ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জয় দিয়ে শুরু করতে পারবে বাংলাদেশ?

প্রকাশিত: ১২:৫২, ৭ মে ২০১৯

জয় দিয়ে শুরু করতে পারবে বাংলাদেশ?

মিথুন আশরাফ ॥ একদল আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে উড়ন্ত সূচনা করেছে। দলটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। স্বাগতিক আয়ারল্যান্ডকে ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচেই উড়িয়ে দিয়েছে। আরেকদল, বাংলাদেশ। যে দলটি ত্রিদেশীয় সিরিজের সবচেয়ে শক্তিশালী দল। পুরো শক্তির দল বাংলাদেশ। কিন্তু ত্রিদেশীয় সিরিজ শুরুর আগে প্রস্তুতি ম্যাচে আয়ারল্যান্ড উলভসের কাছে নাজেহাল হয়েছে। আজ উড়ন্ত সূচনা পাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও প্রস্তুতি ম্যাচ হেরে অস্বস্তিতে থাকা বাংলাদেশ দলের মধ্যকার লড়াই হবে। ম্যাচটি ডাবলিনের ক্যাসল এভিনিউয়ের ক্লনটার্ফ ক্রিকেট ক্লাব মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ সময় বেলা পৌনে চারটায় ম্যাচটি শুরু হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেভাবে প্রথম ম্যাচটিতে স্বাগতিকদের ডুবিয়ে জয় তুলে নিয়েছে, তাতে প্রশ্নও উঠছে, আজ কী উড়ন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে রুখতে পারবে বাংলাদেশ? ত্রিদেশীয় সিরিজের জন্য বাংলাদেশ দলে রয়েছেন ১৯ ক্রিকেটার। মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান (সহ-অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, মোহাম্মদ মিঠুন, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, তামিম ইকবাল খান, সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, আবু জায়েদ চৌধুরী রাহী, মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মেহেদী হাসান মিরাজ, সাব্বির রহমান রুম্মন, ইয়াসির আলি চৌধুরী, নাঈম হাসান, তাসকিন আহমেদ ও ফরহাদ রেজা। বিশ্বকাপ দলে না থাকা তাসকিন, ফরহাদ, ইয়াসির ও নাঈমকে আয়ারল্যান্ড সিরিজে ঝালিয়ে নেয়ার জন্যই রাখা হয়েছে। প্রস্তুতি ম্যাচে তাসকিন ও ফরহাদকে সুযোগও দেয়া হয়েছে। তাতে তাসকিন ৩ উইকেট নিয়ে নিজেকে একটু সামনে তুলে ধরেছেন। সেখানে ফরহাদ রেজা ব্যর্থ হয়েছেন। প্রস্তুতি ম্যাচটিতে ওয়ানডে দলের নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি খেলেননি। সঙ্গে সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, আবু জায়েদ চৌধুরী রাহী, মুস্তাফিজুর রহমান, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, ইয়াসির আলি চৌধুরী, নাঈম হাসানও খেলেননি। সবাইকে বিশ্রাম দেয়া হয়েছে। সাকিবের নেতৃত্বে প্রস্তুতি ম্যাচে খেলেছে বাংলাদেশ দল। যারা ছিলেন, তারাই আয়ারল্যান্ড উলভসের মতো দলকে উড়িয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলেন। কিন্তু কিছুই করতে পারেননি। বল হাতে তাসকিন ৩ উইকেট নিলেও ৬৬ রান দিয়েছেন। রুবেল ২ উইকেট নিয়ে দিয়েছেন ৬৩ রান। মিরাজও ৬ ওভার বল করে ১ উইকেট নিয়েছেন। কিন্তু ৪৪ রান দিয়েছেন। সাকিব শুধু গত বছর ডিসেম্বরের পর আবার জাতীয় দলের হয়ে খেলতে নেমে ১০ ওভার বল করে ১ মেডেনসহ ৩০ রান দিয়ে ১ উইকেট শিকার করেন। সাকিব একা ভাল করলে কী আর কাজ হবে? হবে না। তাইতো জেমস ম্যাককলামের মতো ব্যাটসম্যান প্রথমবারের মতো একদিনের ক্রিকেটে সেঞ্চুরি (১০২ রান) হাঁকিয়ে বসেছেন। সিমি সিং ৯১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছেন। দুইজন মিলে আবার তৃতীয় উইকেটে ১২৪ রানের জুটিও গড়েছেন। এ দুইজনের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ৩০৭ রান করে ফেলেছে আয়ারল্যান্ড উলভস। বোঝাই যাচ্ছে তাতে বাংলাদেশের বোলারদের কী বেহাল দশা হয়েছে। বোলারদের কাহিল অবস্থা হয়েছে। এরপর আশা করা হয়েছিল, ব্যাটসম্যানরা কিছু করে দেখাতে পারবেন। কিন্তু তারাও ব্যর্থ হয়েছেন। সাকিব ব্যাট হাতেও উজ্জ্বলতা ছড়িয়েছেন। ৫৪ রানের ইনিংস উপহার দিয়েছেন। বাকিরা ব্যর্থ হন। তাতে বাংলাদেশ দলও ৪২.৪ ওভারে ২১৯ রান করতেই গুটিয়ে যায়। কী করুণ দশা ব্যাটসম্যানদের। ব্যাটিংয়েও একাধিক ব্যাটসম্যান ব্যাট করেননি। কিন্তু তামিম, লিটন, সাকিব, মুশফিক, মিঠুন, মাহমুদুল্লাহ, সাব্বির, মিরাজরা মিলে ২১৯ রানের বেশি করতে পারবেন না এমন দল নিশ্চয়ই নয় বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ড উলভসের কাছে ৮৮ রানের বড় ব্যবধানে হারবে বাংলাদেশ এমন দল কখনই নয় বাংলাদেশ। তাইতো প্রশ্নও উঠেছে, প্রস্তুতি ম্যাচের ব্যর্থতার প্রভাব আবার মূল ম্যাচে পড়বে না তো? পড়লেইতো বিপদ। তখন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভাল করা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়ে যাবে। প্রস্তুতি ম্যাচটি শেষে লিটন কুমার দাস অকপটে স্বীকার করেছেন, ভাল ক্রিকেট খেলেননি, তাই হেরেছেন। বলেছেন, ‘উইকেট এবং মাঠ অনুযায়ী ৩০০ (টার্গেট ৩০৮) খুব বেশি রান ছিল না। আমরা ভাল ক্রিকেট খেলিনি তাই হেরেছি। জিততে পারলে প্রস্তুতিটা আরও ভাল হতো। তবে সব মিলিয়ে খারাপ হয়নি।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘যেহেতু ছোট মাঠ। ছয় মারার চেষ্টা করেছি। তখন মিসহিট হওয়ার চান্স থাকে।’ লিটনের কথাতে বোঝাই যাচ্ছে, ছোট্ট মাঠ পেয়ে শুধু মেরে খেলার নেশাতেই বুঁদ হয়ে ছিলেন ব্যাটসম্যানরা। তাতে ব্যর্থতাই সঙ্গী হয়েছে। এমন অবস্থা যদি আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হয় তাহলে শুভ সূচনার যে আশা করা হচ্ছে; তা ভেস্তে যেতে পারে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলটিতো প্রথম ম্যাচে নিজেদের আলাদাভাবেই উপস্থাপন করেছে। আন্দ্রে রাসেল, ক্রিস গেইল, শিমরন হেটমেয়ার, কার্লোস ব্রেথওয়েট, ওশানে থমাস ও নিকোলাস পুরানের মতো ক্রিকেটাররা দলে নেই। তাতে কি, যারা আছেন তারাই দলকে জেতাতে যথেষ্ট। সেই বার্তাই দিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটাররা। বিশেষ করে ব্যাটসম্যানরাতো এমন ব্যাটিং করে দেখিয়েছেন বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হাল্কাভাবে নেবে কোন দল, তা কোনভাবেই সম্ভব নয়। তার প্রমাণ দিয়েছেন। দুই ওপেনার জন ক্যাম্পবেল ও (১৭৯) ও সাই হোপ (১৭০) মিলে ওপেনিং জুটিতে ৩৬৫ রান যোগ করে এই জুটিতে বিশ্বরেকর্ডই গড়ে ফেলেছেন। দলও ৩৮১ রান করে দেখিয়েছে। এরপর বোলাররাও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বোলিং করে আয়ারল্যান্ডকে ১৮৫ রানেই অলআউট করে দেয়। স্যাসলে নার্স (৪ উইকেট), শ্যানন গ্যাব্রিয়েল (৩ উইকেট) ও কেমার রোচ (২ উইকেট) যে কতটা ভয়ঙ্কর তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। একদিকে প্রস্তুতি ম্যাচে হার। আরেকদিকে প্রতিপক্ষের উড়ন্ত সূচনা বাংলাদেশ দলকেও ভাবিয়ে তুলেছে। এই ভাবনা থেকে এখন মুক্ত হওয়ার পথ একটাই, আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে রুখে দিতে হবে। তা না হলে, যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছেও হারে বাংলাদেশ এই হার বাংলাদেশকে সামনেও ভোগাতে পারে। বিশ্বকাপেও এর প্রভাব পড়তে পারে। তাই উড়ন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে রুখে দিতে পারলেই ত্রিদেশীয় সিরিজে শুভ সূচনা করার সঙ্গে সব ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলতে পারবে বাংলাদেশ। পারবে মাশরাফিবাহিনী তা করতে?
×