ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সাতক্ষীরা হাসপাতাল চলছে জোড়াতালি দিয়ে

প্রকাশিত: ০৯:০০, ৮ মে ২০১৯

সাতক্ষীরা হাসপাতাল চলছে জোড়াতালি দিয়ে

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ বহুমুখী সমস্যার মধ্যে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল চলছে জোড়া তালি দিয়ে। ২৭টি চিকিৎসক পদের মধ্যে ১৬ চিকিৎসকের পদ শূন্য। শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই দেড় বছর ধরে। চক্ষু বিশেষজ্ঞ নেই ৪ বছর। নাক কান গলা ও অর্থপেডিক্স বিশেষজ্ঞ নেই দেড়বছর। এনেসথেশিয়া ডাক্তার নেই ৩ বছর। মেডিক্যাল অফিসারের ৬টি পদের বিপরীতে আছে ২ জন। আরএমও ছাড়াই হাসপাতালটি চলছে ২ মাস ধরে। আউটডোরে প্রতিদিন কমপক্ষে ৪শ’ থেকে ৫শ’ রোগীর সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় ২ জন মেডিক্যাল অফিসারকে। আবার রোগীরা টিকেট কেটে সকাল ৮টায় চিকিৎসকদের রুমের সামনে বসে থাকলেও ডাক্তার আসেন সকাল সাড়ে ৯টার পর। এসব সাতক্ষীরা জেলা হাসপাতালের নিত্যদিনের চিত্র হলেও কর্মকর্তারা নির্বিকার। ৯৮ সালে সাতক্ষীরা আধুনিক হাসপাতাল ৫০ শয্যা থেকে ১শ’ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ চালু হওয়ার পর এই হাসপাতালের বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা চলে গেছেন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসকরা বদলি হলেও নতুন করে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সদর হাসপাতালে পোস্টিং দেয়া হয়নি। ফলে রোগীর চাপ আগের মতো থাকলেও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। হাসপাতালে ইকো মেশিন থাকলেও এটি চালানোর চিকিৎসক নেই। আলট্রাসনো কাজ চলে জোড়াতালি দিয়ে। সিটি স্ক্যান মেশিন চালানো হয় এক্সরে মেশিন অপারেটর দিয়ে। শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় হাসপাতালের এই ওয়ার্ড চলছে জোড়াতালি দিয়ে। মেডিক্যাল কলেজে পোস্টিং সহকারী অধ্যাপক ডাঃ শামসুর রহমান কলেজের ডিউটি সেরে প্রতিদিন একবার আসেন সদর হাসপাতালে ভর্তি শিশু রোগীদের দেখার জন্য। ওয়ার্ড রাউন্ড দেয়ার পাশাপাশি তার ব্যক্তি উদ্যোগে এখানে গড়ে তোলা বেবি কেয়ার ইউনিটটিও দেখভাল করেন শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ শামসুর রহমান। তবে হাসপাতালে এনেসথেশিয়া ডাক্তার না থাকায় হাসপাতালের অপারেশন কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। হাসপাতালটি ১শ’ শয্যার হলেও গড়ে প্রতিদিন রোগী থাকে প্রায় দেড়শ’ থেকে ২শ’। নার্স সঙ্কট না থাকলেও সীমিত চিকিৎসক দিয়ে এই ভর্তি রোগীদের সামাল দিতে হয় প্রতিদিন। এই হাসপাতালে রোগীর ভিজিটরের সংখ্যা অনেক বেশি। রোগীর বেড দখল করে থাকেন রোগীর স্বজনরা। এ কারণে হাসপাতাল ও ওয়ার্ড পরিচ্ছন্ন রাখা কঠিন বলে মনে করেন হাসপাতাল প্রশাসন। জেলা সিভিল সার্জন ও হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম গত ৯ এপ্রিল উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো রিপোর্টে ২৭টি মঞ্জুরীকৃত পদের বিপরীতে ১৬টি পদ শূন্য দেখিয়ে জরুরী কনসালটেন্ট পেস্টিংয়ের জন্য রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। রিপোর্টে শূন্য পদগুলোর মধ্যে রয়েছে সার্জারি সিনিয়র কনসালটেন্ট, সিনিয়র কসসালটেন্ট অর্থ সার্জারি, সিনিয়র কনসালটেন্ট চক্ষু, সিনিয়র কনসালটেন্ট এনেসথেসিয়া, জুনিয়ার কনসালটেন্ট পেডিয়েট্রিক্স, ইনএনটি, জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারি, কনসালটেন্ট প্যাথলজি, আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার, মেডিক্যাল অফিসার জরুরী বিভাগ। সিভিল সার্জন ও হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ রফিকুল ইসলাম হাসপাতালের সার্বিক সমস্যার কথা উল্লেখ করে হাসপাতাল জোড়াতালি দিয়ে চলার কথা জানিয়ে বলেন, প্রতি মাসে উর্ধতন কর্তপক্ষকে বিষয়টি জানানো হলেও সমস্যা মিটছে না। বিশেষ করে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসকের পদটি পূরণের জন্য জরুরীভাবে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও এই সমস্যা গত ২ মাসেও সমাধান হয়নি বলে তিনি জানান।
×