ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কটিয়াদীতে চলন্ত বাসে নার্সকে ধর্ষণের পর হত্যা, আটক ২

প্রকাশিত: ১০:৫২, ৮ মে ২০১৯

কটিয়াদীতে চলন্ত বাসে নার্সকে ধর্ষণের পর হত্যা, আটক ২

নিজস্ব সংবাদদাতা, কিশোরগঞ্জ, ৭ মে ॥ জেলার কটিয়াদীতে স্বর্ণলতা যাত্রীবাহী বাসে শাহিনুর আক্তার ওরফে তানিয়া (২৪) নামে এক নার্সকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধর্ষণকারীরা তাকে কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার রাতে ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের গজারিয়া জামতলী নামক স্থানে। নিহত শাহিনুর কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী বাহেরচর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে। পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, শাহিনুর আক্তার ওরফে তানিয়া ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে চাকরি করেন। সোমবার বিকেলে তিনি এয়ারপোর্ট কাউন্টার থেকে টিকেট নিয়ে স্বর্ণলতা পরিবহনে ওঠেন। স্বর্ণলতা বাস মহাখালী থেকে কটিয়াদী হয়ে বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত চলাচল করে। পিরিজপুর থেকে তার বাড়ির দূরত্ব মাত্র ১০ মিনিটের রাস্তা। শাহিনুর বিকেলে বাসে ওঠার পর থেকে তার পিতা এবং ভাইদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার কথা হয়। রাত ৮টার দিকে তিনি যখন মঠখোলা বাজার অতিক্রম করেন তখন তার পিতার সঙ্গে ফোনে জানান, আধা ঘণ্টার মধ্যে বাড়ি পৌঁছতে পারবেন। তার পিতা তখন এশা এবং তারাবির নামাজের জন্য মসজিদে যাচ্ছেন। সাড়ে আটটার দিকে বাসটি কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছলে তখনও তার ভাইয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়, বলেন আর মাত্র পাঁচ সাত মিনিট লাগবে পিরিজপুর পৌঁছতে। কিন্তু কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে বাসের সমস্ত যাত্রী নেমে যায়। গাড়ির ড্রাইভার এবং হেলপার কৌশলে কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড থেকে তার সঙ্গী চার-পাঁচজনকে যাত্রীবেশে গাড়িতে তোলেন। পরে কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড পার হয়ে দুই কিলোমিটার দূরবর্তী ভৈবর-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের গজারিয়া জামতলী নামক নির্জন স্থানে শাহিনুরকে জোরপূর্বক চলন্ত গাড়িতে ধর্ষণ করে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করেছে বলে স্বজনরা ধারণা করছেন। ধর্ষণকারীরা রাত পৌনে এগারোটার দিকে কটিয়াদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুর্ঘটনার কথা বলে তানিয়ার লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। হাসপাতাল রেজিস্ট্রার সূত্রে আনয়নকারীর নাম পাওয়া যায় আল আমিন, পিতা ওয়াহিদুজ্জামান, গ্রাম ভেঙ্গারদি, কাপাসিয়া, গাজীপুর। এদিকে পাঁচ মিনিটের কথা বলে দীর্ঘ সময় পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ডে স্বর্ণলতা বাস না পৌঁছায় তানিয়ার ভাই মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে গভীর রাতে সংবাদ পায় শাহিনুরের লাশ কটিয়াদী হাসপাতাল থেকে থানায় নিয়ে রাখা হয়েছে। তার ভাই কফিল উদ্দিন সুমন জানায়, শাহিনুরের সঙ্গে একটি এলইডি ১৯ ইঞ্চি টেলিভিশন, একটি স্যামসাং এনড্রয়েড মোবাইল ফোন ও বেতনের ১৫-১৬ হাজার টাকা ছিল। কটিয়াদী থানার ওসি (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনায় ইতোমধ্যে ড্রাইভার নূরুজ্জামান (৩৯) ও হেলপার লালন মিয়াকে (৩৩) আটক করা হয়েছে। শাহিনুরের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, ব্যাগ, কাপড় চোপড় পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তানিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বিস্তারিত প্রতিবেদন চাওয়া হবে। তবে তার হাত, মুখ ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, মামলার প্রস্তুতি চলছে। ঘটনাটি যেহেতু বাজিতপুর এলাকায় ঘটিত মামলাটি বাজিতপুর থানায় রেকর্ড করা হবে। সন্দেহভাজনদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×