ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দুই রয়টার্স সাংবাদিক মুক্ত

প্রকাশিত: ১২:১৭, ৮ মে ২০১৯

দুই রয়টার্স সাংবাদিক মুক্ত

রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে অবশেষে মুক্তি দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। দেশটির প্রেসিডেন্টের বিশেষ ক্ষমার আওতায় মঙ্গলবার অকুতোভয় সাংবাদিক ওয়া লোন (৩৩) ও কিয়াও সো ও (২৯) ইয়াঙ্গুনের ইনসেন কারাগার থেকে ছাড়া পান। টানা ৫শ’ ১২ দিন জেল খাটার পর মুক্তি পেলেন পুলিৎজার বিজয়ী এই দুই সাংবাদিক। ওয়া লোন ও কিয়াও সো ও’র মুক্তি দেয়ায় মিয়ানমার সরকারকে ধন্যবাদ দিয়েছেন রয়টার্সের এডিটর ইন চীফ স্টিফেন আডলার। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ৫শ’ ১২ দিন আগে আটকের পর ওয়া লোন এবং কিয়াও সো ও’ বিশ্বব্যাপী মুক্ত গণমাধ্যমের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে পরিণত হয়েছিলেন। তাদের মুক্তির ঘটনাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। গোপনীয় আইন ভঙ্গের অজুহাতে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এই দুই সাংবাদিককে আটক করে মিয়ানমার সরকার। খবর বিবিসি ও আল জাজিরা অনলাইনের। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ওয়া লোন ও কিয়াও সো ও’র সাত বছরের কারাদ- দেয় আদালত। তাদের কারাদ-ের ঘটনাকে বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য চরম চপেটাঘাত এবং মিয়ানমারের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ওয়া লোন বলেন, তাকে কোনভাবেই প্রকৃত সাংবাদিকতা থেকে দূরে রাখা যাবে না। তিনি বলেন, আমি আজ আমার সহকর্মী ও পরিবারকে এখানে দেখতে পেরে খুশি। তবে নিউজ রুমে না ঢোকা পর্যন্ত আমি স্বস্তি পাচ্ছি না। ২০১৬ সালে রয়টার্সে যোগ দেন ওয়া লোন। এরপরের বছর রয়টার্সে যোগ দেন কিয়াও সো ও। রাখাইনের ইনদিন গ্রামে ১০ রোহিঙ্গা নাগরিককে হত্যার তথ্য সংগ্রহ করেন এই দুই সাংবাদিক। প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগেই তাদের আটক করে মিয়ানমার পুলিশ। ইয়াঙ্গুনে পুলিশ কর্মকর্তাদের এক ডিনারের আমন্ত্রণে যাওয়ার পর ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর তাদের গ্রেফতার করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাখাইনের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গোপন নথিপত্র ছিল তাদের কাছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ ও মানবাধিকার সংগঠন দুই সাংবাদিককে গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে তাদের মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানালেও মিয়ানমার সরকার তাতে সাড়া না দিয়ে মামলা চালিয়ে যায়। নিম্ন আদালতে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশে বলা হয়, পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস এ্যাক্টের অধীনে অভিযোগ এনেছে। সেখানে বলা হয়েছে, তারা জাতীয় নিরাপত্তাকে হমকির মুখে ফেলার উদ্দেশ্য নিয়ে সামরিক বাহিনীর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে স্পর্শকাতর তথ্য ও নথি সংগ্রহ করেছেন। এ মামলায় পুলিশের বক্তব্য ছিল, এই দুই সাংবাদিককে যখন গ্রেফতার করা হয় তাদের কাছে সেনাবাহিনীর গতিবিধির বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত নথি পাওয়া যায়। আর মোবাইলে পাওয়া যায় বিভিন্ন মাত্রার গোপনীয় তথ্য। আসামিপক্ষের আইনজীবী আদালতে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগের পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ দেখাতে পারেনি। সংবাদ সংগ্রহে বাধা দিতেই ঘটনা সাজিয়ে দুই সাংবাদিককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ওই মামলায় ওয়া লোন ও কিয়াও সো ও’কে গত বছর সেপ্টেম্বরে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয় ইয়াঙ্গুনের জেলা জজ আদালত। পরে হাইকোর্টে ওই রায় বহাল থাকে। ২৩ এপ্রিল সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগও দুই সাংবাদিকের আপীল খারিজ করে দেয়, ফলে সাত বছরের সাজার রায়ই বহাল থাকে। পশ্চিমা কূটনীতিবিদের কেউ কেউ এবং কোন কোন অধিকার সংগঠন দুই সাংবাদিকের এই বিচারকে গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়ায় থাকা মিয়ানমারের জন্য একটি পরীক্ষা হিসেবে বর্ণনা করে সতর্ক করে আসছিলেন। কিন্তু মিয়ানমারের অবস্থান তখন বদলায়নি। সাহসী সাংবাদিকতার জন্য ওয়া লোন এবং কিয়াও সো ওকে গত মাসে সাংবাদিকতার সর্বোচ্চ পুরস্কার পুলিৎজার দেয়া হয়। এরপর প্রখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনও এই দুই সাংবাদিককে নিয়ে প্রচ্ছদ প্রকাশ করে। প্রতি বছর বর্ষবরণ উপলক্ষে মিয়ানমারে প্রেসিডেন্টের ক্ষমায় বিপুল সংখ্যক বন্দীকে মুক্তি দেয়া হয়। এসব বন্দীর মধ্যে এ বছর ওয়া লোন (৩৩) ও কিয়াও সো ও মুক্তি পেলেন।
×