ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুব সমাজকে মানবতার সেবায় আত্মনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করতে হবে

প্রকাশিত: ০৯:৪৬, ৯ মে ২০১৯

 যুব সমাজকে মানবতার সেবায় আত্মনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত করতে আমাদের যুব সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে যুবসমাজকে আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত করা গেলে আমাদের সামাজিক অপরাধসমূহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। সামাজিক বন্ধনও সুদৃঢ় হবে। কারণ, মানবতার কল্যাণে নিবেদিত ব্যক্তিরা সামাজিক অপরাধ করতে পারে না। বুধবার রাজধানীর হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ মিলনায়তনে বিশ্ব রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস-২০১৯ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, হেনরি ডুনান্ট যুদ্ধক্ষেত্রে আহতদের সেবা ও নিহতদের সৎকার করার উদ্দেশে রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট প্রতিষ্ঠা করলেও এর সেবা ও কর্মপরিধি বর্তমানে ব্যাপক এবং বিস্তৃত। রেড ক্রিসেন্ট এখন একটি ভরসার জায়গা। দুর্যোগে জনগণের বন্ধু এখন রেড ক্রিসেন্ট। তাই হেনরি ডুনান্ট পৃথিবীতে একজন সফল ও স্বার্থক সমাজসেবক। তার মানবিকতা ও বিশাল ত্যাগই তাকে ইতিহাসের পাতায় মহামানবের স্থান করে দিয়েছে। আসলে আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মধ্যেই রয়েছে জীবনের স্বার্থকতা। জীবনের উদ্দেশ্য শুধু নিজেকে সুখী করা নয় বরং উদ্দেশ্য হওয়া উচিত অন্যকে সুখী করা। পৃথিবীতে দান করে কিংবা মানবসেবা করে কেউ কখনও গরিব হয়নি, বরং গরিব মানসিকতার মানুষরাই কখনও কারো জন্য কিছু করতে পারেনি। পৃথিবীতে সেই মানুষগুলোই সবচেয়ে সুখের কাছাকাছি যেতে পেরেছে, যারা নিজেদের আর্তমানবতার সেবায় বিলিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। নিজের জন্য নয় সমাজ ও মানুষের সেবা করার মাঝেই রয়েছে সবচেয়ে বড় আনন্দ। বলেন, মানবসেবাই বড় ধর্ম; তাই আসুন মানবের কল্যাণে, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই। সকলের পদযাত্রা হোক মানবতার কল্যাণে, সত্য, সুন্দর ও মানবতার জয়গানে। আইনমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে যুগে যুগে অনেক জ্ঞানীগুণী সমাজসেবক ও মহৎপ্রাণ মানুষ জন্মগ্রহণ করেছেন। রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্টের প্রতিষ্ঠাতা হেনরি ডুনান্ট সেই সব শ্রেষ্ঠ মানুষের একজন। যার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এখন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ অসহায় ও বিপন্ন মানবতার সেবায় নিয়োজিত। যিনি জাতিধর্ম নির্বিশেষে পৃথিবীর সকল মানুষকে এক পতাকাতলে একই কর্মসূচীতে শামিল করেছিলেন। সাম্য-মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ করেছিলেন মানবসন্তানদের। বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস বিশ্বব্যাপী সকল মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষের জন্য বিশেষ দিন আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, কোটি কোটি স্বেচ্ছাসেবী, সদস্য ও কর্মী যারা প্রতিটি দিন মানবতার সেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন তাদের জন্য এ দিনটি একটি স্বীকৃতি। ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিকভাবে বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। এদেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগের ফলে প্রতিনিয়ত ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। তাই দুর্যোগ মোকাবেলায় বর্তমান সরকার সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছে। সরকারের সহযোগী সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি দেশের সামগ্রিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। মন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ প্রস্তুতি ও ঝুঁকিহ্রাসের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী (সিপিপি)’ বাংলাদেশ সরকার ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে ১৯৭৩ সাল থেকে পরিচালিত একটি যুগান্তকারী কার্যক্রম, যা সমাজভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে দুর্যোগ প্রস্তুত ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সমগ্র বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সিপিপি বর্তমানে অর্ধ লক্ষাধিক নিবেদিত স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে জনগণের জান-মালের সুরক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় এলাকায় যেখানে ১৯৭০ সালে প্রায় সাড়ে তিন লাখ এবং ১৯৯১ সালে প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল, সেখানে ২০১৭ সালের ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ এর আঘাতে মৃতের সংখ্যা মাত্র ৬ জনে নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকদের অবদান অনস্বীকার্য। বিগত ৪ মে বাংলাদেশে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র কারণে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে রেড ক্রিসেন্ট ও সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকদের নিরলস পরিশ্রম প্রশংসনীয়। শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগেই নয়, বিভিন্ন ধরনের মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায়ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি দীর্ঘ সময় ধরে মানবিক সহায়তা প্রদান করে আসছে। দুই দফায় মিয়ানমার থেকে আগত শরণার্থীর সহায়তা প্রদানেও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পাশে থেকে রেড ক্রিসেন্ট কাজ করেছে। ‘রানা প্লাজা’ ভবন ধ্বস থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের অগ্নিকা-, লঞ্চডুবিসহ রাজনৈতিক-সামাজিক সহিংসতায় আহতদের উদ্ধার, চিকিৎসা ও আর্থিক সাহায্য প্রদানে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির অবদান অনস্বীকার্য। জরুরী ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী সাড়া প্রদান ও জনগোষ্ঠীর সার্বিক উন্নয়নেও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিশে^ বাংলাদেশ এখন অনুকরণীয় এক দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে আরও প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনগত ভিত্তি প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২, জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০১৫, জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ২০১৬-২০২০ প্রণয়ন করেছে। এই আইনকে পরিপূর্ণ ও আন্তর্জাতিকমানের আইন হিসেবে তৈরি করার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় বিধিও প্রণয়ন করেছে। এর উদ্দেশ্য যেকোন দুর্যোগে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা, সকল স্তরের স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণ, সুশাসন আনয়ন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, বিনিয়োগের সুরক্ষা প্রদান এবং কার্যকর পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনে অবদান রাখা। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি আদেশ, ১৯৭৩ (১৯৭৩ সালের ২৬ নম্বর পিও) পরিমার্জিত করে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি আইন, ২০১৮ এর খসড়া প্রস্তুতির জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ বিষয়ে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক যখন আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং চ্ওায়া হবে তখন দ্রুত সমাধান করে দেয়া হবে। প্রয়োজনে বিভিন্ন আইনগত সহায়তা এবং পরামর্শও আমার মন্ত্রণালয় হতে প্রদান করা হবে। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান হাফিজ আহমদ মজুমদার এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সোসাইটির ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডাঃ হাবিবে মিল্লাত এমপি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ শাহ্ কামাল বক্তৃতা করেন।
×