ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হুমকিতে জনবসতি ॥ পদ্মাপাড়ে উত্তেজনা

প্রকাশিত: ০৯:০০, ৮ মে ২০১৯

হুমকিতে জনবসতি ॥  পদ্মাপাড়ে উত্তেজনা

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা থেকে জানান, সুজানগনর উপজেলার পদ্মা নদীর বালুমহল সরকারীভাবে ইজারা দেয়া না হলেও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মচ্ছব চলছে। সুজানগর উপজেলা এবং ধাওয়াপাড়া ও কালুখালীসহ পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ৩০- ৩৫টি ড্রেজার দিয়ে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার বালু তোলা হচ্ছে। এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে পদ্মার ভাঙ্গনে বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে নদীপাড়ের হাজারও পরিবার এবং নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে শত শত বিঘা ফসলি জমি। এ বালু তোলার সঙ্গে পাবনা আর রাজবাড়ীর শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তা সরাসরি জড়িত থাকার কথা এলাকায় প্রচার করা হচ্ছে। প্রশাসনের নিরব ভূমিকায় সাধারণ মানুষ যেন তাই বিশ্বাস করছে। আর এ ঘটনায় সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। এ নিয়ে নদীপাড়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। জানা যায়, সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ, সাতবাড়ীয়া, ভায়না ইউনিয়ন ও পৌরসভার সীমান্তবর্তী এবং জৌকুড়া, ধাওয়াপাড়া, কালুখালী প্রস্তাবিত সেনানিবাস এলাকায় পদ্মায় প্রতিদিন অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা ড্রেজার দিয়ে এ বালু তোলা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ জানালেও বালু উত্তোলনকারীরা তা মানছেন না। এনিয়ে নদী পাড়ের এলাকায় কয়েক মাস ধরে তীব্র উত্তেজনা চলছে। গত প্রায় ২ মাস পূর্বে সুজানগর ও আশপাশের যুবলীগ কর্মীরা নাজিরগঞ্জ জমায়েত হয়ে বালু উত্তোলনকারীদের বাধা দিলে ডিবি পুলিশ তাদের নির্বিচারে পিটিয়ে এলাকা ছাড়া করে। তাদের অন্তত ১০টি মোটরসাইকেল আটক করে। সোমবার সাতবাড়ীয়া নদীপাড়ের মানুষ একত্রিত হয়ে বালু উত্তোলন কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের ধাওয়া দিলে তারা বালু উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত ড্রেজার মেশিনসহ অন্য জিনিসপত্র নিয়ে রাজবাড়ী অভিমুখে পালিয়ে যায়। এদিকে বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রভাবশালীদের নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার কোথাও বালুর ইজারা নেই। কিন্তু আইনের কোন তোয়াক্কা না করেই অবৈধভাবে বালু ব্যবসায়ীরা বালু উত্তোলন করছে এবং রাস্তার পাশে স্তূপ করে রেখে বিক্রি করছে। সরজমিনে দেখা যায়, সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের নাজিরগঞ্জ বাজারের আশপাশে এলাকাসহ বরখাপুর, বুলচন্দ্রপুর, সাতবাড়ীয়া ইউনিয়নের সাতবাড়ীয়া বাজার থেকে শ্যামনগর ও ভাটপাড়া রাস্তার পাশে এবং রাজবাড়ী জেলার জৌকুড়া, ধাওয়াপাড়া, কালুখালী ও প্রস্তাবিত সেনানিবাস এলাকার বিভিন্নস্থানে বালু স্তূপাকারে রাখার কারণে যানবাহন চলাচলেও মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। উল্লেখ্য, বালুমহাল এবং মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অনুযায়ী পাম্প, ড্রেজিং বা অন্য কোন মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। একই আইনের (৩) উপধারা (২) উল্লেখ রয়েছে ড্রেজিং কার্যক্রমে বাল্কহেড বা প্রচলিত বলগেট ড্রেজার ব্যবহার করা যাবে না। এবং সর্বোপরি এভাবে বালু উত্তোলন আইনত দ-নীয় অপরাধ বলে বিবেচ্য হবে। এ আইন অমান্য করলে সেই ব্যক্তি বা তাদের সহায়তাকারী কোন ব্যক্তির অনুর্ধ-২ বৎসর কারাদ- বা ৫০ হাজার টাকা হতে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদ- বা উভয়দ-ে দ-িত হবেন। কিন্তু আইন থাকলেও প্রভাবশালী বালু সিন্ডিকেটের ক্ষেত্রে তা প্রশাসন উপেক্ষা করছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠছে। সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজিৎ দেবনাথ জানান, যেখানে বালু উত্তোলন করা হয় খবর পেলে আমরা সেখানে অভিযানে যাই। এবং ইতোমধ্যে কয়েকবার মোবাইল কোর্টও পরিচালনা করা হয়েছে। বালু উত্তোলনকারীরা অনেক সময় তাদের আসার খবর শুনে পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন জানান, কেউ অবৈধভাবে ওই সব কার্যক্রম করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×