ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

না আছে কৃতিত্ব, না আছে আনন্দ!

প্রকাশিত: ১২:৪১, ৮ মে ২০১৯

না আছে কৃতিত্ব, না আছে আনন্দ!

যুদ্ধ করে জেতার আনন্দই আলাদা। তবে কিনা এই যুদ্ধে জেতার মধ্যে না আছে কৃতিত্ব, না আছে আনন্দ। বাংলার বাঘিনীদের এখন হয়েছে এমনই দশা। ‘বঙ্গমাতা অ-১৯ নারী আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ’ ফুটবলের প্রথম আসরে তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঠিকই। তবে এককভাবে নয়, যুগ্মভাবে। ট্রফি ভাগাভাগি করতে হয়েছে আসরের অপর ফাইনালিস্ট লাওসের সঙ্গে। ৩ মেতে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ওই ফাইনাল খেলাটি শুরুই হতে পারেনি! বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেও এবং ফুটবলামোদী দর্শকসহ সবাই ওই ফাইনাল খেলা উপভোগের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করলেও ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ‘ফণী’র কারণে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই আসর উপলক্ষে গঠিত ‘লোকাল অর্গানাইজিং কমিটি’ এবং ‘টুর্নামেন্ট কমিটি’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফাইনাল খেলাটি বাতিল করা হয়, যার জন্য বাফুফে সবার কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করার পাশাপাশি বাংলাদেশ এবং লাওস দলকে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘোষণা করে। প্রাইজমানি হিসেবে উভয় দলকে ২০ হাজার মার্কিন ডলার ও ট্রফি প্রদান করা হয় (প্রথমে চ্যাম্পিয়ন দলকে ২৫ হাজার ও রানার্সআপ দলকে ১৫ হাজার ডলার প্রদানের কথা ছিল)। এছাড়া সিদ্ধান্ত টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন ট্রফিটি স্বাগতিক বাংলাদেশই রেখে দেবে। অপর চ্যাম্পিয়ন লাওসকে আরেকটি সোনার ট্রফি তৈরি করে দেয়া পরে পাঠিয়ে দেয়া হবে। ট্রফিটি তৈরি হবে লন্ডনে। এছাড়া খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে আসা সব দর্শককে টিকেটের অর্থ ফেরত দেয়ার ঘোষণাও দেয় বাফুফে। এই ঘোষণায় খেলা দেখতে আসা ক্ষুব্ধ-হতাশ দর্শকদের ক্ষোভ কিছুটা হলেও প্রশমিত হয়। তারা তো ওইদিন বাংলাদেশ দলের টিম বাসই আটকে দিয়েছিল ক্ষোভের বহির্প্রকাশ ঘটিয়ে। পরে বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাহ্উদ্দিন খেলা বাতিল ঘোষণাকে সমর্থন করেন। সেই সঙ্গে জানানÑ আগামী বছরওই এই ছয় দলকে নিয়েই এই আসরটি আয়োজন করা হবে। তবে ফাইনাল বাতিল হলেও মাঠ কিন্তু খেলার উপযোগীই ছিল! বাফুফের সব প্রস্তুতিও নেয়া ছিল। মাঠে নেমে দুই ফাইনালিস্ট দল গা-গরমও করে। অথচ খেলা হয়নি। তাদের জমজমাট লড়াই উপভোগ করতে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে হাজির হয়েছিলেন চার হাজার দর্শক। খেলা শেষে প্রধান অতিথি হিসেবে দু’দলকে পুরস্কৃত করার কথা ছিল রাষ্ট্রপ্রতি আবদুল হামিদের। তাঁর জন্য মঞ্চ-ও সাজানো হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খেলাই গড়ায়নি মাঠে। এর জন্য দায়ী শুক্রবার ফণীর তা-ব। সেদিন সকাল থেকেই রাজধানীতে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। কিছুক্ষণ পরেই থেমেও যায়। তবে থেমে থেমে খেলা শুরুর আগ পর্যন্ত কয়েক দফা হাল্কা বৃষ্টি হয়। তখন ফাইনাল খেলা আদৌ হবে কি-না, এ নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়। কেননা ‘করিৎকর্মা’ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের বদৌলতে জাতীয় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের জল নিষ্কাশন পদ্ধতি খুবই জঘন্য এবং নিম্নমানের! তারপরও বাফুফে তাদের যথাসাধ্য অনুযায়ী সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। এবং সফলও হয় তারা। মাঠকে তারা খেলার উপযোগীও করে ফেলে। কিন্তু তারপরও খেলা হলো না! সন্ধ্যা ৬টা ২৬ মিনিটে সাংবাদিকদের জন্য নির্ধারিত প্রেসবক্সে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। সেখানে ফাইনাল বাতিলের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও লোকাল অর্গানাইজিং কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদী। সালাম আরও জানান, তিনি যে আসনের সংসদ সদস্য, সেই খুলনার কয়রাও ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। টুর্নামেন্টের স্বত্বাধিকারী কে-স্পোর্টসের প্রধান নির্বাহী ফাহাদ করিম বলেন, ‘আসলে এমন শেষ কেউই আমরা প্রত্যাশা করিনি। কিন্তু দেশে যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বয়ে যাচ্ছে, আর এখানে তো ফাইনাল সেলিব্রেশন করতে পারিনি। তাই সকল নিয়মনীতির মধ্য থেকে আমাদের স্পন্সরদের সম্মতিতে খেলা না চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ ফাইনালে অন্যতম ফেভারিট ছিল লাওস। প্রথমবার কোন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ফাইনালে ওঠা দলটির প্রত্যাশা ছিল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। কিন্তু না খেলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় হতাশ লাওসের ম্যানেজার গ্যাল্ডানশাখের বিমর্ষ চেহারা দেখে বোঝাই গেছে এমন সিদ্ধান্তে তিনি সন্তুষ্ট হতে পারেননি। অবশ্য ভদ্রতার খাতিরে তিনি গণমাধ্যমকে এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন বলে জানান। তবে জানান, ‘মাঠ এবং আবহাওয়া উভয়ই খেলার জন্য সম্পূর্ণ উপযোগীই ছিল।’ অনেকের মতেই বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের সেরা খেলোয়াড়টি হচ্ছেনÑ মনিকা চাকমা। সুদর্শনা এই এ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের গতি, ফুটবলীয় দক্ষতা আর গোল করা এবং গোল করানোর নৈপুণ্য চোখ ধাঁধানো। খেলেন মূলত বা পায়ে। মাঝমাঠের অক্লান্ত কুশলী এক শিল্পী। সদ্যসমাপ্ত ‘বঙ্গমাতা অ-১৯ নারী আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ’ ফুটবল টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ যে ৭টি গোল করেছে, তার একটি এসেছে মনিকার পা থেকে। সেই গোলটি এখন ঠাঁই পেয়েছে বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার সেরা গোলের তালিকায়! ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত গত ৩০ এপ্রিলের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নেমেছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। ম্যাচে ৩-০ গোলে জেতে বাংলার বাঘিনীরা। ম্যাচের প্রথম গোলটি করেন রাঙামাটির এই মেয়ে। ইনজুরি টাইমে (৪৫+১ মিনিটে) সতীর্থের বাড়িয়ে দেয়া বল হেড দিয়ে কিছুটা সামনে পাঠিয়ে নিজেই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সের মাথা থেকে নয়নাভিরাম বা পায়ের উড়ন্ত ভলিতে সেটা জালে পাঠিয়ে দলকে আনন্দের উপলক্ষ্য এনে দেন মনিকা চাকমা (১-০)। এক কথায় তার গোলটি ছিল অসাধারণ। এ রকম গোল দেখার সুযোগ সবসময় হয় না। ফলে দর্শক, ফুটবলপ্রেমী ... সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে গোলটির কথা। মনিকার করা সেই গোলটি জায়গা করে নিয়েছে ফিফার ভক্তদের পছন্দের তালিকায়। প্রত্যেক সপ্তাহে বিশ্বের ফুটবল ভক্তদের কাছ থেকে সেরা মুহূর্তের ছবি, ভিডিও বা অন্যান্য পছন্দের কনটেন্ট চেয়ে থাকে ফিফা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা কন্টেন্ট হ্যাশট্যাগের (#ডবখরাবঋড়ড়ঃনধষষ) মাধ্যমে ভক্তরা পাঠায় ফিফায়। প্রতি সপ্তাহে সেখান থেকে বাছাই করা সেরা পাঁচটি কনটেন্ট প্রকাশ করে ফিফা। এবারের সপ্তাহে ‘ফ্যানস্ ফেভারিট’ নামের ফিফার এই ক্যাটাগরিতে প্রকাশ পাওয়া পাঁচটি সেরা ঘটনার একটি মনিকার করা সেই বিস্ময়কর গোলটি। নিঃসন্দেহে মনিকার এই গোলটি ফিফার সেরা গোলের তালিকায় জায়গা পাওয়াতে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি পেল বহুগুণে। এই আসরে বাংলাদেশ তাদের গ্রুপ ম্যাচে হারায় ২-০ সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ২-১ গোলে কিরগিজস্তানকে। ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশ নাম লেখায় সেমিতে। সেখানে তারা ৩-০ গোলে হারায় মঙ্গোলিয়াকে। পক্ষান্তরে লাওস তাদের গ্রুপ ম্যাচে হারায় মঙ্গোলিয়াকে ৫-০ এবং তাজিকিস্তানকে ৬-০ গোলে। ‘এ’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে চলে যায় শেষ চারে। সেখানে তারা ৭-১ গোলে উড়িয়ে দেয় কিরগিজস্তানকে। বাংলাদেশের চেয়ে লাওসের আয়তন প্রায় দ্বিগুণ। অথচ জনসংখ্যার আধিক্যে লাওস যেখানে বিশে^ ৮২তম জনবহুল দেশ, বাংলাদেশ সেখানে অষ্টম (বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি, লাওসের মাত্র ৭০ লাখ!)! বাংলাদেশ একসময় ইংল্যান্ডের উপনিবেশ ছিল। লাওস ছিল ফরাসি উপনিবেশ। বাংলাদেশের আগের নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান। লাওসের পূর্বনাম ‘ল্যান জেং’ (লাখো হাতির দেশ)। লাওস এবং বাংলাদেশের মধ্যে প্রচুর অমিল। তবে দুটি মিলও আছে। বাঙালীদের মতো লাওসের অধিবাসীরাও ভাত খায়। তবে একটু ভিন্নভাবে, তারা খায় ‘স্টিম রাইস’ (বিশেষ পদ্ধতিতে রান্না করা এক ধরনের আঠালো ভাত)। দু’দলই ‘বঙ্গমাতা অ-১৯ নারী আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ’ ফুটবল আসরের ফাইনালিস্ট। আরেকটি মিল আছে দুই দেশের। দুই দেশের অ-১৯ এবং সিনিয়র মহিলা ফুটবল দলই কোন ট্রফি জিততে পারেনি। লাওস দল কোন ফাইনালেই খেলেনি। এক্ষেত্রে একবারে ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা আছে লাল-সবুজদের (সিনিয়র দলের, ২০১৬ সাফ ফুটবলে রানার্সআপ)। এই আসরে ৩ ম্যাচে লাওস করেছে ১৮ গোল। লাওসের ফরোয়ার্ড কেওটা পিই যেখানে একাই করেছেন ব্যক্তিগত ৮ গোল, সেখানে বাংলাদেশের মোট গোলই মাত্র ৭টি! সেই পিই যে কোচের মূল অস্ত্র হতেন ফাইনালে, তাতে কোন সন্দেহ ছিল না। কিন্তু খেলা না হওয়াতে সেই সুযোগই যে পাননি পিই! এই আসরের ফাইনালের তারিখ দু’বার পরিবর্তন করে হাস্যরসের জন্ম দেয় বাফুফে! টুর্নামেন্ট শুরুর আগে তারা জানিয়েছিল, ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে ৩ মে। কিন্তু গত ২৪ এপ্রিল বাফুফে গণমাধ্যমকে জানায়, ফাইনাল একদিন পিছিয়ে অনুষ্ঠিত হবে ৪ মে। কিন্তু পরে দেশীয় ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি আবারও বদলে দেয় ফাইনালের তারিখ। তাদের ভাষ্যমতেÑ ফাইনাল এবার অনুষ্ঠিত হবে সেই আগের তারিখ ৩ মেতেই! এই আসরের প্রথম সূচী অনুযায়ী ৩ মে হবার কথা ছিল ফাইনাল ম্যাচ। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করার কথা ছিল। তবে নির্ধারিত দিনে প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না বলে ফাইনালের তারিখ একদিন পিছিয়ে ৪ মে করা হয়েছিল। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন। গত ২৪ এপ্রিল এমনটাই গণমাধ্যমকে মৌখিকভাবে জানিয়েছিলেন বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ। যা নিয়ে দেশের সব গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশ হয়েছিল। মাত্র ছয় দিনের মাথাতে এসেই ভোল পাল্টে ফেলে বাফুফে। মঙ্গোলিয়া। শব্দটি উচ্চারণ করলেই যে বিষয়গুলো মনের মাঝে ভিড় করে, তা হলো এটি অতি নির্মম ও রক্তপিপাসু শাসক চেঙ্গিস খানের দেশ। ত্রয়োদশ শতকে এশিয়ার সিংহভাগ সাম্রাজ্যই দখল করে নিয়েছিলেন তিনি। এবার বিংশ শতাব্দীতে পূর্ব এশিয়ার সেই দেশটির কিছু নারী ফুটবলার বাংলাদেশে এসেছিলেন দখল করতে। সা¤্রাজ্য নয়, ‘বঙ্গমাতা অ-১৯ নারী আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ’ ফুটবল টুর্নামেন্টের ট্রফি! তবে তাদের সেই আশা ধূলিসাৎ করে দেয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ব-দ্বীপ এবং দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের দেশ খ্যাত স্বাগতিক বাংলাদেশ দল। টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতলেও এবার বাংলাদেশের খেলা সেভাবে মন ভরাতে পারেনি ফুটবলপ্রেমীদের। বিশেষ করে তাদের ফরোয়ার্ডদের অসংখ্য গোল মিস ছিল চোখে পড়ার মতো। এজন্য অবশ্য দেশবাসীর কাছে দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন দলের অধিনায়ক মিশরাত জাহান মৌসুমী। সিনিয়র পর্যায়ে এখনও চূড়ান্ত সাফল্য না পেলেও বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টগুলোতে কিন্তু দুর্বার বাংলাদেশের জাতীয় মহিলা ফুটবল দল। তারা ছয়টি শিরোপা জিতেছে এ পর্যন্ত। আগের পাঁচটি হলোÑ এএফসি অ-১৪ বালিকা চ্যাম্পিয়ন (আঞ্চলিক) আসরে দু’বার (২০১৫ ও ২০১৬), এএফসি অ-১৬ আসরের (২০১৬) আঞ্চলিক বাছাইপর্বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন একবার, সাফ অ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে (২০১৭) একবার এবং জকি ক্লাব গার্লস ইন্টা. ইয়ুথ ইনভাইটেশনাল ফুটবল টুর্নামেন্টে (২০১৮) একবার। এছাড়া রানার্সআপ হয়েছে সাফ অ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে (২০১৮) এবং এএফসি অ-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্বে (২০১৯)। প্রতিটি আসরেই দলের কোচ ছিলেন গোলাম রব্বানী ছোটন। কিরগিজস্তানের বিরুদ্ধে খেলতে গিয়ে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন বাংলাদেশের দুই ফরোয়ার্ড সিরাত জাহান স্বপ্না এবং কৃষ্ণা রানী সরকার। ফাইনালের আগে কৃষ্ণা সুস্থ হলেও হননি স্বপ্না। প্রথম আসর। ভুটানের চাংলিমিথাং স্টেডিয়াম। ফাইনালে নেপালকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। শিরোপা নিয়ে ক্যামেরার সামনে হাসিমুখে পোজ দিয়েছিলেন অধিনায়ক মিশরাত জাহান মৌসুমী। ৩ মে, ২০১৯। বঙ্গমাতা অ-১৯ মহিলা আন্তর্জাতিক গোল্ড কাপের প্রথম আসর। বাংলাদেশের ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। ফাইনালে খেলা না হওয়াতে লাওসের সঙ্গে শিরোপাটা ভাগাভাগি করেই সন্তুষ্ট থাকতে হলো মৌসুমীকে। রংপুরের মেয়ে মৌসুমী। বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবল দিয়ে ২০১১ সালে ক্যারিয়ারের শুরু। সেবার ফাইনালে মৌসুমীদের রংপুর সদরের পালিচড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় হেরে গিয়েছিল (প্রতিপক্ষ রাঙামাটির কাউখালীর মঘাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়)। তবে পরের বছর অধরা শিরোপা জেতে মৌসুমীদের পালিচড়া স্কুল। ফাইনালে হারায় সিলেটের জৈন্তাপুরের নিশ্চিন্তপুর রেজিঃবেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে। তারপরই বাফুফের চোখ পড়ে মৌসুমীর ওপর। ট্রায়ালে ডাকা হয় তাকে। সেই থেকে লাল-সবুজ জার্সি পড়ে মাঠ মাতাচ্ছেন সুদর্শনা মৌসুমী। ২০১১ ও ২০১২ সালে ওই আসরে পালিচড়া স্কুলের অধিনায়ক ছিলেন মৌসুমী। মজার ব্যাপারÑ আট বছর পর বঙ্গমাতার নামে আরেকটি টুর্নামেন্টে (আন্তর্জাতিক) এবার জাতীয় অ-১৯ দলের অধিনায়কও সেই মৌসুমীই! গ্রুপ ম্যাচে কিরগিজস্তানের সঙ্গে খেলা শুরুর ৩০ সেকেন্ডে গোল করেন বাংলাদেশের রাইট উইঙ্গার সানজিদা আক্তার। ম্যাচসেরার পুরস্কারও পান (৫০০ ডলারও)। বঙ্গমাতা গোল্ডকাপে এটিই সবচেয়ে দ্রুততম গোলের রেকর্ড। এই ৬ আসরে লক্ষণীয় ব্যাপার ছিলÑ এই টুর্নামেন্টের ম্যাচগুলো তিনটি বাংলাদেশী টিভি চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারিত হলেও প্রতিটি চ্যানেলই শুধু ইংরেজী ধারাভাষ্যসহ খেলা প্রচার করে। ফলে এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ফুটবলপ্রেমীরা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে তীব্র সমালোচনা করা হচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে (বাফুফে) এবং টুর্নামেন্টের প্রচারস্বত্বের অধিকারীকে- স্পোর্টসের। এ নিয়ে গণমাধ্যমের কাছে একটি বার্তা পাঠায় বাংলাদেশ স্পোর্টস কমেন্টেটর্স ফোরাম। তারা এ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ করে। তাতে কাজও হয়। বিটিভিতে দেরিতে হলেও এই আসরের বাংলা ধারাভাষ্যের ব্যবস্থা করা হয়। বাংলাদেশ অ-১৯ জাতীয় নারী ফুটবল দল ॥ রূপনা চাকমা, মাহমুদা আক্তার, ইয়ামিন আক্তার, মাসুরা পারভীন, নার্গিস খাতুন, আঁখি খাতুন, শিউলি আজিম, মিশরাত জাহান মৌসুমী (অধিনায়ক), শামসুন্নাহার সিনিয়র, নিলুফার ইয়াসমীন নীলা, নাজমা আক্তার, মারিয়া মান্দা (সহ-অধিনায়ক), মনিকা চাকমা, ইশরাত জাহান রতœা, মারজিয়া আক্তার, রাজিয়া খাতুন, সানজিদা আক্তার, সিরাত জাহান স্বপ্না, কৃষ্ণা রানী সরকার, শামসুন্নাহার জুনিয়র, সাজেদা খাতুন, তহুরা খাতুন এবং মোসাম্মৎ সুলতানা।
×