ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গরমে হাঁসফাঁস, তৃষ্ণার্ত প্রাণিকুল, তীব্র রোদে আগুনের হল্কা

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ৯ মে ২০১৯

 গরমে হাঁসফাঁস, তৃষ্ণার্ত প্রাণিকুল, তীব্র রোদে আগুনের হল্কা

সমুদ্র হক ॥ অসহনীয় গরমে হাঁসফাঁস মানুষ। তৃষ্ণার্ত প্রাণিকুল। পাখিরা উড়ে উড়ে খুঁজছে পানির আধার। উড়ে পড়ছে কোন বাড়ির বারান্দা ও ব্যালকনিতে। খুঁজছে কেউ কোন পাত্রে পানি রেখেছে কিনা। আপনার রাখা সেই পানি পাখির জীবন বাঁচাতে পারে। এই সময়ের তীব্র রোদকে মনে হচ্ছে আগুনের হল্কা। শরীর ভিজে মনে হবে বৃষ্টিতে ভেজার মতো। দুপুরে পথঘাট প্রায় ফাঁকা। পথের ধারের ভাসমান দোকানিরা দুপুরে বসছে না। অসহনীয় গরম মানুষকে ঘরবন্দী করতে পেরেছে। যে অফিসে এয়ার কন্ডিশনার (তাপানুকূল যন্ত্র) আছে সেই অফিসের সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারীরা নির্ধারিত সময়ের পরও অফিসে থাকছেন। না-বাড়তি কাজের জন্য নয়। শীতল হাওয়ায় শরীর শীতল রাখতে যতটা পারা যায় বেশি সময় থাকা। যাদের ঘরে তাপানুকূল যন্ত্র আছে তাদের স্বস্তি। যাদের নেই তাদের অস্বস্তি, সঙ্গে ভোগান্তি। বৈদ্যুতিক পাখায় কুলানো যায় না। তার মধ্যে ভোল্টেজ কম, ঘোরে কম। লোডশেড হলে! বলার অপেক্ষা রাখে না। এবারের রমজানের শুরুতেই প্রচ- গরম পড়েছে! ফণীর ছোবলের পর লোকজন অবশ্য বুঝতে পেরেছিল সমুখেই দাবদাহ। তাই হয়েছে। সংবাদপত্রের পাতায় আবহাওয়া বিভাগের সূত্রে এমন আভাস ছিল। অবশ্য আরেকটি ঘূর্ণিঝড় ‘বায়ু’র আভাস আছে। তা এলে দিনদুয়েক শীতল পরশ পাওয়া যাবে। ঈদের আমেজ এখনই চলে এসেছে। পথ ঘাট তাই বলে। মধ্যবিত্ত এবং স্বল্প আয়ের মানুষ ও তাদের পরিবার ঈদের আগে বাজার পরখ করছে। কেউ এখনই কিনে নিচ্ছে। দাবদাহের সঙ্গে ঈদের আগুনে দামের বাজারে গায়ে ফোস্কা পড়ার আগেই যতটা পাড়া যায় সাশ্রয়। শোরুমের কর্তৃপক্ষ কৌশলী হয়ে ‘মূল্যে ছাড়’ দিয়েছে। দাম দেখে বোঝা যাবে না। যারা কেনাকাটায় অভ্যস্ত তারা বুঝতে পারে। তাদের বোকা বানানো যায় না। যারা বুঝতে পারে না বেশি দামে কেনার পর কর্তা গিন্নির অগ্নিশর্মা মুখ দেখতে হয়। উচ্চৈঃস্বরের কথাও শুনতে হয়। স্থানীয়ভাবে বলা ‘ঝারি খাওয়া’। গৃহকর্তার কোন কিছু কেনার পর কর্ত্রীর মুখোমুখি হলে সাধারণত যা হয়। এই গরমে সাধারণের মেজাজেও এখন উত্তাপ। এদিকে রমজান মাসের ‘ইফতার সংস্কৃতি’ শুরু হয়েছে। ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে ‘ইফতার পার্টি’ (ইফতার নেমন্তন্ন) পাচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ। ইফতার ও ফিরতি ইফতারের এই পালা চলবে ঈদের দু’তিন দিন আগে পর্যন্ত। শেষের দিকে একই দিনে একাধিক নেমন্তন্ন কর্তা ব্যক্তি ও সংগঠনের নেতৃস্থানীয়দের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে। কোনটা রেখে কোনটায় যাবে! এই অবস্থায় কেউ দেন প্রক্সি। সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভুরিভোজের এমন ইফতারে কত খরচ হয়, ব্যক্তি বা কোন প্রতিষ্ঠান স্পন্সর করে কিনা, করলে কিভাবে করে সে হিসাব কেউ রাখে না। রাখার প্রয়োজনও মনে করে না। এই সময়টার দাবদাহে মেজাজ মর্জি ঠিক রাখাও দায়। কথায় বলে, গরমে মাথা কি আর ঠিক থাকে। এই গরমে মাথা ঠিক রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দুপুরের পর রোজদার ব্যক্তিগণের শান্ত থাকাও কিছুটা কঠিন। তবে সন্ধ্যার পর মাথা শীতল ও খোশমেজাজ থাকে। এবারের গ্রীষ্মে দক্ষিণ এশিয়ায় দাবদাহ ৪৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস অতিক্রম করতে পারে। সূত্র : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট সোসাইটি প্রেডিকসন সেন্টার। পানির অভাবে অনেক পাখি মারা যাবে। উষ্ণায়নের এই বছরে বাংলাদেশ ও ভারতে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ তাপপ্রবাহ বইতে পারে। কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশের আবহাওয়া অনেকটাই মরু অঞ্চলের মতো। বগুড়া ও রাজশাহী অঞ্চলে ৩৬ থেকে ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। রংপুর ও দিনাজপুরে গেল দুই দিন ধরে বইছে তীব্র দাবদাহ। তার ওপর বৈশ্বিক উষ্ণতার আভাস আরও খানিকটা ভাবিয়ে তুলেছে। এদিকে এখনই টিউবওয়েলের পানি উত্তোলন স্বাভাবিক পর্যায়ে নেই। পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। শহর ও নগরীর বাসাবাড়িতে সাবমার্সিবল পাম্পে পানি উত্তোলন করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় সঙ্কটে পড়ছে দেশের প্রতিটি অঞ্চল। ভয়াবহ খরার কবলে পড়তে পারে উত্তরাঞ্চল। উত্তরাঞ্চলের বৈশিষ্ট হলো শীতের সময় যেমন শীত গ্রীষ্মে তেমনই গরম।
×