ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিজেপির পথ ধরে আরও কটি দল জোট ছাড়ছে

প্রকাশিত: ১১:১০, ৮ মে ২০১৯

বিজেপির পথ ধরে আরও কটি দল জোট ছাড়ছে

শরীফুল ইসলাম ॥ বার বার ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বিএনপিতে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে তার ঢেউ লেগেছে ২০ দলীয় জোটেও। জোটের নেতৃত্বদানকারী দল বিএনপি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে অন্য শরিক দলকে গুরুত্ব না দেয়ায় সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ-বিক্ষোভ। ইতোমধ্যেই অন্যতম শরিক দল ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থের নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোট ছেড়ে চলে গেছে। বিজেপির পথ ধরে শীঘ্রই ২০ দল ছাড়ছে আরও ক’টি দল। এদিকে ২৩ মে এর মধ্যে বিএনপিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার আল্টিমেটাম দিয়েছে ২০ দলীয় জোটের শরিক লেবার পার্টি। এ সময়ের মধ্যে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট না ছাড়লে ২৪ মে সংবাদ সম্মেলন করে ২০ দল ছাড়ার ঘোষণা দেবে লেবার পার্টি। লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ ঘোষণা দেন। এক প্রশ্নের জবাবে ইরান বলেন, আমার দল যদি ২০ দলীয় জোটে না থাকে তাহলে আরও অন্তত ৫টি দল এ জোট থেকে বেরিয়ে যাবে। সূত্রমতে, ২০ দলীয় জোটকে অন্ধকারে রেখে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর থেকেই বিএনপির সঙ্গে ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর বিরোধ সৃষ্টি হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপকালে ২০ দলীয় জোটের নেতাদের বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৪টি দলের নেতাদের সঙ্গে নেয়া এবং সারাদেশের ৩০০ নির্বাচনী এলাকায় শরিকদের মধ্যে আসন ভাগাভাগির সময় এ বিরোধ আরও বাড়ে। কারণ, ২০ দলীয় জোটের অধিকাংশ শরিক দলকেই আশানুরূপ আসন দেয়া হয়নি। সর্বশেষ জোটের কাউকে কিছু না বলে বিএনপি দলীয় ৫ সাংসদের জাতীয় সংসদে যোগদানকে কেন্দ্র করে বিএনপির প্রতি ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের বিরোধ ও অস্থিরতা তুঙ্গে ওঠে। এ অবস্থায় আগেই এ জোটে ভাঙ্গনের আশঙ্কা করেন অভিজ্ঞ মহল। আর এ আশঙ্কা সত্যি হয় সোমবার ২০ দলীয় জোটের পুরনো ও পরীক্ষিত শরিক দল বিজেপির জোট ছাড়ার মধ্য দিয়ে। সোমবার রাতে বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ নিজেই গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে ২০ দলীয় জোট ছাড়ার ঘোষণা দেন। তার আগে বিএনপির বিরুদ্ধে শরিক দলগুলোর প্রতি অবজ্ঞা আর অবহেলার অভিযোগ এনে বিজেপি মহাসচিব আব্দুল মতিন সউদ সাংবাদিকদের জানান, ২০ দলকে পাশকাটিয়ে বিএনপি গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। আমরা তাদের কাছ থেকে অবজ্ঞা অবহেলার শিকার হয়েছি। আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বর্জন করেও তারা এখন আবার কাউকে কিছু না বলে জাতীয় সংসদে যোগ দিয়েছে। অথচ তারা আগে বলে আসছিল সংসদে যাবে না। বিএনপি যে সংসদে যোগ দেবে সে বিষয়ে ২০ দলের সঙ্গে কোন আলোচনাই করেনি। উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ত্যাগ করে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি এনডিপি। যদিও কিছু ডামি নেতাকে ওই ৩ দলের নতুন কমিটি করে জোটে ২০ দলের সংখ্যা ঠিক রাখে বিএনপি। এর পাশাপাশি নির্বাচনের আগেই জোটে আরও ৩টি ছোট দল ভিড়িয়ে ২৩ দল বিশিষ্ট ২০ দলীয় জোট করা হয়। এর ফলে বিজেপি চলে যাওয়ার পরও এ জোটে এখন দলের সংখ্যা ২২। যদিও বিএনপি ছাড়া এ জোটের অন্য কোন দলের তেমন অস্থিত্ব নেই। এ জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াত নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারিয়ে আরও আগে থেকেই ছন্ন ছাড়া। আর ২০ দলীয় জোট হওয়ার আগে পুরনো ৪ দলীয় জোটের মধ্যে ইসলামী ঐক্যজোটও অনেক আগেই ২০ দলীয় জোট ত্যাগ করেছেন। যদিও ডামি নেতা দিয়ে জোটে এ দলের অস্থিত্ব টিকিয়ে রেখেছে বিএনপি। ১৯৯৯ সাল থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটেই ছিল বিজেপি। প্রথমে ৪ দল ও পরে ২০ দলীয় জোট গঠন হলে বিজেপি ছিল বিএনপির অন্যতম সঙ্গী। এক সময়ের এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও ঢাকার সাবেক মেয়র নাজিউর রহমান মঞ্জু জাতীয় পার্টি থেকে বেরিয়ে বিজেপি গঠনের পর বিএনপির সঙ্গে মিলে ৪ দলীয় জোট গঠন করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে ৪ দলীয় জোটের অধীনেই অংশ নেয় বিজেপি। নাজিউর রহমান মঞ্জুর মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বিজেপির হাল ধরেন। এ জোটের যে কোন কর্মকা-ে সক্রিয় ছিলেন পার্থ। ক্ষমতায় যাওয়ার হাতিয়ার হিসেবে বিএনপি তাদের জোটসঙ্গী বিজেপিকে ব্যবহার করলেও কখনই আশানুরূপ মূল্যায়ন করেনি। তার পরও জোটের ঐক্য অটুট রেখে চলেছে বিজেপি। কিন্তু গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা মাথায় নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব দুর্দিনের সঙ্গী বিজেপিকে অবমূল্যায়ন শুরু করে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাত্র একটি আসন দেয়ার প্রতিবাদে নির্বাচনে মাঠে নামা থেকে বিরত থাকেন বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। নিজে প্রার্থী হয়েও কারো কাছে ভোট চাননি এবং নির্বাচনের দিন দুপুরেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। ২০ দলীয় জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয়ার পর ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে জোট ছাড়ার কয়েকটি কারণের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, অতিমাত্রায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টমুখী হয়ে গেছে বিএনপি। ২০ দলীয় জোটের কর্মকা- এখন শুধু সহমত, সংহতি ছাড়া তেমন কিছুই নয়। এ ছাড়া বিএনপির সংসদে যাওয়া নৈতিকভাবে ঠিক হয়নি উল্লেখ করে বিজেপি চেয়ারম্যান বলেন, সংসদে বিএনপি যে যাবে, এটা আমার দল শুধু নয়, জোটের কেউ জানে না। যেহেতু বিএনপি জোট শরিকদের সঙ্গে আলোচনা না করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাই জোট ছাড়াকে উচিত বলে মনে করি। বিভিন্ন কারণে আগে থেকেই বিএনপির প্রতি ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো ক্ষুব্ধ হলেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর এ ক্ষোভ বাড়তে থাকে। বিশেষ করে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের মতামত নেয়া হলেও ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতাদের রাখা হয় অন্ধকারে। এ কারণেই বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে থাকলে ২০ দলের বেশ ক’টি শরিক দল বিএনপির সঙ্গে আর জোটে থাকতে চায় না। তারা চায় ২০ দল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখাপেক্ষী না হয়ে আগের মতো স্বকীয় অবস্থানে ফিরে যাক। এদিকে ২৩ মে এর মধ্যে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট না ছাড়লে ২০ দল ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে লেবার পার্টি। লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ ঘোষণা দেন। মঙ্গলবার নয়াপল্টন লেবার পার্টি কার্যালয়ে ডেকে দলটির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান সাংবাদিকদের জানান, এ মাসের ২৩ তারিখের মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ছাড়াতে বিএনপিকে আল্টিমেটাম দিয়েছি।
×