ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেই মাদ্রাসা শিক্ষক আফজাল হোসাইন এখনও বহাল

প্রকাশিত: ০৯:৫৪, ৯ মে ২০১৯

 সেই মাদ্রাসা শিক্ষক আফজাল হোসাইন এখনও বহাল

গাফফার খান চৌধুরী ॥ বেআইনীভাবে নিয়োগ পাওয়া জামায়াত নেতা বহুল আলোচিত সেই মাদ্রাসা শিক্ষক আফজাল হোসাইন এখনও বহাল। বাইশ বছরেরও বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে চাকরি করে সরকারের লাখ লাখ টাকা বেআইনীভাবে তুলে নিয়েছেন। রাজধানী ঢাকার মিরপুরের হজরত শাহ আলী বাগদাদী (রহ.) কামিল মাদ্রাসার এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে তদন্তও হয়েছে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে এই শিক্ষকের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের কোন তৎপরতা নেই। এমনকি ১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে তিনি এমপিওভুক্ত শিক্ষক হিসেবে অদ্যাবধি সরকারী টাকা পেয়ে যাচ্ছেন। প্রাপ্ত নথিপত্র মোতাবেক জানা গেছে, ১৯৯৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় হজরত শাহ আলী বাগদাদী (রহ) ফাযিল মাদ্রাসায় সরকারী বিধি মোতাবেক একজন উপাধ্যক্ষসহ শিক্ষক নিয়োগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। সরকারী বিধি মোতাবেক উপাধ্যক্ষ হিসেবে কাউকে নিয়োগ পেতে হলে তার আরবী বিষয়সমূহে অধ্যক্ষ অথবা সহকারী অধ্যাপক অথবা প্রভাষক হিসেবে কমপক্ষে ৬ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আফজাল হোসাইন নামের একজন উপাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান। এই শিক্ষকের দাখিল করা কাগজপত্রে দেখা যায়, তিনি ১৯৯৫ সালে যাত্রাবাড়ীর তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসা থেকে কামিল, ১৯৯৩ সালে ফাজিল আর ১৯৯১ সালে আলিম পাস করেন। আর ১৯৮৯ সালে ছারছীনা দারুস সুন্নাত আলিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেন। তার চাকরিতে আবেদন করার জন্য যে ন্যূনতম ৬ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন, তা নেই। আফজাল হোসেনের পিতার নাম মুহাম্মদ আজিজুল ইসলাম। বাড়ি রাজশাহী জেলার বাঘা থানাধীন বেংগাড়ির আশরাফপুর গ্রামে। আফজাল হোসাইনের নিয়োগকালে মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ ছিলেন মোঃ বজলুর রহমান। আফজাল হোসাইনের চাকরি পাওয়া এবং তার নিয়োগ নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা চলে আসছে। দীর্ঘদিনেও সেই সমস্যার সমাধান হয়নি। তারই প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর মাদ্রাসাটির অডিট করে। অডিট রিপোর্টে বলা হয়, প্রায় দেড় লাখ টাকা নয়ছয় হয়েছে। ওইসব টাকা সরকারী কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। এছাড়া অডিট রিপোর্টে আফজাল হোসাইনের নিয়োগ নিয়ে আপত্তি তোলা হয়। তাতে বলা হয়, আফজাল হোসাইন ১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি যোগদান করেন। উপাধ্যক্ষ হিসেবে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলেও ফাজিল মাদ্রাসার প্রভাষক হওয়ার বা অধ্যক্ষ হওয়ার অভিজ্ঞতা নেই। তাকে কিভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তা বোধগম্য নয়। প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ছাড়াই তাকে নিয়োগ করার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। এমন অবস্থার মধ্যেই ২০০২ সালের ২২ এপ্রিল অনেকটা জোর করেই মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেন আফজাল হোসাইন। দায়িত্ব নিয়েই বজলুর রহমানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেন। এ নিয়ে নানা ঝামেলার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য ঢাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ডাকা হয় সবাইকে। ওই সময় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনেই আফজাল হোসাইন ও তার লোকজন বজলুর রহমানকে মারধর করে। তখন জেলা প্রশাসকের অফিসের লোকজন বজলুর রহমানকে রক্ষা করে। এমন ঘটনার পর অভিমানে বজলুর রহমান মাদ্রাসায় আসা বন্ধ করে দেন। শেষ পর্যন্ত পেনশন ও অন্যান্য টাকা না পেয়েই মারা যান বজলুর রহমান। পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বপালনকালে অর্থ আত্মসাত করায় আফজাল হোসাইন স্বেচ্ছায় ভারপ্র্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। জানা যায়, এই শিক্ষক যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফঁাঁসি হওয়া জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর এক সময় ক্যাশিয়ার ছিলেন। এক সময় মিরপুরের গোড়ান চটবাড়ি এলাকায় তুরাগ নদের পাড়ে গড়ে তোলা তামান্না পার্কের মালিক জামায়াত নেতা ঝিনাইদহের আব্দুল্লাহ আল মামুনের ঘনিষ্ঠ সহযোগীও ছিলেন এই শিক্ষক। মাদ্রাসায় লাঠিসোটা দিয়ে জঙ্গী প্রশিক্ষণ দেয়ার সময় গ্রেফতার হয়েছিলেন এই শিক্ষক। পরে এক মহিলা সংসদ সদস্যের তদবিরে ছাড়া পান। ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর যুদ্ধাপরাধ মামলায় জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়। ওইদিন হজরত শাহ আলী বাগদাদী (রহ.) কামিল মাদ্রাসা থেকে আনন্দ মিছিল বের হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আফজাল হোসাইন, স্থানীয় জামায়াত, শিবির নেতাকর্মীদের নিয়ে মিছিলকারীদের ওপর হামলা করেছিলেন।
×