ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর

বিশ্ব সংসদীয় সম্মেলন ২০১৯

প্রকাশিত: ১২:০৫, ৮ মে ২০১৯

বিশ্ব সংসদীয় সম্মেলন ২০১৯

ওয়াশিংটন ডিসিতে গত ৮ ও ৯ এপ্রিলে অনুষ্ঠিত বার্ষিক বিশ্ব সংসদীয় সম্মেলনে আমি বাংলাদেশ সংসদ থেকে উপস্থিত হয়ে অংশগ্রহণ করেছি। এই সম্মেলন বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের উদ্যোগে ২০০০ সাল থেকে বিশ্ব সংসদীয় বলয় বা নেটওয়ার্ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত অসরকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করে আসছে। এই নেটওয়ার্ক বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সদস্য দেশসমূহের আর্থিক নীতি প্রণয়ন ও তত্ত্বাবধানের ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিত্বের সংশ্লিষ্টতার ভিত্তিতে তাদের সংসদ সদস্যগণকে স্ব-স্ব ভূমিকায় ব্যক্তিগতভাবে সুশাসন, উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে ও লক্ষ্যে এই দুটি প্রধান আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে আলোচনা করার মাধ্যম ও পীঠস্থান হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে। ২০১৮ সালে এই সম্মেলন ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল (দ্রষ্টব্য, বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সংসদীয় নেটওয়ার্ক- বালি ২০১৮, দৈনিক জনকণ্ঠ, ৬ নবেম্বর, ২০১৮)। আমি যেমন ওই সম্মেলনেও বাংলাদেশ থেকে উপস্থিত ছিলাম, তেমনি উপস্থিত ছিলাম ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ২০১৭ সালের সম্মেলনে। এই বছরের ৮-৯ এপ্রিলে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে মোট ১৮৪ দেশের সাংসদগণ উপস্থিত হয়েছিলেন। সহযোগীর ভূমিকায় উপস্থিত হয়েছিলেন বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রধানদ্বয় এবং আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে কর্মরত অন্যান্য অসরকারী প্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিবৃন্দ। এই সম্মেলনে ১. মানব মূলধনে বিনিয়োগ, ২. প্রযুক্তির বিচ্ছিন্নকরণীয় প্রবণতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপাত্তসমূহের প্রকৃতি, ৩. সমৃদ্ধির লক্ষ্যে নারীর ক্ষমতায়ন, ৪. জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূলে সরকারী ও অসরকারী সংস্থাসমূহের ভূমিকা, ৫. সুশাসন ও রাজনৈতিক জবাবদিহিত্ব এবং ৬. বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এর বাইরে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলী খাদ্যের সর্বজনীন নিরাপত্তাকে বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীলতা ও সংঘাতবিহীনতার দ্যোতক হিসেবে বস্তুনিষ্ঠভাবে উপস্থাপন করেন। বিশ্বব্যাংকের তরফ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টালিনা জিওরগভিয়া এই সম্মেলনে তার সংস্থার সমকালীন বিনিয়োগের ৩টি স্থিরীকৃত লক্ষ্য জোর দিয়ে ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন পৃথিবীব্যাপী ১. দারিদ্র্য বিশেষত চরম দারিদ্র্য বিমোচনীয় ও অন্তর্ভুক্তীয় এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নকে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে, ২. দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশসমূহের সঙ্গে এক যোগে সাময়িক আর্থিক বিপর্যয় ও ভীতি প্রতিহতকরণ প্রক্রিয়া শক্তিশালী করতে হবে এবং ৩. সকল সহায়তা প্রত্যাশী দেশসমূহকে তাদের মানব মূলধনে বিনিয়োগ বাড়ানোয় উন্নত দেশসমূহ এবং বিশ্বব্যাংক থেকে সহায়তা দিতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, এসব লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংকের মূলধন ৫০% বাড়ানো হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে তিনি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সমিতির বা আইডিএ-এর আসন্ন ১৯ পুনর্ভরণের জন্য উচ্চতর মাত্রায় তহবিল অর্জন করার জন্য উন্নত দেশসমূহকে অধিকতর অগ্রণী হওয়ার আহ্বান জানান। উপস্থিত সকল সংসদ সদস্য উপরোক্ত ৩ লক্ষ্যে তাদের স্ব-স্ব সংসদ থেকে বিশ্বব্যাংকের পরিচালনকে সমর্থন ও সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দেন। বিশ্বব্যাংকের তরফ হতে প্রদত্ত এরূপ পথনির্দেশিকা সুস্পষ্টত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে অর্থ ব্যবস্থায় নি¤œতম রাষ্ট্রীয় ভূমিকা পালনের অনুকূলে তথাকথিত ওয়াশিংটন মতৈক্যের আপেক্ষিকতায় বস্তুনিষ্ঠ ও প্রয়োগধর্মী বলে সকলের কাছে প্রতিভাত হয়। প্রায় সকলেই ওয়াশিংটন মতৈক্য থেকে দূরে সরে এসে অর্থ ব্যবস্থায় অনুকূলতম ও প্রসারিত রাষ্ট্রীয় ভূমিকার অনুকূলে বিশ্বব্যাংকের এই অবস্থানকে স্বাগত জানান। আমি, বাংলাদেশের পদ্মা সেতু অর্থায়নের প্রক্রিয়ায় বিশ্বব্যাংকের একতরফা এবং স্বেচ্ছাচারী ভূমিকার প্রেক্ষিতে সকল আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ব্যাংকের কার্যক্রমে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশের পরিস্থিতি এবং অবস্থানকে যথা ইপ্সিত গুরুত্ব ও মর্যাদা দেয়ার প্রয়োজনীয়তার প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হই। এই অবস্থানের পরম্পরায় আমি মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বিতারণকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি বলে উল্লেখ করি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টাইন লাগার্ডে তার ভাষণে বিশ্বব্যাংকের পরিবর্তিত ও লাগসই লক্ষ্যসমূহকে পূর্ণ সমর্থন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন এবং এই প্রক্রিয়ায় সদস্য দেশসমূহের বৈদেশিক দেনা-পাওনার হিসাবের বাইরে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে সদস্য দেশসমূহের অনুকূলে তার সংস্থার কার্যাবলী অধিকতর বিস্তৃত এবং সংহত করার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি নারীর দ্রুত ক্ষমতায়ন ও কতিপয় বৃহৎ অর্থ ব্যবস্থায় প্রবৃদ্ধির হ্রাস পাওয়া প্রতিহত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং সুষম সমাজ গঠনে কর্মসংস্থান বাড়ানোর ওপর জোর দেন। আলোচনান্তে আমি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কার্যাদি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতির সঙ্গে অধিকতর সামঞ্জস্যপূর্ণকরণ এবং এই প্রক্রিয়ার সাম্প্রতিককালে দৃষ্ট বৃহৎ অর্থনীতির দেশসমূহের বাণিজ্য সংঘাত প্রশমিত করার ওপর জোর দেই। এশিয়া ও আফ্রিকার অধিকাংশ সংসদ সদস্য আমার সঙ্গে ঐকমত্য প্রকাশ করেন। অবশ্য উন্নত দেশের সংসদ সদস্যরা এবং বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের উর্ধতন কর্মকর্তারা এই প্রয়োজনীয়তার অনুকূলে বা প্রতিকূলে কোন বক্তব্য দেননি। এই সম্মেলনে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশের জনগণকে মানব মূলধন হিসেবে বিবেচনা করে ১. সর্বজনীন প্রাথমিক বা মৌলিক শিক্ষা সুসংহতায়ন, ২. স্বাস্থ্যে বলীয়ান জনশক্তি সৃজন ও সংরক্ষণে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রসারিত করণ, ৩. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসারণে এবং উদ্ভাবনে অধিকতর মনোযোগ দেয়া এবং ৪. শ্রমশক্তিকে প্রযুক্তির বিবর্তনের আলোকে যথা প্রয়োজন নিরন্তর প্রশিক্ষণ প্রদানের ওপর জোর দেয়া হয়। এই সম্মেলনে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশসমূহের উন্নয়নের জন্য মানব মূলধনের বিস্তৃতি এবং উৎকর্ষ সাধন বিশেষভাবে আলোচিত হয়। এই প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক ১৯৯৮ সালে মানব মূলধন সূচক সদস্য দেশসমূহের এক্ষেত্রে অগ্রগতির পরিচায়ক হিসেবে গণ্য করার প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানান হয়। সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক উচ্চশিক্ষা নিশ্চিতকরণের সংযুক্তি হিসেবে উপস্থিত সকলে বিশেষজ্ঞতা ও উদ্ভাবনশীলতা উৎসারণের ওপর জোর দেন। দারিদ্র্য বিমোচনে এক্ষেত্রের কার্যক্রম অতীব প্রয়োজনীয় সহযোগ হিসেবে বিবেচনা করার জন্য সকলে একমত হন। এশিয়া ও আফ্রিকার অধিকাংশ সাংসদের সঙ্গে ঐকমত্য প্রকাশ করে আমি প্রযুক্তির দ্রুত বিস্তারকে মেধা বা আঁতেল সম্পদ সংরক্ষণে উন্নত দেশের অনুৎপাদনশীল রক্ষণশীলতার অবসান দাবি করি এবং কর্মভিত্তিক প্রযুক্তির প্রশিক্ষণে ব্যক্তি খাতকে অধিকতর সংশ্লিষ্ট করার প্রয়োজন তুলে ধরি। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রতিনিধিরা এক্ষেত্রে আমার মতকে সমর্থন জানান। জলবায়ু পরিবর্তনের অশুভ প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া থেকে বিশ্বকে রক্ষা করার দাবি এই সম্মেলনে জোরের সঙ্গে উপস্থাপিত হয়। এই ক্ষেত্রে উন্নত দেশসমূহের অনীহা এবং দেশ বিশেষ কর্তৃক জলবায়ু পরিবর্তনের অশুভ প্রতিক্রিয়াকে অবজ্ঞা করা বিশ্ব প্রবৃদ্ধির প্রতিকূল বলে সবাই মত প্রকাশ করেন। বিশ্বব্যাংকের অন্তবর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া বন্ধকরণে উন্নত দেশসমূহ তাদের করণীয় করছে না বলে অভিযোগ উত্থাপন করেন। বিশ্বব্যাংকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক অর্থ কর্পোরেশন ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রক্রিয়ায় ১. তাপবিদ্যুৎ, ২. রাসায়নিক দ্রব্য ও সার এবং ৩. সিমেন্ট উৎপাদনের ক্ষেত্রে কার্বন মূল্য কর্পোরেশনের ১৮৪টি সদস্য দেশে আরোপণ করার কার্যক্রম নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানা যায়। সম্মেলনে উপস্থিত সকলে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক অর্থ কর্পোরেশনের এই অবস্থান এবং কার্যক্রমে সমর্থন জানান। জলবায়ুর পরিবর্তন উৎসারিত প্রতিকূলতা প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে গণখাতের কার্যক্রমের সঙ্গে ব্যক্তি খাতের সমন্বয় সাধনের ওপর এই সম্মেলনে সবিশেষ জোর দেয়া হয়। লিঙ্গ সমতার প্রয়োজন ও তা স্থাপনের কার্যক্রম এই সম্মেলনে বিশদভাবে আলোচিত হয়। সকল সংসদ সদস্য একমত হন যে, লিঙ্গ সমতা স্থাপন ও সংরক্ষণ ছাড়া সর্বজন গ্রহণীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং প্রগতি অর্জন করা সম্ভব নয়। উন্নয়নের জন্য নারীকে কর্মশক্তির মর্যাদা দিয়ে সকল উৎপাদনশীল ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ও পুরুষসম সুযোগ দিয়ে প্রযুক্ত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে বলে সকল সংসদ সদস্য একমত হন। এই লক্ষ্যে আইন সংস্কার, সাংস্কৃতিক পরিবর্তন, মূল্যবোধের আধুনিকায়ন প্রয়োজন বলে উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেন। সম্মেলনে উপস্থাপিত বিশ্বব্যাংকের জরিপ অনুযায়ী গত ১০ বছরে এই ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বব্যাংক কর্তৃক প্রবর্তিত ‘নারী, বাণিজ্য ও আইনসূচক’ অনুযায়ী সারা বিশ্বের গড় অবস্থান সর্বাধিক অর্জনীয় ১০০-এর বিপরীতে এখন ৭৫-এর নিচে বলে বিদিত হয়। ১০০ অর্জনকারী ৬টি দেশ- বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, লাটভিয়া, লুক্সেমবার্গ ও সুইডেন। দক্ষিণ এশিয়ার অর্জন মাত্র ৫৮ বলে বিদিত হয়েছি। বাংলাদেশ এই পরিমাপে ৫০ সূচকের ওপরে অর্জন করতে সমর্থ হয়নি। লিঙ্গ সমতা স্থাপনে সকল উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশে অধিকতর ফলপ্রসূ মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন বলে সম্মেলনে উপস্থিত সকলে স্বীকার করেছেন। পরিপূর্ণ লিঙ্গ সমতা অর্জন না করে কোন কোন দেশ উন্নত দেশ হিসেবে স্বীকৃত হতে পারে না বলে এই ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ দ্রুততার সঙ্গে নিতে হবে বলে সবাই একমত হয়েছেন। সুশাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিষয়ে আলোচকরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও প্রক্রিয়াকে সকল দেশে অধিকতর সুসংহত করে সাম্প্রতিককালে বিশ্বব্যাপী দৃষ্ট গড় প্রবৃদ্ধি বাড়ার সঙ্গে আর্থিক অসমতা বাড়া এবং যুব সম্প্রদায়ের অস্থিরতা ও আত্মকেন্দ্রিক মূল্যবোধের অনুসারী হওয়ার প্রতি দৃষ্টি দেন। এই প্রেক্ষিতে যে সামাজিক ও রাজনৈতিক সমঝোতা বা চুক্তির ভিত্তিতে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর এতদিন পর্যন্ত রাষ্ট্রসমূহ পরিচালিত হচ্ছিল তার সংশোধনের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। বলা হয় যে, ভৌগোলিক অবস্থানকে ভিত্তি করে অর্থনৈতিক সুযোগের সমকালীন অসমতা দূর করা প্রয়োজন। তেমনি প্রয়োজন লিঙ্গ, গোত্র, বেড়ে ওঠার পরিবেশ ইত্যাদিকে ভিত্তি করে প্রশাসিত আর্থিক সুবিধাদির অসমতা দূরীকরণ। গড় জীবন প্রত্যাশা বা আয়ু বাড়ার সঙ্গে যে বয়স্ক ও তরুণদের মাঝে প্রজন্ম পার্থক্য সৃষ্টি হতে চলছে তা সন্মার্জিত বা সংশোধন করা প্রয়োজন বলে সম্মেলনের একাংশ অন্যদের সামনে তুলে ধরেন। দু’দিন প্রায় নিরবচ্ছিন্ন উপস্থাপনা ও আলোচনার পর পরবর্তী ২ বছরের জন্য এই সম্মেলনে বিশ্ব সংসদীয় বলয় বা নেটওয়ার্কের ৯ সদস্যবিশিষ্ট (পরিচালনা) পর্ষদ নির্বাচন করা হয়। নির্বাচনে যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্য লিয়াম বাইরন সভাপতি নির্বাচিত হন। আমি সর্বোচ্চ ভোটে সদস্য বা পরিচালক নির্বাচিত হই। পরে আমার প্রস্তাব অনুযায়ী সর্বসম্মতভাবে শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলায় নির্দোষ নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সকল দেশের সংসদকে অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। পরিচালক তিউনিশিয়ার সাংসদ ওলফা শেরিফের প্রস্তাব অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদ ২০১৯-এর জুনে প্যারিসে জি-৭ দেশসমূহের বার্ষিক সভাকালীন উপস্থিত থেকে ওইসব দেশসমূহকে এই নেটওয়ার্কের অভীষ্ট ও লক্ষ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করার চেষ্টা করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই আলোচনাকালে আমরা রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে জি-৭ দেশসমূহের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা করতে পারব বলে এই আশা ব্যক্ত করি। লেখক : সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী
×