ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচণ্ড গরমে কাটল রোজার প্রথম দিন

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ৮ মে ২০১৯

প্রচণ্ড গরমে কাটল  রোজার  প্রথম দিন

শাহীন রহমান ॥ প্রকৃতিতে দাবদাহ। বাতাসে জলীয় কণা মিশে তা আরও বেশি উত্তপ্ত করছে। প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরমে জীবন অতিষ্ঠ। ঠিক এমনি এক পরিবেশে শুরু হয়েছে মাহে রমজান। গরমের সঙ্গে যোগ হয়েছে রোজার পরিধিও। দিনের বেলায় প্রায় ১৫ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে প্রথম রোজায় রোজাদারদের অবস্থাও বেশ কাহিল। এমনি এক পরিস্থিতিতে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা পার করেছেন প্রথম রোজা। তবে স্বস্তির বিষয় ছিল রমজানে ঢাকায় বিদ্যুত ও পানি সমস্যায় পড়তে হয়নি তাদের। বিগত কয়েক বছর ধরেই রোজা শুরু হচ্ছে গরমে। এবারও প্রথম রোজা শুরু হয়েছে বাংলা মাসের বৈখাশের ২৪ তারিখে। প্রকৃতি বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এই সময় প্রকৃতিতে যেমন দাবদাহ বয়ে যায়। তেমনি কালবৈশাখীর আশঙ্কা থাকে প্রচুর। আবহাওয়া আচরণও বিরূপ থাকে। কয়েকদিন আগে দেশের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ঘূর্ণিঝড় ফণী। আবহাওয়াবিদরা বলছেন ফণী চলে গেলেও এর প্রভাবে সাগর থেকে উঠে আসা জলীয় কণা বাতাসে মিশে রয়েছে। ফণী কেটে যাওয়ার পরে তাপমাত্রা বেড়ে তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। ফলে বাতাসে মিশে থাকা জলীয় কণা আরও উত্তপ্ত হয়ে গরমের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রচণ্ড এই গরমকে সহ্য করেই রোজাদার রোজা পালন করতে হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, আরও প্রায় তিন থেকে চারদিন এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে প্রথম রোজার মতো আগামী আরও কয়েকদিন রোজাদারদের প্রচণ্ড রোদ ও গরমের কষ্ট মাথায় নিয়ে রোজাব্রত পালন করতে হবে। এদিকে প্রথম রোজায় সকাল থেকেই ছিল প্রকৃতির দাবদাহ। বেলা যত গড়িয়েছে রোদ ও গরমের মাত্রাও যায় বেড়ে। দিনের ভাগে আকাশে মেঘ দেখা যায়নি। অবস্থা এমন ছিল যে প্রচ- রোদে বাইরে অবস্থান করাই মুশকিল হয়ে পড়ছিল। রোদের হাত থেকে একটু প্রশান্তির আশায় অনেককে ছায়াযুক্ত পরিবেশে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রমজানের প্রথম দিনেই দেশের তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস পার হয়েছে। এদিন সর্বোচ্চ ৩৮.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে। এর বাইরে রাজধানী ঢাকাতে গত কয়েদিনের ব্যবধানে ২ থেকে তিন ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। মঙ্গলবার ঢাকায় সর্বোচ্চ ৩৫.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তারা জানায়, প্রথম রোজায় খুলনা এবং রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এছাড়া গোপালগঞ্জ এবং ফরিদপুর অঞ্চলের ওপর দিয়েও তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আগামী কয়েকদিন এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। যা রোজাদারদের জন্য কষ্টের কারণ হতে পারে। সোমবার মাহে রমজানের চাঁদ দেখা যাওয়ায় মঙ্গলবার থেকেই রোজাব্রত পালন শুরু করেছেন দেশের কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মুসলাম। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দেয়া সময়সূচী অনুযায়ী রোজাদারদের সেহরি খেতে হয়েছে রাত ৩টা ৫৩ মিনিটের মধ্যে। এরপর শুরু হয়েছে উপবাস। সারাদিন উপবাস শেষে ইফতার করতে হয়েছে সন্ধ্যা ৬টা ৩৪ মিনিটে। সেহরি থেকে ইফতার পর্যন্ত এই সময়ের ববধান ১৪ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। অর্থাৎ এবারে রমজানে রোজাদারদের প্রায় পৌণে ১৫ ঘণ্টা না খেয়ে রোজা থাকতে হচ্ছে। ইসলাম ধর্মের বিধান অনুযায়ী বিশ্বের মুসলমানরা প্রতি বছর একমাস রোজাব্রত পালন করে থাকেন। আর এটা করতে হয় আরবী হিজরী রমজান মাসে। চন্দ্রমাসের হিসাব অনুযায়ী শাবান মাস শেষে চাঁদ দেখা গেলেই রোজাব্রত শুরু করতে হবে। এই বিধান মেনেই একমাস তাদের সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দিনের বেলায় পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। শেষ রাতে সেহরি খেয়েই রোজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেহরি খাওয়ার পর ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত মানুষের শরীরের রোজা বা উপবাসের কোন প্রভাব পড়ে না। আমরা যে খাবার খাই তা পাকস্থলীতে হজম হতে এবং এর পুষ্টি শোষণ করতে শরীর প্রায় ৮ ঘণ্টা সময় নেয়। ফলে দুপুরের পর থেকেই মানুষের শরীরে ক্ষুধার পরিমাণ বাড়তে থাকে। ফলে নিয়ম অনুযায়ী রোজার প্রথম দিকে রোজাদারদের কিছুটা কষ্ট করতে হয়। তবে অভ্যাস হয়ে যেতে এক সপ্তাহ সময় লাগে। অর্থাৎ ৮ রোজা থেকে রোজাদারদের কাছে রোজাকে আর কষ্টের মনে হবে না। তখন সবকিছুকেই স্বাভাবিক মনে হবে। রোজায় ক্রমেই দিনের পরিধি বাড়ছে ॥ দিন যত যাচ্ছে রোজায় দিনের পরিধি ততই বাড়ছে। ৭ মে রোজার প্রথম দিনে দিনের পরিধি ছিল প্রায় ১৪ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। প্রথম রোজায় সেহরির শেষ সময় ছিল ৩টা ৫৩ মিনিট। আর ইফতারি ছিল ৬টা ৩৪ মিনিটে। দিনের পরিধি বড় হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই অনেকের কাছে রোজা কষ্টের মনে হয়েছে। তবে এতে রোজা রাখার প্রতি রোজাদারদের আগ্রহের কোন ভাটা পড়েনি। বরং উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করছে রোজাব্রত। প্রথম রোজার তারাবিতে মসজিদে মসজিদে ছিল মুসল্লিদের উপচেপড়া ভিড়। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীর আবর্তনের মতো চন্দ্র মাস চক্রাকারে ঘুরতে থাকে। এভাবে এক বছর ঘুরে আসতে একটি চন্দ্র মাসের সময় লাগে ৩৫ বছর ৫ দিন। রমজান মাস অন্য মাসের ন্যায় চক্রাকারে ঘুরতে থাকে। প্রতিবছরই চান্দ্র মাস ৯ থেকে ১০ দিন করে এগিয়ে আসে। চন্দ্র মাসের এই ঘূর্ণাবর্তের কারণে রমজানে এখন এমন এক জায়গায় অবস্থান করছে যেখানে রাতের তুলনায় দিনের ভাগের পরিধি অনেক বড়। রোজাদার বলছেন দিবাভাগ বড় হওয়ায় বেশি সময় ধরে পানাহার বন্ধ রাখতে হয়েছে। এ কারণে প্রথম রোজায় কষ্ট ছিল একটু বেশি। প্রথম রোজায় ঘরে ফেরার ব্যস্ততা॥ মঙ্গলবার অফিস আদালত খোলা থাকায় সকাল থেকে রাজধানীর রাস্তাঘাটে পরিবহন চাপ কিছু বেশি। তবে দুপুরের পর রাস্তায় জ্যাম অনেকটা কম ছিল। কিন্তু তিনটারর পর এক সঙ্গে ঘরে ফেরার কারণে রাস্তায় পরিবহন চাপ অনেক বেড়ে যায়। ফলে নগরবাসীর প্রথম রোজায় যানজটের কবলে পড়ে বেশ ভোগান্তিও সহ্য করতে হয়েছে। ইফতারের আগ মুহূর্তে একসঙ্গে ঘরে ফেরার তাড়ার কারণে কিছুটা ভোগান্তির মাত্রা বেড়ে যায়। কষ্ট করে বাসায় ফিরতে হয়েছে রোজাদারদের। অনেককে রাস্তা ও গাড়িতে বসেই ইফতার করতে দেখা গেছে।
×