ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জিতলেই ফাইনাল প্রায় নিশ্চিত মাশরাফিদের

আজ আইরিশ বধে প্রস্তুত বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:০২, ৯ মে ২০১৯

 আজ আইরিশ বধে প্রস্তুত বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ আয়ারল্যান্ডের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার আগে ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছিলেন, ‘প্রত্যেকটা ম্যাচ জয় করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। টাইগাররা পাত্তাই দেয়নি ক্যারিবিয়ানদের। এবার আজ বাংলাদেশের সামনে স্বাগতিক আয়ারল্যান্ড আছে। ডাবলিনের ম্যালাহাইডের দ্য ভিলেজ মাঠে বাংলাদেশ সময় বেলা পৌনে চারটায় ম্যাচটি শুরু হবে। এই ম্যাচটিতে জিতলে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ওঠার পথ উজ্জ্বল করে রাখবে বাংলাদেশ। ত্রিদেশীয় সিরিজে খেলতে নামার আগে প্রস্তুতি ম্যাচে আয়ারল্যান্ড উলভসের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। তখন সতর্কবার্তা মিলেছিল। বাংলাদেশ এমনই সতর্ক হয়েছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দিয়েছে। ৩০ বল বাকি থাকতে ৮ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। সিরিজে শুভ সূচনা করেছে মাশরাফিবাহিনী। এখন সামনে ফাইনালে কিভাবে খেলা নিশ্চিত করা যায় তা নিয়ে ভাবছেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেভাবে আয়ারল্যান্ডকে পাত্তা দেয়নি, সেই হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোয় বাংলাদেশের সামনে আয়ারল্যান্ড খুব শক্তিশালী দল হওয়ার কথা নয়। আয়ারল্যান্ডকে বাংলাদেশেরও পাত্তা না দেয়ারই কথা। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে যেভাবে হারিয়েছে বাংলাদেশ তাতে এই সিরিজে যে বাংলাদেশই সবচেয়ে শক্তিশালী দল তা বোঝাই গেছে। তামিম ইকবাল-সৌম্য সরকার মিলেতো শত রানের জুটি গড়ে ফেলেন। এই জুটি যে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি হতে চলেছে তা ধারণা করা যেতেই পারে। তামিম, সৌম্যের পর সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম মিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অসাধারণভাবে খেলে ম্যাচ শেষ করে এসেছেন। বোঝাই যাচ্ছে, বাংলাদেশের ব্যাটিং গভীরতা কতটা আছে। বল হাতে আগে মাশরাফি বিন মর্তুজা, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ মিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ডুবিয়ে দিয়েছেন। মুস্তাফিজুর রহমানও ২ উইকেট নিয়েছেন। তবে ১০ ওভারে রান দিয়েছেন ৮৪। যা অনেক বেশি হয়ে গেছে। তাতে বোঝা গেছে মুস্তাফিজ নিজেকে মেলে ধরতে হয়তো সময় নেবেন। কন্ডিশন নিয়েও ছিল চিন্তা। কিন্তু কন্ডিশনকে জয় করে পেশাদারিত্ব দেখিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা ঠিকই নিজেদের মেলে ধরেছেন। তাতে করে প্রথম ম্যাচে যেভাবে উড়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তাদের মাটিতে নামিয়েছে বাংলাদেশ। এখন ফাইনালে যাওয়ার পালা। এ জন্য আরও ভাল নৈপুণ্য দেখাতে হবে বলেই মনে করছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি। তিনি বলেছেন, ‘ফাইনালে যেতে হলে আমাদের আরও ভাল এবং শক্তভাবে ক্রিকেট খেলতে হবে। তাই সামনের ম্যাচগুলোর দিকেই আপাতত তাকিয়ে আছি।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘যে কোন টুর্নামেন্টের শুরুটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রস্তুতি ম্যাচে হারের পর ছেলেরা শুরুটা (ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে) অনেক ভাল করেছে। এতে পরের ম্যাচের জন্য ভাল অবস্থানে থাকবে দল।’ মাশরাফি প্রস্তুতি ম্যাচে হারের পর এমন শুরুই চেয়েছিলেন। বলেছেন, ‘প্রস্তুতি ম্যাচে হারের পর এমন একটা শুরুর দরকার ছিল। ভাল শুরু সব সময় গুরুত্বপূর্ণ। রান করার জন্য এটা খুবই ভাল উইকেট ছিল। সেক্ষেত্রে বোলারদের কৃতিত্ব দিতে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রত্যাশা মতো রানে আটকে রাখার জন্য। তামিম, সাকিব, সৌম্যরা খুব ভাল ব্যাট করেছে। আমি মনে করি, ফাইনালের দরজা সবার জন্যই খোলা। তারজন্য আমরা কঠোর পরিশ্রম করব।’ দুর্দান্ত বোলিং হওয়ার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৬১ রানে আটকে রাখার পর তামিম-সৌম্যের ১৪৪ রানের জুটিই আসলে বাংলাদেশকে জয়ের কাছে নিয়ে যায়। সৌম্য এ নিয়ে জানান, ‘একটা সময় মনে হচ্ছিল তিন শ’ রান তাড়া করতে হবে। পরে খেলাটা ধরতে পারি আমরা। ২৬০ রানে আটকে রাখি। এরপর টার্গেট ছিল স্বাভাবিকভাবে ব্যাটিং করা। উইকেট খুব সহজ ছিল না ব্যাটিংয়ের জন্য। শট অতটা খেলা যাচ্ছিল না। পেছনের বলগুলো খেলা যাচ্ছিল, সামনের বলগুলো অতটা নয়। পরিকল্পনা ছিল যে জুটি গড়তে হবে, তাহলে খেলা আমাদের হাতে আসবে। সেটিই হয়েছে।’ নিজের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাওয়া নিয়ে সৌম্য বলেন, ‘অবশ্যই জয় তো সবসময় সবাইকে আত্মবিশ্বাসী করে। আমরা সবাই এখন আত্মবিশ্বাসী। আর কন্ডিশন তো আমরা পরিবর্তন করতে পারব না। এটা নিয়ে চিন্তা না করে সবাই সবার সেরাটা দিয়ে যতটুকু এগিয়ে নেয়া যায়।’ প্রথম ম্যাচেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বোঝা হয়ে গেছে সিরিজে বাংলাদেশকে নিয়ে যে আশা দেখা হচ্ছে, ক্রিকেটাররা সেই আশা পূরণ করবেন। তবে কন্ডিশন নিয়ে অনেক ভয়ও ছিল। কনকনে শীত। ঠিকমতো খেলাই যায়নি। কিন্তু ব্যাটিং পরামর্শক নেইল ম্যাকেঞ্জি যে ভরসা রেখেছিলেন, তার প্রতিদান দিয়েছেন ক্রিকেটাররা। ম্যাকেঞ্জি বলেছিলেন, ‘দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা জানে কিভাবে ভিন্ন কন্ডিশনে খেলতে হয়। আমি মনে করি না এটা ঠান্ডার ব্যাপার। বিষয়টা উইকেটের। উইকেট, মাঠের আকৃতির সঙ্গে সবকিছুই বদলাতে হয়। প্রতিপক্ষের বোলারদের সঙ্গেও নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়।’ মাশরাফিও বলেছিলেন, ‘ঠান্ডার সঙ্গে যুদ্ধ... আমার মনে হয় না এই ঠান্ডায় আমরা মানিয়ে নিতে পারব। এখানে যারা থাকেন, তারা লড়াই করে ঠান্ডার সঙ্গে। আমাদের মানিয়ে নেয়ার সুযোগ নেই। মানসিকভাবে শক্ত হতে হবে। আর খেলতে নামলে দিনশেষে ঠান্ডা কতটা, এসব আসলে শেষ অজুহাত ছাড়া কিছুই হবে না। এই বাস্তবতা মেনেই খেলতে হবে।’ মানসিকভাবে শক্ত থেকেই ক্রিকেটাররা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দিয়েছেন। এবার আজ আয়ারল্যান্ডকে উড়িয়ে দেয়ার দিন। তা করতে পারলেই সিরিজের ফাইনালে ওঠা উজ্জ্বল করে রাখবে বাংলাদেশ।
×