ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রোটিয়া ব্যাটিং পরামর্শক কন্ডিশনকে প্রতিপক্ষ ভাবতে নারাজ

ক্রিকেটারদের দক্ষতার প্রয়োগ দেখতে চান ম্যাকেঞ্জি

প্রকাশিত: ১২:৫৪, ৭ মে ২০১৯

ক্রিকেটারদের দক্ষতার প্রয়োগ দেখতে চান ম্যাকেঞ্জি

মোঃ মামুন রশীদ ॥ আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ আর বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশ দল দেশে অনুশীলন করেছে গরমে আবহাওয়ায়। ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের ওপর তাপমাত্রায় অনুশীলনের পর আয়ারল্যান্ডে গিয়ে ১০ ডিগ্রীর নিচে তাপমাত্রা পেয়েছে বাংলাদেশ দল। খাপ খাওয়াতে যে সমস্যা হয়েছে সেটিই প্রস্তুতি ম্যাচে আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলের কাছে বড় পরাজয়ের কারণ হিসেবে দেখছেন অনেকে। কিন্তু ব্যাটিং পরামর্শক নেইল ম্যাকেঞ্জি মনে করছেন যে কোন কন্ডিশনে ভাল করার অন্যতম উপায় ক্রিকেটারদের দক্ষতার প্রতিফলন ঘটানো। উইকেট বিষয়ে জানা এবং প্রতিপক্ষ সম্পর্কে জ্ঞান থাকলেও ভাল করা সম্ভব হয় সঠিক পরিকল্পনার বাস্তবায়নে। ম্যাকেঞ্জির বিশ্বাস আয়ারল্যান্ড-ইংল্যান্ডে প্রচুর খেলার অভিজ্ঞতা থাকা পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ ও প্রধান কোচ স্টিভ রোডস ইংলিশ হওয়ার কারণে তা দলের জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখবে। ম্যাকেঞ্জিরও এই পরিবেশ সম্পর্কে বেশ ভাল জানা আছে। তাদের অভিজ্ঞতার বিষয়গুলো ক্রিকেটারদের সঙ্গে ভাগাভাগি করলে এবং নিজ নিজ দক্ষতা ক্রিকেটাররা ঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারলে সাফল্য ধরা দেবে বাংলাদেশ দলকে। এবার দীর্ঘ সময় ধরে টানা ক্রিকেটের মধ্যে থাকতে হবে বাংলাদেশ দলকে। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের কিছুদিন পরই ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ। কন্ডিশন একই, তীব্র গরম থেকে সেখানে গিয়ে তীব্র ঠা-া। খাপ খেয়ে ওঠাই মূল চ্যালেঞ্জ মাশরাফি বিন মর্তুজাদের জন্য। তবে এই কন্ডিশনের সঙ্গে বর্তমান দলের অনেকেই ভালভাবে পরিচিত। সে কারণে ভাল কিছু করার জন্য কন্ডিশনকে দায়ী করতে নারাজ ম্যাকেঞ্জি। তিনি মনে করেন উইকেট ও প্রতিপক্ষ সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেয়ার পাশাপাশি নিজেদের দক্ষতার প্রয়োগে যে কোন কন্ডিশনে সফল হওয়া কঠিন কিছু নয়। কিন্তু সাবেক এ দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান এমনটা ভাবলেও প্রস্তুতি ম্যাচে আইরিশ ‘এ’ দলের বিরুদ্ধে বাজে ব্যাটিং-বোলিং নৈপুণ্যে ৮৮ রানের বড় পরাজয়ে শঙ্কার মেঘ জমেছে বাংলাদেশ দলের ভাল কিছু করা নিয়ে। এ বিষয়ে ম্যাকেঞ্জি বলেন, ‘আমরা কিছুদিন আগেই নিউজিল্যান্ড থেকে এসেছি। সেখানেও ঠা া। আর ছেলেরা জানে কিভাবে ভিন্ন কন্ডিশনে খেলতে হয়। আমার মনে হয় সমস্যা তাপমাত্রার নয়। বিষয়টি উইকেটের। এখানে আপনার লাইন-লেন্থ বদলে ফেলতে হয়। সঙ্গে সঙ্গে রান করার জায়গাও বদলে ফেলতে হয়। এটা আবহাওয়া না- উইকেট, কন্ডিশন ও বিভিন্ন বোলার, যাদের আপনাকে সামলাতে হবে।’ বিশ্বকাপের আগে অবশ্য কিভাবে খেলতে হবে তার সম্যক ধারণা বাংলাদেশ নিতে পারবে ত্রিদেশীয় সিরিজে। চারটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ আছে এখানে। ফাইনালে উঠতে পারলে আরেকটি বাড়তি ম্যাচ ছাড়াও বিশ্বকাপ প্রস্তুতির ম্যাচ আছে দুটি। ভারত ও পাকিস্তানের মতো দুই ক্রিকেট পরাশক্তির বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলবেন মাশরাফিরা। ম্যাকেঞ্জি আরও বলেন, ‘ঘরোয়া ৫০ ওভারের প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত ছিল অনেকে, যারা ছিল না টুর্নামেন্টে, ওরা ব্যস্ত ছিল অনুশীলন ক্যাম্পে। এখানে আসার আগে পুরো স্কোয়াডের সবাই সেখানে ছিল। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার জন্য ভাল বলা চলে। এখনও এক মাস আছে বিশ্বকাপের। এখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আছে, আয়ারল্যান্ড আছে, কাজটা সহজ হবে না। তবে বড় আসরের আগে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার সুযোগটা ভালই কাজে লাগবে।’ আর বাংলাদেশ দলের কোচিং স্টাফ হিসেবে এই মুহূর্তে যারা আছেন তাদের সবারই এই কন্ডিশন সম্পর্কে খুব ভাল ধারণা আছে। ওয়ালশ তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের বাইরেও কাউন্টি ক্রিকেটে দীর্ঘদিন খেলেছেন ইংল্যান্ডে। রোডস তো ইংল্যান্ডেরই মানুষ। ম্যাকেঞ্জি নিজেও খেলেছেন ইংল্যান্ডে। তাদের অভিজ্ঞতাগুলো দলের ক্রিকেটারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। এ বিষয়ে ম্যাকেঞ্জি বলেন, ‘আমরা ভিন্ন টেকনিক নিয়ে কাজ করছি। আমাদের প্রধান কোচ স্টিভ রোডস একজন ইংলিশম্যান। তিনি ইংলিশ কন্ডিশন ভাল করেই জানেন। কাউন্টি উইকেট ও কন্ডিশন কেমন হবে ভালই জানা আছে তার। কোর্টনি ওয়ালশ দীর্ঘদিন ইংল্যান্ডে খেলেছেন। আমি ইংল্যান্ডে খেলেছি ৫ বছরের মতো। আমরা বিভিন্ন উইকেট কন্ডিশন বিবেচনা করে পরিকল্পনা সাজাচ্ছি। আমরা ওদের সেই অনুযায়ী প্রস্তুত করার চেষ্টা করছি।’ আর বর্তমান বাংলাদেশ দলে অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছেন যারা বিভিন্ন কন্ডিশনে খেলে বিস্তর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তাই ম্যাকেঞ্জি বিশ্বাসের সঙ্গেই বললেন, ‘স্কোয়াডে অনেক ভাল ক্রিকেটার রয়েছে। ব্যাটিং বিভাগে বেশ কিছু অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছে। তবে ওরা জানে বিশ্বের সেরা সেরা দলের বিপক্ষে খেলবে। এবারের বিশ্বকাপে প্রায় সাতটি দল আছে, যাদের বিশ্বকাপ জেতার সামর্থ্য আছে। বিশ্বকাপে নয়টি কঠিন ম্যাচ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। কোন সহজ ম্যাচ থাকবে না।’ আর প্রতিপক্ষদের হারাতে হলে নিজেদের দক্ষতার প্রমাণটাই দিতে হবে। মস্তিষ্ক কাজে লাগিয়ে ব্যাটিং-বোলিং করতে পারলেই সেটা সম্ভব। ইংল্যান্ডে তুলনামূলকভাবে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে খানিকটা মন্থর উইকেট থাকায় ব্যাটিং টেকনিকেও পরিবর্তন আনতে হবে। এ বিষয়ে ম্যাকেঞ্জি বলেন, ‘আমাদের নিজেদের সামর্থ্যে বিশ্বাস রাখতে হবে। ইংল্যান্ডে বল দ্রুত ব্যাটে আসবে না, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার তুলনায়। আমি মনে করি না ব্যাটিং টেকনিক নিয়ে খুব বেশি চিন্তার কিছু আছে। ইংল্যান্ডে অনেক স্লোয়ার-বাউন্সার সামলাতে হবে। উইকেটে বল কিছুটা থেমে আসবে। এখানে কিছুটা সুবিধা পাবে বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানরা। তবে ইংল্যান্ডে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় রান বের করতে হবে আমাদের। বাংলাদেশে আপনি হাত চালিয়ে দিতে পারেন, লেগ সাইডে রান বের করতে পারেন। কিন্তু ইংল্যান্ডে আপনাকে বলের কাছে যেতে হবে, দেরিতে খেলতে হবে।’
×