ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পরমাণু চুক্তির কিছু শর্ত স্থগিত

প্রকাশিত: ১০:২৭, ৯ মে ২০১৯

 পরমাণু চুক্তির কিছু শর্ত স্থগিত

ইরান ২০১৫ সালে কয়েকটি দেশের সঙ্গে করা ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তির কিছু শর্ত স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বুধবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্তের কথা জানায়। এর আগে গত বছর চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ইরান জেসিপিওএ’র (পারমাণবিক চুক্তি) কিছু প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে যে অঙ্গীকার করেছিল, সেটা থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা পরিষদ। এ সিদ্ধান্ত চুক্তির পক্ষগুলোকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চুক্তির পক্ষগুলো হলো ব্রিটেন, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া ও জার্মানি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বুধবার এক বৈঠকে উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাকচি ওই পাঁচ দেশের রাষ্ট্রদূতের কাছে সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছেন। মঙ্গলবার আকস্মিক ইরাক সফরকালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ইরানের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ‘আসন্ন’ হামলার অভিযোগ করেন। এরপরই বুধবার এ বৈঠক করা হলো। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে ইরান পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচী জোরদার করতে পারে। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, দেশের বাইরে বিক্রি করার পরিবর্তে তারা দেশেই সমৃদ্ধিকৃত ইউরেনিয়াম মজুদ করবে। তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, আগামী ৬০ দিনের মধ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। -এএফপি, বিবিসি ও গার্ডিয়ান। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন সতর্ক করে বলেছিলেন, তেহরানের যে কোন হামলার জবাবে ওয়াশিংটনও পাল্টা ভয়াবহ হামলা চালাবে। এরপরই মধ্যপ্রাচ্যে একটি মার্কিন বিমানবাহী রণতরী, পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন বি-৫২ বোমারু বিমান মোতায়েন করেছে ওয়াশিংটন। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েনের বিষয়টি খারিজ করে দেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইরানের কার্যক্রম বৃহৎ শক্তিগুলোর সঙ্গে করা পারমাণবিক চুক্তির লঙ্ঘন নয়। মস্কো সফররত ইরানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেন, ‘ইরান স্বেচ্ছায় যেসব পদক্ষেপ ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করছিল সেটা বন্ধের যথাযথ সময় বলে মনে করছে ইসলামী প্রজাতন্ত্র।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘ইরান চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাবে না। জেসিপিওএ ইরানকে প্রতিশ্রুতি স্থগিতের অধিকার দিয়েছে।’ জারিফ বলেন, চুক্তির ২৬ ও ৩৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য পক্ষগুলো যদি চুক্তির শর্ত মানতে ব্যর্থ হয় বা পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তবে ইরান পুরোপুরি বা চুক্তির কিছু প্রতিশ্রুতি স্থগিত করতে পারে। জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব এ্যাকশন (জেসিপিওএ) শীর্ষক ওই চুক্তি থেকে গত বছরের মে মাসে বেরিয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র। এরপর একতরফা ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার শর্তে ইরান পারমাণবিক কার্যক্রম সীমিত করতে সম্মত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় ইরানের অর্থনীতি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেন, চুক্তির দুটি অংশ স্থগিত করছে ইরান। এগুলো হলো সমৃদ্ধকরণ অতিরিক্ত ইউরেনিয়াম ও ভারি পানি বিক্রি। তিনি চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাজ্যকে ৬০ দিনের সময় দেন। এ সময়ের মধ্যে তাদের চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ইরানের আর্থিক ও তেল বিষয়ে প্রতিশ্রুতি অথবা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা যে কোন একটিকে বেছে নিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, যদি ওইসব প্রতিশ্রুতি পূরণ করা না হয়, তবে ইরান বর্তমানে বন্ধ থাকা উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়া শুরু এবং আরাকের ভারি পানি রিএ্যাক্টর প্রকল্পের কাজ শুরু করবে। তবে ইরানের প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেছেন, ইরান চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছে না। রুহানি বলেন, ‘আমরা চুক্তি থেকে বের হয়ে যেতে চাই না। বিশ্বের সবার জানা উচিত যে, জেসিপিওএ’র (চুক্তি) কার্যকারিতা আজই শেষ হচ্ছে না। জেসিপিওএ’র কাঠামোর মধ্যে থেকেই নতুন পদক্ষেপ এটি। তিনি আরও বলেন, ইরানের পারমাণবিক চুক্তির বিষয়টি যদি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে তোলা হয়, তবে বৃহৎ পাঁচটি শক্তি ‘খুবই কঠিন প্রতিক্রিয়ার’ মুখোমুখি হবে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্য দেশ ও জার্মানির (পিফাইভ+ওয়ান) সঙ্গে ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তিতে সম্মত হয় ইরান। গত বছর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তি থেকে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন, তখন অস্থিরতার সৃষ্টি হয়।
×