ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পর্যাপ্ত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষা মানসম্পন্ন হবে

প্রকাশিত: ১১:০৯, ৮ মে ২০১৯

পর্যাপ্ত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষা মানসম্পন্ন হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে আমরা পিছিয়ে মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেছেন, প্রতি বছর বিভিন্ন পরীক্ষায় লাখ লাখ শিক্ষার্থী পাস করে বের হচ্ছে। কিন্তু গুণগত কোন পরিবর্তন চোখে পড়ে না। যে কোন ভাইবার বোর্ডে বসলেই দেখা যায় অনর্গল ইংরেজীতে কথা বলছে, প্রযুক্তিতে নিজের দখল এনেছে কিন্তু মৌলিক শিক্ষা, গুণগত মানে পিছিয়ে তারা। এরাই মূলত আমাদের জন্য বোঝা। রাজধানীর মহাখালীতে বাংলাদেশ এ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের কার্যালয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। মন্ত্রী আশা প্রকাশ করে আরও বলেন, বর্তমান দুরবস্থা থেকে শীঘ্রই বেরিয়ে আসবে বাংলাদেশ। উচ্চ শিক্ষা পর্যাপ্ত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে অবশ্যই মানসম্পন্ন হবে। অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, বাংলাদেশ এ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক একে আজাদ চৌধুরীসহ পাবলিক ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক ও উদ্যোক্তরা। বিশেষ অতিথি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, সরকারী-বেসরকারী অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। আছে অনেক ঘাটতি। সকলের মাঝে প্রতিযোগিতা নয় বরং সমন্বয়ের মাধ্যমে এ ঘাটতি পূরণ করতে হবে। পার্শ্ববর্তী অনেক দেশ এ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের মাধ্যমে নিজেদের মানোন্নয়ন করেছে। আশা করি বাংলাদেশও দ্রুত সব বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ এ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্য, খাদ্য, স্বনির্ভরতায় বাংলাদেশ পিছিয়ে ছিল। এখন সকল বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে নানা দুর্বলতার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, উচ্চ শিক্ষার মান বাড়াতে হবে আগে। বাজারের কাটতি দেখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের মনের মতো করে ডিপার্টমেন্ট খুলতে। এগুলোতে তাদের নেই পূর্ব অভিজ্ঞতা, পড়াশোনা। এ লাগাম টেনে ধরার এখনই সময়। এ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল এখন থেকে সেই কাজটি করে যাবে। এ সময় তিনি সকলের সহযোগিতা চান। এ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান তার বক্তব্যে তুলে ধরেন বাংলাদেশের শিক্ষার মানের সঙ্কটের নানা দিক। তিনি বলেন, আমাদের দেশের উচ্চ শিক্ষার মান নিয়ে বিশ্বের অনেক দেশে প্রশ্ন আছে। দিনকে দিন সার্টিফিকেট মূল্যায়নে পিছিয়ে পড়েছি আমরা। এর মূল কারণ হল গবেষণাহীন, সেকেলে শিক্ষা, অগভীর ও অগোছালো শিক্ষা পদ্ধতি। শৃঙ্খলা ও মানোন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া দরকার। তিনি আরও বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের তথ্যমতে, উচ্চশিক্ষা মানের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিচে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। আর বৈশ্বিক পরিম-লে উচ্চশিক্ষার মানের দিক দিয়ে ১৩৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভাল অবস্থানে রয়েছে ভারত। বৈশ্বিক অবস্থানে ভারত ২৯তম। বাকি দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা ৪০, পাকিস্তান ৭১ ও নেপালের অবস্থান ৭৭তম। এটি সত্যিই উদ্বেগজনক চিত্র। স্বাধীনতার এত দিন পরও উচ্চশিক্ষার তেমন গুরুত্ব বাড়েনি এদেশে। এ খাতে চোখ দেয়নি কেউই। অধ্যাপক একে আজাদ চৌধুরী বলেন- শিক্ষার মান উন্নয়নে বিশ্বের অনেক দেশে এ কাউন্সিল গঠিত হয়েছে এবং তার সুফলও পেয়েছে। তিনি এ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের উন্নতি কামনা করেন। মানসম্মত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘এ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল আইন’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ আইন কার্যকরে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে একটি সুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে। সবাই নিজেদের অবস্থান আরও উন্নত করতে সচেষ্ট হবে বলে মনে করা হয়। শিক্ষাবিদরা বহুদিন ধরেই বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের উদ্দেশ্য হচ্ছে গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং গ্রাজুয়েট তৈরি করা। এ কারণে উচ্চশিক্ষার জন্য এ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন ছিল সময়ের দাবি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে উচ্চশিক্ষার বিস্তারে নীরব বিপ্লব ঘটেছে। উচ্চশিক্ষা স্তরে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা এখন ৩৫ লাখ। গুণগত মানসম্পন্ন গ্রাজুয়েট তৈরির ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতকরণে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন এ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন খুবই জরুরী। এমন প্রেক্ষাপটে তাই বাংলাদেশ এ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির সামনেই বক্তারা বলেন, গত অর্ধযুগে সারাদেশে ডজনখানেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। ভবিষ্যতে এ সংখ্যা আরও বাড়বে। এর ফলে বাড়বে লোকবল। তবে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হচ্ছে উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়নে এই মুহূর্তে বাস্তব, দৃশ্যত পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে এ জাতি। তাই, উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়নে নবগঠিত বাংলাদেশ এ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলকে (বিএসি) কর্মময় ও সক্রিয় করতে সবার সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। কারণ শিক্ষার মানোন্নয়ন, গবেষণা, কোয়ালিটি ও সিলেবাস কারিকুলাম ডেভেলপমেন্টে এখনই হাত না দিলে ভবিষ্যতে এর দায় আমাদের নিতে হবে।
×