ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভৈরব নদের প্লাবন ভূমিতে শত স্থাপনা

প্রকাশিত: ১৩:০৪, ৭ মে ২০১৯

 ভৈরব নদের প্লাবন ভূমিতে শত স্থাপনা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ ভৈরব নদে রাজারহাট অংশে প্লাবন ভূমিতে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে এ্যারিস্ট ফুডসহ কয়েকটি বড় কোম্পানির বিশাল বিশাল স্থাপনা। অন্যান্য অংশের প্লাবন ভূমিতেও শতাধিক স্থাপনা। অপরদিকে, ভূমির অভাবে রাজাহাটের একটি অংশ খনন করা হচ্ছে অনেকটা খালের মতো করে। ওই অংশে ১শ’ ৭০ ফুট খননের টার্গেট থাকলেও সেখানে খাস জমি ১৪০ ফুট পাওয়ায় সরু করে খনন কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এলাকার মানুষের দাবি, সবকালেই দুষ্টু লোকের বিচরণ ছিল, কাগজপত্র বানাতেই পারে। তবে সত্য হলো, চরম দৃষ্টিকটুভাবে নদীর মধ্যে রয়েছে ভবনগুলো। পানি আইন প্রয়োগ করে এই স্থাপনাগুলো উচ্ছেদে যশোর জেলা প্রশাসনের ‘ডাইরেক্ট এ্যাকশান’ চেয়েছেন তারা। যদিও জেলা প্রশাসক ও পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী নিশ্চিত করেছেন, নদী রক্ষায় আইনগতভাবে যা যা করা প্রয়োজন তাই তাই করা হবে। গত বছরের মার্চ থেকে যশোরের কনেজপুর থেকে কাক্সিক্ষত ভৈরব খনন শুরু হলেও আজও লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। খনন কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে যশোরাঞ্চলের গণমানুষের প্রাণের দাবি পূরণ হওয়ার আশা সঞ্চার হলেও ভৈরবে বিভিন্ন অংশ সরু করে খনন করা হচ্ছে। শতাধিক ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান ভৈরবের প্লাবন ভূমিতে স্থাপনা করে ১৯২৬ সালের ম্যাপ হাজির করে খনন কাজ বাধাগ্রস্ত করছে। কাক্সিক্ষত মাপে খননে সংশয় দেখা দিয়েছে। শহরের অংশের ১০২ স্থাপনা উচ্ছেদ সম্ভব হলেও রাজারহাটে নদী ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে এ্যারিস্ট ফুড এক্সপোর্ট লিমিটেডের কয়েকটি ভবন মেসার্স ওয়াসা ফাউন্ড্রি, মেঘনা ফাউন্ডেশনসহ ডজনখানেক স্থাপনা। এই স্থাপনাগুলো বহাল থাকায় কাক্সিক্ষতভাবে খনন এগুচ্ছে না। একই অবস্থা যশোর শহরের আরও কয়েকটি অংশে। যে কারণে আগামী জুন ২০১৯-এর মধ্যে বেশিরভাগ কাজ সম্পন্ন করার টার্গেটটি ভূলুণ্ঠিত হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত প্রকল্প ভৈরব নদ খনন সুষ্ঠুভাবে ত্বরান্বিত করতে ২৮ মার্চ ভৈরব নদের শহরের অংশের দু’পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করে জেলা প্রশাসন। প্রথম দিনের উচ্ছেদ অভিযানে ১শ’ ২ স্থাপনা সমতলের সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়। বিশেষ করে দড়াটানায় ভৈরব নদের দক্ষিণ পাড়ের অর্ধশত বইয়ের দোকান ও অন্য বিভিন্ন ভার্সনের প্রতিষ্ঠানও গুড়িয়ে দেয়া হয়। উচ্ছেদ তালিকায় সড়ক ও জনপথ, পাউবো ও জেলা প্রশাসনের খাস জায়গা মিলিয়ে রাখা হয় ২৯৬ স্থাপনা। প্রথম দফার অভিযানে ১০২ স্থাপনা উচ্ছেদ করার পর বাকি থাকে আরও ১৯৪ স্থাপনা। এপারের শতাধিক ভবন গুড়িয়ে দেয়ার পর প্রশ্ন ওঠে, উত্তরপাড়সহ দু’পাড়ের বাকি অবৈধ ভবনগুলো কি হবে? ওগুলো ভাঙা হবে তো? কয়েকটি উঁচু ও বিশাল আয়তনের ভবনের দিকেও জনতা দৃষ্টি ফেলে। যশোরের রাজারহাট অংশের ভৈরব নদের পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এ্যারিস্ট ফুড এক্সপোর্ট লিমিটেড, মেসার্স ওয়াসা ফাউন্ড্রি, মেঘনা ফাউন্ডেশনসহ ডজনখানেক প্রতিষ্ঠানের দিকে আঙ্গুল তোলেন ওই এলাকার লোকজন। তাদের অভিযোগ, ওই স্থাপনাগুলো না ভেঙ্গে তাদের বিশেষ ছাড় দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে ৩০ এপ্রিল সকালে রাজারহাট এলাকার লোকজন ওই তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিশাল বিশাল আয়তনের ভবনগুলো ভেঙ্গে দেয়ার দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। তাদের অভিযোগ, পাউবো ও জেলা প্রশাসনের সার্ভেয়ারদের ম্যানেজ করা হয়েছে। রাজারহাটে আব্দুল মোনায়েমের অনুকূলে এ্যারিস্ট ফুড ও আব্দুল ওয়াহাব, সেলিম খান ওরফে মবিল সেলিমের ওয়াসা ফাউন্ড্রিকে বাঁচাতে গিয়ে নদ সরু করে খনন করা হয়েছে। ভীষণ দৃষ্টিকটু দেখা যাচ্ছে ওই অংশটি। এ ব্যাপারে এলাকার অনেকে জানান, তারা শুনেছেন ওয়াসা ফাউন্ড্রি ও এ্যারিস্ট ফুড সময় চেয়েছে পাউবোর কাছে। আগের কালের দুষ্টু লোকেরা ১৯২৬ সালের ম্যাপ জালিয়াতি করেছে। সেই জমি কিনে এ্যারিস্ট ফুড কারখানা করেছে। যতই ম্যাপ দেখাক তারা নদীর জমিতে তাদের স্থাপনা বেঁধেছে এটাই চির সত্য। এ্যারিস্ট ফুডের মালিক আব্দুল মোনায়েম রনকুল জানান, তিনিসহ তার ৩ ভাই মূলত মালিক। তারা বৈধ কাগজপত্র দেখেই জমি কিনে কোম্পানি করেছেন। ১৯২৬ ও ১৯৬২ সালের রের্কড ও ম্যাপ অনুযায়ী তারা বৈধ। নদীর জমিতে তারা নেই, বরং নদীর মধ্যেও তাদের জমি আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের সার্ভেয়াররা কয়েকদফা মাপজোঁক করেও তারা স্বীকার করে গেছেন। কাজেই তাদের স্থাপনা ভেঙ্গে নেয়া বা ভেঙ্গে দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এ বিষয়ে ওয়াসা ফাউন্ড্রির অংশীদার আবু বক্কর ও ক্যাশিয়ার কালীদাস বিশ্বাস জানিয়েছেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের মাত্র ৮ ফুট নদীর জায়গায় পড়েছে। তারা সময় চেয়েছেন, দ্রুতই ওই ৮ ফুট ভেঙ্গে নেবেন। হাজী লোকমান হোসেন জানান, তার দোকানও নদের জমিতে পড়েছে। তিনিও ভেঙ্গে নেবেন। যশোরের জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, অবৈধ দখলদারদের বহাল রাখার কোন সুযোগই নেই। তবে রাজারহাট অংশের ব্যাপারে তার কাছে পরিষ্কার তথ্য নেই। নদীর প্রয়োজনে যা যা করণীয় তা করা হবে।
×