ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিসংঘের রিপোর্টে তথ্য

পৃথিবীর ১০ লাখ প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে

প্রকাশিত: ১২:১৮, ৮ মে ২০১৯

পৃথিবীর ১০ লাখ প্রজাতি নিশ্চিহ্ন  হওয়ার পথে

পৃথিবীর বাসিন্দা ৮০ লাখ প্রজাতির মধ্যে ১০ লাখ প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হওয়ার মুখে। আর এ জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দায়ী মানুষই। সোমবার জাতিসংঘের একটি রিপোর্টে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। মাস ছয়েক আগের জাতিসংঘের অন্য একটি রিপোর্টে কপালে ভাঁজ পড়েছিল গোটা বিশ্বের। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, হাতে আর মাত্র বারোটা বছর। এভাবে চললে এক যুগ পরে বিশ্ব উষ্ণায়ন অসহনীয় হয়ে উঠবে। সেই ধাক্কা সামলাতে না সামলাতেই নতুন এ রিপোর্ট এলো। রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের ‘ইন্টারগবর্নমেন্টাল সায়েন্স-পলিসি প্ল্যাটফর্ম অন বায়োডাইভার্সিটি এ্যান্ড ইকোসিস্টেম সার্ভিসেস’ (আইপিবিইএস)। এই রিপোর্ট তৈরি করেছে ৫০ দেশের ১৪৫ বিশেষজ্ঞকে নিয়ে গঠিত কমিটি। এতে দাবি করা হয়েছে- জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং বেপরোয়াভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের ফলে বিপন্ন ওই সব প্রজাতি। আগের তুলনায় দশ থেকে একশ’ গুণ দ্রুত গতিতে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে। মূল কারণগুলো হলো- বাসস্থান কমছে, অপব্যবহার হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদের, সেই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন এবং দূষণ। আর এইসব কিছুর পেছনে মানুষ। বিপদে ৪০ শতাংশেরও বেশি উভচর, ৩৩ শতাংশেরও বেশি প্রবাল প্রাচীর। নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি। আইপিবিইএসের অন্যতম বিশেষজ্ঞ রবার্ট ওয়াটসন বলেন, ‘বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে। আমরা বাস্তুতন্ত্রের ওপরে নির্ভরশীল। ফলে ভুগতে হবে আমাদের।’ হাতের কাছে উদাহরণ অগুণতি- চোরাশিকারিদের তা-বে শেষ হতে বসেছে কালো গ-ার (ব্ল্যাক রাইনো)। ২০১৪ সালে ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী গত ৪০ বছরে পৃথিবীতে এদের সংখ্যা কমে অর্ধেক হয়ে গেছে। ভয়াবহভাবে বিপন্ন ‘হকসবিল সি টার্টল’। জঙ্গলের গভীরে মানুষের অনুপ্রবেশে মৃতপ্রায় দশা পাহাড়ী গোরিলাদের। রাশিয়া ও চীন সীমান্তে বাস আমুর লেপার্ডের (বিরল প্রজাতির চিতাবাঘ)। সংখ্যায় খুবই কমে গেছে প্রজাতিটি। খনন কাজ, পাম ও গোল মরিচ চাষের জন্য ক্রমশ বাসস্থান হারাচ্ছে সুমাত্রার ওরাংওটাং। ‘সাউথ চায়না টাইগার’কে অবলুপ্ত প্রজাতি বলেই ধরা হয়। গত ২৫ বছরে তাদের দেখা মেলেনি। জলবায়ু পরিবর্তনের মতো জীববৈচিত্র্য ধ্বংসেও খলনায়ক মানুষই। ভূখ-ের ৭৫ শতাংশের প্রকৃতি বদলে গেছে। সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের ৬৬ শতাংশ ভেঙ্গে পড়েছে। আর এই সবটা হয়েছে শিল্পবিপ্লবের পরে। এর পেছনেও একটা বড় কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ‘গত ৫০ বছরে জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গেছে- ৩৭০ কোটি থেকে ৭৬০ কোটি। চাষবাস ও পশুপালনের জন্যই ভূখ-ের এক-তৃতীয়াংশ এবং স্বচ্ছ জলের ৭৫ শতাংশ ব্যবহার হয়ে যায়। রিপোর্টের সহ-লেখক স্যান্ড্রা ডিয়াজ বলেন, ‘এ গ্রহের সামান্য কিছু অংশ এখনও মানুষের হাতে পড়েনি। তাই অক্ষত রয়েছে।’ বিশেষজ্ঞরা জানান, ২০১৫ সালের মধ্যে সামুদ্রিক খাদ্য উৎসের এক-তৃতীয়াংশ শেষ করে ফেলেছে মানুষ। গাছকাটা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ১৯৮০ সালের পর থেকে সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ দশগুণ বেড়েছে। প্রতিবছর ৩০ থেকে ৪০ কোটি টন বর্জ্য মিশছে পানিতে। সমুদ্রে তৈরি হয়েছে ৪০০ ‘মৃত্যু এলাকা’। সামগ্রিক চিত্র খুবই ভয়াবহ। তবু হাল ছাড়তে রাজি নন বিজ্ঞানীরা। ওয়াটসন বলেন, ‘এখনও সময় আছে। তবে অবিলম্বে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সর্বোপরি সামাজিক চিন্তাধারা বদলাতে হবে। জোরদার পদক্ষেপ নিতে হবে রাষ্ট্রগুলোকে। সবৃজ এমনভাবে বাড়াতে হবে, যাতে বিভিন্ন প্রাণীর বাসস্থানের ব্যবস্থা হয়, একই সঙ্গে মানুষকে খাদ্যের জোগান দেয়। দূষণ থেকে বাঁচাতে হবে সমুদ্রকে। প্রকৃতিবিজ্ঞানী রেচেল ওয়ারেন বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত বাস্তুতন্ত্র বাঁচাতে সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। বন্যা রুখতে হবে, জল এবং বায়ুদূষণ বন্ধ করতে হবে। এগুলো তো মানুষের হাতেই।’ ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড’-এর আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য নীতির ডিরেক্টর গুন্টার মিটলাচের বলেন, ‘আমরাই বোধ হয় প্রথম প্রজন্ম, যারা যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়েছি। আবার আমরাই শেষ প্রজন্ম, যারা এখনও চাইলে সব কিছু ঠিক করে দিতে পারি। খলনায়কই হোক নায়ক।’ -আনন্দবাজার
×