ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকার এডিপি ॥ পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ৯ মে ২০১৯

 ২ লাখ ২ হাজার ৭২১  কোটি টাকার এডিপি ॥ পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নতুন অর্থবছরে পরিবহন খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর আকার দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা খরচের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সভার তথ্য অনুযায়ী, বরাদ্দের দিক থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেয়েছে পরিবহন খাত। বিদ্যুত, ভৌত অবকাঠামোর পরই সর্বোচ্চ বরাদ্দের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে শিক্ষা ও ধর্ম খাত। বুধবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত এনইসি সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সভাপতিত্বে এ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার সংশোধিত এডিপির অনুমোদন দেয়া হয়। একই সঙ্গে ৯ হাজার ৬২০ কোটি টাকা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার জন্য অনুমোদন দেয়া হয়। সভা শেষে মন্ত্রী জানান, আমরা নতুন এডিপির আকার গ্রহণ করেছি। বর্ধিত সভায় এডিপির এই আকার গ্রহণ করা হয়েছে। এটা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আগামী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আমাদের উন্নয়নের আকার বাড়ছে। এর সঙ্গে বাড়ছে এডিপির আকারও। আমরা এডিপি আকারের ইতিহাস সৃষ্টি করছি। যেসব প্রকল্প বার বার নতুন এডিপিতে যোগ করা হয় সেই রীতি আমরা ভেঙ্গে ফেলব। মন্ত্রী বলেন, মানুষের কথা মাথায় রেখে শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন কাজ করছেন। সেই কথা মাথায় রেখেই এডিপি সাজানো হচ্ছে। সড়ক, বিদ্যুত, পানিসম্পদের উন্নয়নে কাজ করছি। আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নে কাজ করছি। সকল বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েই নতুন এডিপি। এডিপির অগ্রগতির চিত্র তুলে এম এ মান্নান বলেন, বর্তমান এডিপির অগ্রগতি এপ্রিল পর্যন্ত ৫৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ, টাকায় যার পরিমাণ ৯৬ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। গত বছর এই সময়ে এডিপির অগ্রগতি ছিল ৫২ দশমিক ৪২ শতাংশ, টাকায় যার পরিমাণ ৮২ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা। এ সময় পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মোঃ নুরুল আমিন কোন্ খাতে কত বরাদ্দ সেই তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পদ্মা সেতু ও পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৫২ হাজার ৮০৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, যা মোট এডিপির ২৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। এছাড়া অগ্রাধিকার খাত বিবেচনায় বিদ্যুত খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ১৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা, যা মোট এডিপির ১২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ১২ শতাংশ। শিক্ষা ও ধর্ম খাতে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ, টাকায় যার পরিমাণ ২১ হাজার ৩৭৯ কোটি ১২ লাখ। এছাড়া, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণসহ তথ্য ও প্রযুক্তি প্রসারে বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে পঞ্চম সর্বোচ্চ বরাদ্দ ১৭ হাজার ৫৪১ কোটি ২৬ লাখ টাকা, যা মোট এডিপির ৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ। গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনা ও কর্মসংস্থান বাড়াতে পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে ১৫ হাজার ১৫৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা বা ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ বরাদ্দ ধরা হয়েছে। স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ১৩ হাজার ৫৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বা ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কৃষি খাতে ৭ হাজার ৬১৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বা ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ বরাদ্দ ধরা হয়েছে। নদী ভাঙ্গন রোধ ও নদীর ব্যবস্থাপনার জন্য পানিসম্পদ খাতে ৫ হাজার ৬৫২ কোটি ৯০ লাখ টাকা বা ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ বরাদ্দ ধরা হচ্ছে এবং মানবসম্পদ উন্নয়নসহ দক্ষতা বৃদ্ধিতে গতিশীলতা আনয়নের জন্য জনপ্রশাসন খাতে ৫ হাজার ২৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বা ২ দশমিক ৪৮ শতাংশ বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ হিসেবে স্থানীয় সরকার বিভাগ ২৯ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিদ্যুত বিভাগ ২৬ হাজার ১৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ২৫ হাজার ১৬৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এছাড়া, পর্যায়ক্রমে বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রথম ১০ নম্বরে থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হচ্ছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১৫ হাজার ৯০৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১২ হাজার ৫৯৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ৯ হাজার ৯৩৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৯ হাজার ২৭০ কোটি টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ ৮ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা, সেতু বিভাগ ৮ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ৬ হাজার ২৫৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা খসড়া বরাদ্দ ধরা হয়েছে। ব্রিফিংয়ে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শামিমা নার্গিসসহ কমিশনের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
×