন্দীকেই বেশি করে মনে করিয়ে দেয়। এমন সুবর্ণ সময়ের দিনগুলো পার করে সুবীর নন্দী আজ শুধু স্মৃতির মাঝেই আটকে থাকলেন। শ্রোতারা তাকে যে কত ভালবাসত সেটা নিজেই কি কখনও অনুভব করেছেন তিনি? সঙ্গীত জগতের বিশিষ্ট অগ্রনায়করা এই অনবদ্য শিল্পীর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শুধু যে তার অসাধারণ গায়কীর প্রশংসা করেছেন তা নয়, বরং সুরে নিবেদিত এই শিল্পীর শুদ্ধ সঙ্গীত চর্চায় অনমনীয় নিষ্ঠাকেও তুলে ধরলেন। এই শিল্পীর প্রতিটি গানে তার যে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও দ্যুতি ছড়াতো সেটাই তাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। যা কোন কণ্ঠসাধকের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। গানকে শুধু যে শৈল্পিক সুষমায় নিবিষ্ট করেছেন তা নয়, প্রতিদিনের যাপিত জীবনে সুখ-দুঃখ, হাসিকান্নার অনষঙ্গ হিসেবেও নিয়তই চর্চা করেছেন। একুশে পদকসহ বিভিন্ন পুরস্কার আর সম্মাননায় বিভিন্ন সময় জীবনটা পরিপূর্ণ হয়েছে তার। পুরস্কার অবশ্যই স্বীকৃতি। তবে আপন বিশিষ্টতায় নিজেকে অসাধারণ উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি। সুবীর নন্দী সে মাপেরই একজন কণ্ঠশিল্পী, যিনি স্বকীয় মহিমায়, কণ্ঠের জাদুকরী ছোঁয়ায় দর্শক, শ্রোতা আর ভক্তদের হৃদয় ভরিয়ে দিয়েছেন। শিল্পীর বিদেহী আত্মার প্রতি শান্তি কামনার পাশাপাশি তার স্বজনদের জানাই সমবেদনা।
×