ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গণপরিবহনে গণধর্ষণ

প্রকাশিত: ০৮:৪৮, ১০ মে ২০১৯

গণপরিবহনে গণধর্ষণ

গণপরিবহনে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে আবারও। ঘটনাস্থল স্বর্ণলতা পরিবহনের একটি বাস, যেটি রাজধানীর মহাখালী থেকে যাচ্ছিল কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী হয়ে বাজিতপুরের পিরিজপুর। বাসচালক ও সহযোগী কর্তৃক ধর্ষিত ও নিহত নার্স শাহিনুর আক্তার চাকরি করতেন ইবনে সিনা হাসপাতালের কল্যাণপুর শাখায়। বাসচালক, সহকারীসহ ৫জন আপাতত ধর্ষণ ও হত্যার কথা অস্বীকার করলেও প্রাথমিক তদন্তে ধর্ষণের আলামত মিলেছে। ময়নাতদন্তের পর বিষয়টি সুস্পষ্ট হবে। ধৃতদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। যা হোক, ভারতের দিল্লীতে চলন্ত বাসে ‘নির্ভয়াকে’ গণধর্ষণ ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যার পর উপমহাদেশে ক্ষোভ বিক্ষোভসহ তোলপাড় শুরু হলেও প্রশমিত না হয়ে আরও বাড়ছে ধর্ষণের ঘটনা। গণপরিবহন রীতিমতো বিপজ্জনক ও অনিরাপদ হয়ে উঠেছে বিশেষ করে নারী ও শিশুর জন্য। একই দিনে পত্রিকায় খবর আছে যে, শুধু পোশাক কারখানায় কর্মরত নারী শ্রমিকদের শতকরা ২২ দশমিক ৪ ভাগ কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার হয়ে থাকে। প্রশ্ন হলো, এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? ইতোপূর্বে রাজধানীর সন্নিকটে ধামরাইয়ে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন একজন পোশাককর্মী। সাভারগামী যাত্রীসেবা পরিবহনের একটি বাসে উঠলে এক পর্যায়ে ঘটে গণধর্ষণের ঘটনা। টহল পুলিশের ত্বরিত তৎপরতায় বেশ দ্রুতই ধর্ষকদের গ্রেফতার করা গেছে। ধর্ষক ৫ জনকে রিমান্ডেও নিয়েছে পুলিশ। ভুক্তভোগী তরুণী মামলাও করেছিল ধামরাই থানায়। ধর্ষকদের দ্রুত বিচার ও চরম শাস্তি কাম্য হলেও মামলার অগ্রগতির খবর নেই। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে রূপা খাতুন নাত্নী এক চাকরিজীবী নারী গণধর্ষণ ও হত্যার শিকার হন। ওই ঘটনায় মামলার রায়ে খুব দ্রুত নিম্ন আদালত বাসটির চালক ও সহকারীসহ ৪ জনকে মৃত্যুদ-ের আদেশ দেন। সেই মামলার গতিও থেমে আছে উচ্চ আদালতে। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের কাছে ধর্ষিত ও নিহত তনু হত্যা মামলাও ধামাচাপা পড়েছে। ধর্ষণের সংখ্যা ও ব্যাপ্তি বাড়ছে দিন দিন। প্রতি মাসে ৫৫ শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। ২৬৯টি বেসরকারী সংস্থার প্লাটফর্ম বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই পরিসংখ্যান। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ১৭৬ জন শিশু শিকার হয়েছে ধর্ষণের। এর মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ২৫ শিশুকে। গত বছর ধর্ষণের শিকার হয়েছিল ১৪৫ শিশু। আরও যা অবাক ব্যাপার, তা হলো ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে শিশুরাও। কেন এসব হচ্ছে তা নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট মহলে। এর আপাত কারণ হতে পারে দুর্বল চার্জশীট, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, সর্বোপরি বিচারহীনতার সংস্কৃতি। নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার শিশুরা অসহায় ও দরিদ্র বিধায় অপরাধীরা ক্ষমতাবান হলে মামলার গতি মুখ থুবড়ে পড়ে। যে কারণে আজ পর্যন্ত প্রায় কোন ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। ফলে ধর্ষণের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। নারীর ক্ষমতায়নসহ অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও উন্নয়নে বাংলাদেশের নারী সমাজ বিশ্বে ঈর্ষণীয় পর্যায়ে এগিয়ে থাকলেও পিছিয়ে আছে এদিক থেকে। অবশ্য নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ইত্যাদি প্রতিরোধে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্নসহ দেশে যথেষ্ট ভাল আইন রয়েছে। ধর্ষকদের ফাঁসি অথবা ক্রসফায়ারে দেয়ার দাবিও উঠেছে। তবে দুঃখের সঙ্গে স্বীকার করতে হয় যে, বিস্তৃত পরিসরে এর প্রয়োগ প্রায় নেই বললেই চলে। অবশ্য এর জন্য নিম্ন আদালতসহ থানা-পুলিশও কম দায়ী নয় কোন অংশে। সেখানে ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বিস্তর। বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর অভিগম্যতা সীমিত। সরকার ও আদালত সে ক্ষেত্রে নারীর ন্যায়বিচার দ্রুত নিশ্চিতকরণে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানে আন্তরিক ও সচেষ্ট হবে বলেই প্রত্যাশা।
×