ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সুবীর নন্দীর প্রতি জাতির শ্রদ্ধা

প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ৯ মে ২০১৯

  কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সুবীর  নন্দীর প্রতি জাতির শ্রদ্ধা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতিকে কাঁদিয়ে চিরবিদায় নিলেন নন্দিত সঙ্গীতশিল্পী সুবীর নন্দী। রাজধানীর সবুজবাগে বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির শ্মশানে বুধবার বিকেলে একুশে পদকপ্রাপ্ত এ শিল্পীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোর সাড়ে চারটায় মৃত্যুবরণ করেন বর্ষীয়ান এ সঙ্গীতশিল্পী। তার মরদেহ সিঙ্গাপুর থেকে বুধবার সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার গ্রীন রোডের বাসায়। সেখান থেকে নেয়া হয় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। সেখানে সার্বজনীন পূজা উদ্যাপন কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে তাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তার মরদেহ রাখা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। প্রিয় শিল্পীকে শেষবারের মতো এক নজর দেখার জন্য আগে থেকেই শহীদ মিনার চত্বরে অগণিত মানুষের ভিড় জমে। কফিনের ঢাকনা খুলতেই দেখা যায় সেই চিরচেনা মুখ। যেখানে লেগে থাকত সদা হাসি। নিথর সেই শরীরের উপরে রয়েছে গাঁদা ফুল। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় এ শিল্পীকে। এরমধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগ, শিল্পকলা একাডেমি, ছায়ানট, শিশু একাডেমি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বেতার, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, খেলাঘর হবিগঞ্জ কেন্দ্রীয় কমিটি ও বাংলাদেশ মিউজিশিয়ান ফাউন্ডেশনসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। গুণী এই শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাতে ফুল হাতে হাজির হন তার ভক্ত-অনুরাগীসহ সতীর্থরা। শ্রদ্ধা জানাতে আসেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.এ কে আব্দুল মোমেন, হাসানুল হক ইনু এমপি, আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাতীয় বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জাতীয় সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য কবি মুহাম্মদ সামাদ, ডাঃ অরূপ রতন চৌধুরী, চিত্রনায়ক উজ্জ্বল ও চিত্রনায়িকা নূতন, গীতিকার রফিকুজ্জামান, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, শহীদুল্লাহ ফরায়েজী, কবির বকুল, সঙ্গীতশিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, খুরশীদ আলম, তিমির নন্দী, রফিকুল আলম, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, খায়রুল আনাম শাকিল, ফকির আলমগীর, তপন মাহমুদ, জাতীয় শিল্পী রেখা রানী গুণ, কুমার বিশ্বজিৎ, এন্ড্রু কিশোর, রবি চৌধুরী, শুভ্র দেব, নকিব খান, ফোয়াদ নাসের বাবু, বাদশা বুলবুল, এস ডি রুবেল, ক্লোজআপ ওয়ান তারকা নিশিতা বড়ুয়া, কিশোর, মুহিন, সাব্বির, কিশোর, রাশেদ প্রমুখ। শ্রদ্ধা জানাতে এসে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, শিল্পী সুবীর নন্দীর চলে যাওয়া মানে সঙ্গীতাঙ্গনের একটি নক্ষত্রের পতন। তার শূন্যস্থান পূরণ হবার নয়। সঙ্গীতশিল্পী রফিকুল আলম বলেন, সুবীর নন্দী সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। এত বড় মাপের শিল্পী চলে যাওয়ায় আমাদের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে শূন্যতার সৃষ্টি হলো। এ শূন্যতা পূরণ হবার নয়। তার গায়কী, পরিমিতি বোধ এত বেশি ছিল যা কারো সঙ্গে তুলনা করা যায় না। তার তুলনা তিনি নিজেই। আমি তার সুর করা তিনটি গান করেছি। অসাধারণ মানের এ সঙ্গীত শিল্পীর চলে যাওয়ায় দারুণ ক্ষতি হয়ে গেল আমাদের। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, সুবীর নন্দীর মতো এত মহত প্রাণের মৃত্যুতে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক বিশেষ শূন্যতার সৃষ্টি হলো। এ শূন্যতা পূরণ হবার নয়। সঙ্গীতশিল্পী ফকির আলমগীর বলেন, সোনার মানুষ বলতে যা বোঝায় সুবীর নন্দী ছিল তাই। তার গানেরতো তুলনা নাই। অসাধারণ কণ্ঠ দিয়ে জয় করে নিয়েছে সঙ্গীতপ্রেমী মানুষের হৃদয়। তার বিয়োগ ব্যথায় কাঁদছে গোটা বাঙালী জাতি। রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী তপন মাহমুদ বলেন, আধুনিক গানের সর্বশেষ পিলারটি আমরা হারালাম। এই মাপের শিল্পী আর আসবে না। সঙ্গীতশিল্পী শুভ্রদেব বলেন, সুবীর নন্দীকে আমি মামা বলে ডাকতাম। তাকে আমার খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। তিনি শুধুমাত্র একজন সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন না, একজন ভাল মনের মানুষও ছিলেন। খুব সাধারণ জীবন-যাপন করতেন। দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি তার অগাধ ভালবাসা ছিল। সঙ্গীত শিল্পী খুরশীদ আলম বলেন, সুবীর নন্দীর মতো সঙ্গীতশিল্পী আমাদের দেশে একশ বছরেও আসবে না। শ্রদ্ধা জানাতে এসে সংস্কৃতিজন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, যখন আধুনিকতার নামে সঙ্গীতাঙ্গনে যাচ্ছে তাই অবস্থা চলে, সুবীর তখন তীক্ষè হয়ে কাজ শুরু করেছেন। এ জন্য জাতি তাকে চিরদিন স্মরণ করবে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, সুবীর নন্দীর মতো শিল্পী আর আসবে না। তিনি আমাদের যে গান উপহার দিয়ে গেছেন, তার মধ্যেই বেঁচে থাকবেন। আমার অনুরোধ তার গান যেন পরবর্তীতে কোন রকম বিকৃত না হয়। সুবীর নন্দীর আরেক সহকর্মী সঙ্গীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, সুবীর নন্দীর মতো শিল্পী মহাজনেরা আমাদের দেশ থেকে চির বিদায় নিচ্ছেন, এটা আমাদের জন্য বড় রকমের ক্ষতি। আমরা অবিভাবক শূন্য হয়ে পড়ছি। রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, সত্যিকার শিল্পী বলতে যা বোঝায়, সুবীর দা ছিলেন তাই। সুরের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতেন। এরকম শিল্পী খুব কম আছে। তার শূন্যতা পূরণ হবার নয়। সঙ্গীতশিল্পী এসডি রুবেল বলেন, সংস্কৃতিতে সুবীর দার অবদান অন্যতম। তার কালজয়ী গানের সংখ্যা অনেক। তিনি বেশ কিছু গান পরবর্তীতে করেছেন যেগুলো আজও রিলিজ হয়নি। কিভাবে এ গানগুলো রিলিজ করা যায় সে বিষয়ে সবার এগিয়ে আসা উচিত। গীতিকার রফিকুজ্জামান বলেন, তিনি নিজেই সুবীর নন্দী হয়ে উঠেছেন। তার তুলনা একমাত্র তিনি নিজেই। শ্রদ্ধা জানাতে এসে জাতীয় বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জাতীয় সমন্বয়ক ডাঃ সামন্ত লাল সেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা সব রকমের চেষ্টা করেছি। শত চেষ্টায়ও শিল্পী সুবীর নন্দীকে বাঁচাতে পারলাম না। সুবীর নন্দীর একমাত্র কন্যা ফাল্গুনী নন্দী মৌ বাবার কফিনের ওপর কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, আমার বাবাকে সব রকমের সাহায্য করার জন্য সিএমএস ও মেডিক্যাল বোর্ডের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তারা সবাই আমার বাবার পাশে ছিলেন কিন্তু আমরা শেষ পর্যন্ত তাকে আর ফিরিয়ে আনতে পারিনি। লাগারতার ২৪ দিন সে বাঁচার জন্য লড়াই করেছে কিন্তু একটা সময় সে আর পারেনি। সবাই আমার বাবার জন্য প্রার্থনা করবেন। আমার বিশ্বাস বাংলাদেশ তাকে সব সময় মনে রাখবে। বাবার সৃষ্টিকর্ম নিয়ে আমরা পারিবারিকভাবে একটা আরকাইভ করব। আর তার কিছু অসমাপ্ত কাজ রয়েছে সেগুলোকে সমাপ্ত করার চেষ্টা করব। শ্রদ্ধা জানাতে এসে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা বলেন, সুবীর নন্দী একটি প্রতিষ্ঠানের নাম। তাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের আধুনিক গানের ইতিহাস লেখা যাবে না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নতুন বাংলাদেশের স্বতন্ত্র সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিচয় গড়ে তুলতে যে শিল্পীরা অবদান রেখেছেন, তাদের মধ্যে কণ্ঠের জাদুকর সুবীর নন্দী অগ্রগণ্য। তিনি শুধু একজন ভাল শিল্পীই ছিলেন না, ছিলেন একজন ভাল মানুষ। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আরেকটি নক্ষত্রের পতন হলো। তার গান আগামীর প্রজন্মকে ধারাবাহিকভাবে অনুপ্রাণিত করে যাবে। শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সুবীর নন্দীর মরদেহ নেয়া হয় এফডিসিতে। নন্দিত শিল্পীকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানান চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম খোকন, বাংলাদেশ শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, অভিনেতা আলমগীর, ওমর সানি, জয় চৌধুরী, অরুণা বিশ্বাস, ড্যানি সিডাক, পরিচালক শাহ আলম কিরণ, পরিচালক গাজী মাহাবুব, এফডিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা হিমাদ্রি বড়ুয়াসহ আরও অনেকেই। এফডিসিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর তার মরদেহ নেয়া হয় চ্যানেল আইতে। পরে নেয়া হয় ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে। বেশিরভাগ সময়ে তিনি রামকৃষ্ণ মিশনে সময় কাটাতেন এবং সেখানকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান করতেন। এরপর বিকেলে সবুজবাগে কালীমন্দির ও শ্মশানে সঙ্গীতশিল্পী সুবীর নন্দীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়, পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই, পাহাড়ের কান্না দেখে, দিন যায় কথা থাকে, বন্ধু হতে চেয়ে তোমার শত্রু বলে গণ্য হলাম, কত যে তোমাকে বেসেছি ভাল, আমি বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছিসহ অসংখ্য কালজয়ী গানে শ্রতার হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন নন্দিত সঙ্গীত শিল্পী সুবীর নন্দী। কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পীর এমন অনেক কালজয়ী সঙ্গীতের সুরে এদিন ভিজেছে শ্রোতার দুই নয়ন। সেসব ভক্তের শোকার্ত হৃদয় মনের অজান্তে বলে উঠেছে- ও আমার উড়াল পঙ্খীরে যা যা তুই উড়াল দিয়া যা ...। আধুনিক বাংলা গানের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দীর প্রয়াণ সংবাদে এমন করেই কেঁদেছে অগণন ভক্তের অন্তর। বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার ভোর সাড়ে চারটায় সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। সবাইকে শোকে ভাসিয়ে রেখে গেছেন স্ত্রী পূরবী নন্দী, মেয়ে ফাল্গুনী নন্দীসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, প্রিয়জন, বন্ধুবান্ধব, লাখো লাখো ভক্ত, সুহৃদ ও শুভাকাক্সক্ষী। সুবীর নন্দী গত ১২ এপ্রিল পরিবারের সবাইকে নিয়ে মৌলভীবাজারে আত্মীয়ের বাড়িতে যান। সেখানে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ১৪ এপ্রিল ঢাকায় ফেরার ট্রেনে ওঠার জন্য বিকেলে মৌলভীবাজার থেকে পরিবারসহ শ্রীমঙ্গলে আসেন। পরে তিনি ট্রেনে অসুস্থ হয়ে পড়লে একজন চিকিৎসকের পরামর্শে সুবীর নন্দীকে নিয়ে পরিবারের সদস্যরা ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশনে নেমে যান। ওই দিনই রাত ১১টার দিকে তাকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। সিএমএইচে থাকাকালীন সময়ে তার চিকিৎসার খবরাখবর নিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশেই পরে গত ৩০ এপ্রিল (মঙ্গলবার) তাকে এয়ার এ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেখানেই তার চিকিৎসা চলছিল। একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী দীর্ঘ ৪০ বছরের সঙ্গীত জীবনে গেয়েছেন আড়াই হাজারের বেশি গান। পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। সঙ্গীতশিল্পী পরিচয়ের পাশাপাশি বেশ কিছু গানের গীতিকার ও সুরকার তিনি। ১৯৫৩ সালের ১৯ নবেম্বর সুবীর নন্দী জন্মগ্রহণ করেন হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানায় নন্দীপাড়ার এক কায়স্থ সম্ভ্রান্ত পরিবারে। শিল্পীর বাবা সুধাংশু নন্দী তখনকার একজন মেডিক্যাল অফিসার ছিলেন। তার মা পুতুল রানী খুবই চমৎকার গান করতেন। বাবার চাকরিসূত্রে তার শৈশব কেটেছে চা বাগানেই। পাঁচ-ছয় বছর বয়স পর্যন্ত বাগানেই ছিলেন। সেখানের একটি স্কুলেই প্রথম হাতেখড়ি। তার গানের ওস্তাদ ছিলেন গুরু বাবর আলী খান। লোকগানে ছিলেন বিদিত লাল দাশ। ১৯৬৩ সালে তৃতীয় শ্রেণী থেকেই গান গাওয়া শুরু করেন সুবীর নন্দী। এরপর ১৯৬৭ সালে তিনি সিলেট বেতারে গান করেন। তার গানের ওস্তাদ ছিলেন গুরু বাবর আলী খান। লোকগানে ছিলেন বিদিত লাল দাশ। ভাই তপন কুমার নন্দীর কাছ থেকেও সুবীর নন্দী গানের তালিম নিয়েছেন। সুবীর নন্দীর স্কুল ও কলেজ জীবন দুটোই হবিগঞ্জে। সিলেট বেতারে তিনি প্রথম গান করেন ১৯৬৭ সালে। এরপর ঢাকা রেডিওতে সুযোগ পান ১৯৭০ সালে। সেই সময় তিনি নজরুলগীতি গেয়ে রেডিওর অডিশনে পাস করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা পরিবারসহ আগরতলায় চলে যান। সুবীর নন্দীর প্রথম রেকর্ড করা গান ‘যদি কেউ ধূপ জ্বেলে দেয়’। গানটি লিখেছেন মোহাম্মদ মুজাক্কের। সুর করেন ওস্তাদ মীর কাসেম। এটি রেকর্ড করা হয় ১৯৭২ সালে। একই বছরে তিনি জনতা ব্যাংকে চাকরি নেন। ১০ সালে অবসর নেয়ার আগ পর্যন্ত জনতা ব্যাংকেই কর্মরত ছিলেন। চলচ্চিত্রে প্রথম প্লেব্যাক করেন ১৯৭৪ সালে আব্দুস সামাদ পরিচালিত ‘সূর্যগ্রহণ’ চলচ্চিত্রে। ১৯৮১ সালে পূরবী নন্দীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন সুবীর নন্দী। তাদের একমাত্র সন্তান ফাল্পুনী নন্দী। একই বছর তার একক এ্যালবাম ‘সুবীর নন্দীর গান’ ডিসকো রেকর্ডিংয়ের ব্যানারে বাজারে আসে। এখন পর্যন্ত ২৮ একক এ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে সুবীর নন্দীর। ২০০২ সালে তপন চৌধুরীর গাওয়া একটি নাটকের গানে প্রথম সুর দেন সুবীর নন্দী। পরবর্তীতে শাকিলা জাফরের (বর্তমানের শাকিলা শর্মা) একটি এ্যালবামে অনেকগুলো গানের সুর করেন তিনি। ২০০৪ সালে প্রথম গান লেখেন। তারপর লিখেছেন আরও অনেক গান যা সুবীর নন্দীর গাওয়া অসংখ্য শ্রোতানন্দিত গানের মধ্যে রয়েছে।
×