ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভেজাল প্রতিরোধ ও বাজারে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মাঠে ঢাকার দুই মেয়র

প্রকাশিত: ১০:৫২, ৮ মে ২০১৯

ভেজাল প্রতিরোধ ও বাজারে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মাঠে ঢাকার দুই মেয়র

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রমজানে ইফতারি ও খাবারে ভেজাল প্রতিরোধ এবং বাজারে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছেন ঢাকার দুই মেয়র। পহেলা রমজান থেকেই ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন মাঠে নেমে কাজ করছেন। কোন ব্যবসায়ী ইফতার সামগ্রীসহ নিত্যপণ্যে ভেজাল বা পচা বাসি খাবার দিলে তাকে কারাগারে ঈদ কাটাতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাঈদ খোকন। তিনি বলেন, কোন অপরাধীকেই ছাড় দেয়া হবে না। ইফতার ও সেহরির খাবারের মান নিয়ন্ত্রণের পাঁচটি মনিটরিং টিমের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন তিনি। অপরদিকে আতিকুল ইসলাম বলেন, রমজানে কোনক্রমেই পণ্যের মূল্য বাড়াতে পারবে না। বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রতিটি পণ্যের মূল্য তালিকা টানিয়ে রাখা বাধ্যতামূলক। এাছাড়া নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত মূল্য গ্রহণ কিংবা ভেজাল দ্রব্য বিক্রয় করার চেষ্টা করা হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে হুমকি দেন মেয়র। এদিকে রমজান উপলক্ষে রাজধানীর কোথাও কোন ধরনের চাঁদাবাজি হলে যে কেউ পুলিশকে জানালে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। রমজানে ঢাকা মহানগরের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে মন্ত্রী এ ঘোষণা দেন। মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি ও মহানগর দোকান মালিক সমিতি আয়োজিত মাহে রমজান উপলক্ষে পরিমিত ক্রয় ক্যাম্পেন প্রোগ্রাম ২০১৯ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও মহানগর দোকান মালিক সমিতির তৌফিক এহেসানের পরিচালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে মেয়র আতিকুল ইসলামা ছাড়াও এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই চাঁদাবাজমুক্ত পরিবেশে সবাই ব্যবসা করবেন, ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের পণ্য কিনবেন। তিনি বলেন, এক সময় রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় প্রায় সময়ই মানুষ খুন হতো, ব্যবসায়ীরা শান্তিতে ব্যবসা করতে পারতেন না। আজ ব্যবসায় শান্তি ফিরে এসেছে, ক্রেতার টাকাও ছিনতাই হয় না। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, এখনও কিছু সমস্যা রয়ে গেছে, এটা ব্যবসায়ীদের ব্যর্থতা। তারা যদি প্রশাসনকে না জানান তাহলে কিভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোথাও কোন ধরনের চাঁদাবাজি হলে একবার সাহস করে আমাদের জানান, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন ধরনের চাঁদাবাজকে আমরা প্রশ্রয় দেব না। সর্বদা সব জায়গায় শান্তি থাকবে, এটাই সরকারের প্রত্যাশা। এখনও কিছু সমস্যা রয়ে গেছে, এটা ব্যবসায়ীদের ব্যর্থতা। তারা যদি প্রশাসনকে না জানান তাহলে কিভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এক সময় রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় প্রায় সময়ই মানুষ খুন হতো, ব্যবসায়ীরা শান্তিতে ব্যবসা করতে পারতেন না। আজ ব্যবসায় শান্তি ফিরে এসেছে, ক্রেতার টাকাও ছিনতাই হয় না। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, বিশ্বের সব জায়গায় রমজান এলে পণ্যের দাম কমে, আমাদের দেশে বেড়ে যায়। আবার এই রমজানে খাদ্যে ভেজাল নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা লাগে। এই সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসার সময় এসেছে। এখন রমজান মাস আসা মানেই অবশ্যই পণ্যের দাম কমতে হবে। মেয়র বলেন, ভেজালমুক্ত, সঠিক ওজনে এবং কম দামে পণ্য বিক্রয় করুন। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে মেয়র বলেন, পৃথিবীর অন্য দেশে উৎসব-আনন্দে পণ্যের দাম কমে, অথচ কোন কারণ ছাড়াই বাংলাদেশে দাম বাড়ানোর একটা প্রবণতা অসাধু ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা যায়, যা একেবারে কাম্য নয়। রমজান এবাদতের মাস। ধর্মীয় ও নৈতিকতার দিক থেকেও এটি উচিত নয়। মেয়র আসাধু ব্যবসায়ীদের নিজেদের বিবেক জাগ্রত করার আহ্বান জানান। ডিএনসিসি মেয়র বলেন, প্রতিটি দোকানে মূল্যতালিকা প্রকাশ্যে প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক। নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত মূল্য গ্রহণ কিংবা ভেজাল দ্রব্য বিক্রয় করার চেষ্টা করা হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি ব্যবসায়ীদের পরিমিত ক্রয় ক্যাম্পেন প্রোগ্রামকে সাধুবাদ জানান। একইসঙ্গে ডিএনসিসির ৪৩ মার্কেটে এই ক্যাম্পেনের আয়োজনের আহ্বান জানান। মেয়র বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে কারওয়ান বাজার থেকে বাজার স্থানান্তর করতে চাই। এ বাজারের কয়েকটি মার্কেট শতভাগ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। দুর্ঘটনায় কোন প্রাণ ঝরে যাক এটা আমরা চাই না। পরিমিত ক্রয় ক্যাম্পেন প্রোগ্রামে মাত্র ১৫০ টাকায় দুই দিনের ইফতারের কাঁচা বাজার পাওয়া যাবে। যার মধ্যে রয়েছে শশা ৫০০ গ্রাম, বেগুন ৫০০ গ্রাম, লেবু ৪টি, আলু ১ কেজি, পেঁয়াজ ১ কেজি, কাঁচামরিচ ৩০০ গ্রাম, টমেটো ৫০০ গ্রাম এবং গাজর ৫০০ গ্রাম। অনুষ্ঠানে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, খাদ্যে ভেজালকারীরা খুনী, তাদের প্রতিরোধ করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেছেন, ভেজাল ব্যবসায়ীদের সার্জারি করার মতো আলাদা করে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া হবে। ভেজাল প্রতিরোধ তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। বেনজীর আহমেদ বলেন, রমজান আসা মানেই পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া আমরা এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। তাই চলতি রমজানে পণ্যের দামে এক টাকা হলেও কমবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ব্যবসাবান্ধব, জনবান্ধব। তার সময়ে এ ধরনের কার্যক্রম মানা হবে না। কোন ধরনের চাঁদাবাজির সঙ্গে আপোস নয়। কোন ধরনের ভয়ের কিছু নেই। আমাদের জানান, আপনার নিরাপত্তায় সর্বদা পাশে থাকব। ডিএনসিসি ॥ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেছেন, রমজান মাসে কোন ব্যবসায়ী যদি ইফতারি সামগ্রীসহ খাদ্যে ভেজাল দেন কিংবা পচা বাসি খাবার বিক্রি করেন তাহলে তাকে কারাগারে ঈদ কাটাতে হতে পারে। তাই এখনই সাবধান হোন। মঙ্গলবার বিকেলে পুরান ঢাকার চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজার পরিদর্শনে এসে মেয়র অসাধু ব্যবসায়ীদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দেন মেয়র। পহেলা রমজান থেকেই বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও ভোজালমুক্ত নাগরিকদের পৌঁছে দিতে মাঠে নামেন মেয়র। সাঈদ খোন বলেন, শুধু জরিমানা করেই শেষ নয়, অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়মিত আইনে কারাদ-ও দেয়া হবে। কোনক্রমেই কোন অসাধু ব্যবসায়ীকে ছাড় দেয়া হবে না। একইসঙ্গে ইফতার ও সেহরির খাবারের মান নিয়ন্ত্রণের পাঁচটি মনিটরিং টিমের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন সাঈদ খোকন। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, আপনারা এই পবিত্র মাসে কাউকে পচা বাসি খাবার খাওয়াবেন না। যদি এমন করেন তাহলে ঈদের মতো আনন্দের দিনটি আপনাদের কারাগারে কাটাতে হবে। সাঈদ খোকন বলেন, ইফতার ও সেহরির খাবারের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য বাজারে পাঁচটি মনিটরিং টিম বাজারে কাজ করবে। এই টিমে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ছাড়াও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), নিরাপদ খাদ্য অধিদফতর এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) প্রতিনিধিরা থাকবেন। এই টিমের সদস্যরা নিশ্চিত করবেন যাতে কেউ ভেজাল, পচা, বাসি খাবার বিক্রি করতে না পারে। কেউ যদি এমন খাবার বিক্রি করেন তাকে শনাক্ত করে জেল-জরিমানা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া কেউ যাতে কোনভাবে দাম বেশি না নিতে পারে সেজন্য এই মনিটরিং কমিটি কাজ করবে। মেয়র বলেন, ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে আমি বলতে চাই, আপনারা রমজানের পবিত্রতা বজায় রাখুন, মানসম্মত খাবার বিক্রি করুন। নিজে সুস্থ থাকুন, আপনার আত্মীয়-স্বজন ও নগরবাসীকে সুস্থ রাখতে আমাদের সহায়তা করুন। আপনারা যদি মানসম্মত খাবার পরিবেশন করেন তাহলে আমরাও আপনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।
×