ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পুঁজিবাজার উন্নয়নে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার সৌদি বিনিয়োগ আসছে

প্রকাশিত: ১০:৫২, ৮ মে ২০১৯

পুঁজিবাজার উন্নয়নে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার সৌদি বিনিয়োগ আসছে

এম শাহজাহান ॥ পুঁজিবাজার উন্নয়নে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার সৌদি বিনিয়োগ আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া সৌদি আরবের কাছে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব দ্রুত কার্যকর করতে বিনিয়োগ সুরক্ষা তহবিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। এই তহবিলেরও আকার নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে বাংলাদেশের ৩৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব গভীরভাবে পর্যালোচনা করছে সৌদি আরব। অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের পাশাপাশি বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে সৌদি আরব বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। ইতোমধ্যে কয়েকটি দেশের স্টক মার্কেটে সৌদি আরব বিনিয়োগ করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, সৌদি আরবের বিনিয়োগ আনতে ‘নির্বাহী মনিটরিং কমিটি’ নামে দুটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। এর মধ্যে একটি হচ্ছে প্রশাসনিক পর্যায়ে অন্যটি পলিসি পর্যায়ে কাজ করছে। এই দুটি কমিটির সমন্বয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আজ বুধবার তৃতীয় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে কয়েক বছর ধরেই এদেশে সৌদি আরবের বিনিয়োগ আনার চেষ্টা চলছে। সৌদি বাদশা এবং প্রিন্স দুজনই বাংলাদেশের ব্যাপারে আগ্রহী। এ কারণে সম্প্রতি সৌদি আরবের মন্ত্রী পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। ওই সময় বাংলাদেশের চলমান ও প্রস্তাবিত কয়েকটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সৌদি আরবের কাছে ৩৫ বিলিয়ন ডলার চাওয়া হয়। শুধু তাই নয়, পুঁজিবাজার উন্নয়নে জরুরী ভিত্তিতে দেশটির কাছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের এই প্রস্তাব ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে সৌদি আরব। তিনি বলেন, সৌদি আরব জানিয়েছে, চীনের সাংহাই ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জে তাদের বিনিয়োগ রয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকটি বড় স্টক মার্কেটে সৌদি আরব বিনিয়োগ করবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারও তাদের পছন্দ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আজ যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে সেখানে এসব বিষয় নিয়ে গভীর পর্যালোচনামূলক আলোচনা ও করণীয় নির্ধারণ করা হবে। আমিনুল ইসলাম বলেন, তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে এসে উৎপাদনশীল খাতে সৌদি আরব বিনিয়োগ বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশটির পাবলিক ইনভেস্ট ফান্ডে ২৫০ বিলিয়ন ডলার রয়েছে। এর পুরোটাই এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি সরকার। বাংলাদেশ তাদের সেই বিনিয়োগ আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ বিনিয়োগ বৃদ্ধির ভিশন ঠিক করেছে মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী অর্থনীতির এই দেশটি। সঠিক পরিকল্পনায় এই বিনিয়োগ কিভাবে, বাংলাদেশের কোন কোন খাতে করা করা হবে তা নির্দিষ্ট করে দিতে ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে বিজনেস কাউন্সিল। এই কাউন্সিলের নাম দেয়া হয়েছে ‘সৌদি-বাংলাদেশ জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি ফর ইনভেস্টমেন্ট।’ সৌদি সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এই কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডা, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, পরিকল্পনা, বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের রাখা হয়েছে। যেসব প্রকল্পে সৌদি আরবের বিনিয়োগ আসবে ॥ বিশ্বের বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সৌদি আরবের এ্যারামকো কোম্পানি বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে প্রায় সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। বাংলাদেশী মুদ্রায় এই বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় (প্রতি মা. ডলার ৮৫ টাকা ধরে) ৬৪ হাজার কোটি টাকা। অশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধন ও মজুদ ও পেট্রো কেমিক্যাল খাতে বিনিয়োগ করবে বিশ্বের শীর্ষ এই প্রতিষ্ঠানটি। সৌদি সরকারের একাধিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশটির বেসরকারী খাতের আরও ১১টি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করবে। এ উপলক্ষে সম্প্রতি সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান মনোনীত ৩৪ সদস্যের এ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করেছেন। শুধু তাই নয়, সরকারের প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে সৌদি আরব। দেশটির সরকারী প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারী খাতের আরও ১২টি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। রিয়াদে অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী বৈঠকে এ ব্যাপারে বড় ধরনের অগ্রগতি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, সৌদি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। তারা আমাদের চাহিদা জানতে চেয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কয়েকটি প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ট্রেন, ঢাকা-বরিশাল ট্রেন লাইনসহ আরও কয়েকটি প্রকল্প উল্লেখযোগ্য। তাদের কাছে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। তারা সঙ্গে সঙ্গে এ নিয়ে একটি কমিটি করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এই কমিটির প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করে পর্যালোচনামূলক রিপোর্ট দেয়ার পরই সৌদির বিনিয়োগ আসা শুরু হবে। তিনি বলেন, সৌদি আরবের বিনিয়োগ করার পর্যাপ্ত মূলধন রয়েছে। আশা করা হচ্ছে বাংলাদেশের প্রস্তাব মতো দেশটি বিনিয়োগ করবে।
×