ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গণফোরামের অনেক নেতা বেরিয়ে যাচ্ছেন

কামাল হোসেনের ঐক্যফ্রন্ট চাপের মুখে

প্রকাশিত: ১১:০৯, ৮ মে ২০১৯

কামাল হোসেনের ঐক্যফ্রন্ট চাপের মুখে

রাজন ভট্টাচার্য ॥ ঘরে বাইরে চাপের মুখে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। একদিকে জোটের সাংসদদের শপথ ইস্যুতে বিএনপি ছাড়া শরিক দলগুলোর নেতারা কামাল হোসেনের ওপর চরম নাখোশ। একই কারণে বিএনপির সঙ্গে গোস্যা করে ২০ দল ছেড়েছে আন্দালিব রহমান পার্থের দল জাতীয় পার্টির (বিজেপি)। বিএনপির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র ছিল এ দলটি। আগামী ২৩ মে পর্যন্ত বিএনপিকে ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার আল্টিমেটাম দিয়েছেন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম আরেক শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। এ সময়ের মধ্যে বিএনপি ঐক্যফ্রন্ট না ছাড়লে লেবার পার্টি ২৪ মে ২০ দলীয় জোট ছাড়ার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানাবে বলে জানান তিনি। এর আগে ২০ দলীয় জোটের শরিক নেতাদের অনেকে যোগ দেন বিকল্পধারায়। অন্যদিকে গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিল নতুন নেতৃত্ব এবং সাংসদদের শপথ গ্রহণকে কেন্দ্র করে দলীয় কোন্দল এখন প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। কোন্দলের কারণে সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টুসহ বেশ কয়েক নেতাকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। অনেকেই গণফোরাম থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। হঠাৎ করেই কামাল হোসেনের একক সিদ্ধান্তে গণফোরামের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার বিষয়টি নেতাকর্মীরা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন না। সব মিলিয়ে ঘরে বাইরে চাপের মুখে ঐক্যফ্রন্ট। তাই রাজনীতির মাঠে জোর আলোচনা আছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে শেষ পর্যন্ত কি তাহলে ঐক্যফ্রন্ট ভাংছে! গত ১০ বছরে রাজনীতির মাঠে বিএনপির অবস্থা যখন অনেকটা তলানীতে ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধু সরকারের সাবেক মন্ত্রী কামাল হোসেনের ওপর ভর করে জিয়ার দল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বড় রকমের উদ্দেশ্য থেকেই কামাল হোসের কাছে ভিড় করেছিল বিএনপি। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, কামাল হোসেনসহ অন্যদের নিয়ে কঠোর আন্দোলনের মুখে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা। সেইসঙ্গে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা। কিন্তু উদ্দেশ্য ভেস্তে গেছে। কার্যত কোন কিছুই সফল হয়নি বিএনপির। এদিকে জাটের সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে এমপিদের শপথ নিতে দেয়া ও সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে না পারায় বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোর সঙ্গে ড. কামাল হোসেন তথা গণফোরামের দূরত্ব দিন-দিন স্পষ্ট হচ্ছে। বাড়ছে নিজেদের মধ্যে অবিশ^াস। আছে আস্থার সঙ্কট। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ, নাগরিক ঐক্য, জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়াসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল মিলে গঠন করা হয়েছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নতুন এই রাজনৈতিক মোর্চা গঠনের পর থেকে বিরোধী শিবিরে থাকা মানুষের মনে আশার প্রদীপ জ্বলে ওঠে। এসব দলের নেতাদের ধারণা ছিল, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট প্রভাব ফেলতে পারবে। ফ্রন্টের ধাক্কায় খান খান হতে পারে সরকারী দল। কিন্তু নানা নাটকীয়তা শেষে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নজিরবিহীনভাবে ভরাডুবির মুখে পড়ে জোটটি। ৩০০ আসনের মধ্যে মাত্র আটটি আসনে জয়ের দেখা মেলে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে কারচুপির অভিযোগ এনে ভোটের দিনই নির্বাচন বয়কট করে জোটটি। ঘোষণা দেয় পুনরায় ভোটের দাবিতে আন্দোলনে নামাসহ নানা কর্মসূচীর। এরপর ফের ভোটের দাবিতে কয়েকটি কর্মসূচী দিলেও তা সফল হয়নি। এসব আন্দোলন-কর্মসূচীতে ছিল না সাধারণ নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ। ঐক্যফ্রন্টের অনেক নেতাই মনে করেন, কামাল হোসেনের সরাসরি সমর্থনে তার দলের দুই সাংসদ আগে শপথ নেন। যার ধারাবাহিকতায় বিএনপির সাংসদরাও শপথ নিতে উদ্বুদ্ধ হন। এক পর্যায়ে বিএনপি অস্তিত্ব রক্ষায় নিজেদের সাংসদদের শপথ মেনে নেন। তবে অনেকে বলছেন, যদি দলীয় সিদ্ধান্তে শপথ নেয়া হতো তাহলে কেন মীর্জা ফখরুল বাদ থাকলেন। এতেই স্পষ্ট; দলে কোন্দল থামাতেই শপথের বিষয়টি মেনে নেয়া ছাড়া বিএনপির হাতে করণীয় কিছু ছিল না। সম্প্রতি গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিলে কামাল হোসেনের পাশেই মঞ্চে বসে ছিলেন দলের প্রথম সাংসদ মোকাব্বির খান। এ নিয়ে নিজ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়। কাউন্সিল অধিবেশনে যোগ দেয়া নেতাদের বেশিরভাগই মোকাব্বিকর খানকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি তোলেন। মোকাব্বিরকে কামাল হোসেন প্রাধান্য দেয়ায় কাউন্সিল থেকে বেরিয়ে যান গণফোরামের অনেক নেতা। অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া ও ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক আসম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, কাদের সিদ্দিকীসহ অনেক নেতার মান ভাঙ্গাতে পারেননি কামাল হোসেনসহ বিএনপি নেতারা। ফলে জোট রক্ষায় অনেকটা বেকায়দায় কামাল হোসেন। জানা গেছে, ঐক্যফ্রন্টের সাংসদদের শপথ ইস্যুতে শরিক নেতারা রাগ করার পর কামাল হোসেন ভেবেছিলেন হয়তো দ্রুত সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু শরিক দলের শীর্ষ নেতারা কামাল হোসেনের সঙ্গে বেশ কয়েকদিন ধরে যোগাযোগ করছেন না। গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়াকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ, জেএসডি, নাগরিক ঐক্যের নেতাদের সঙ্গে কথা বলার। নির্বাচনের আগে গণফোরামে যোগ দিয়ে রাজনীতির পথচলা শুরু করেন অর্থনীতির গবেষক ড. রেজা কিবরিয়া। দলে যোগদানের মাত্র ১৬৯ দিনের মাথায় গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দায়িত্ব গ্রহণের পর দলকে সংগঠিত করার পাশাপাশি আগামীতে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে। নতুন সাধারণ সম্পাদক পেয়ে কামাল হোসেন স্বস্তি পেলেও দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে অস্বস্তিতে ভোগছেন। তাকে অনেকে মেনে নিতে পারছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণফোরামের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, কামাল হোসেন বিএনপির পাল্লায় পড়ে এখন বদলে গেছেন। নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেন না। বারবার মত পাল্টাচ্ছেন তিনি। এতে গণফোরামের অনেকেই ক্ষুব্ধ, হতাশ।
×