ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তিব্বতের সর্বোচ্চ উচ্চতায় বাস করত প্রাচীন মানব ‘ডেনিসোভেন’

প্রকাশিত: ১২:১৩, ৭ মে ২০১৯

 তিব্বতের সর্বোচ্চ উচ্চতায় বাস করত প্রাচীন মানব ‘ডেনিসোভেন’

বিজ্ঞানীরা তিব্বতে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে ডেনিসোভেন নামে এক প্রাচীন মানব প্রজাতির বাস ছিল বলে প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন। খবর বিবিসি অনলাইনের। এ ধরনের চরম বিরূপ পরিবেশে ডেনিসোভানদের বেঁচে থাকার সামর্থ্যরে সঙ্গে কেবল আমাদের প্রজাতি হোমো য্যাপিয়েনদের সংশ্লিষ্ট দেখা যায়। এ প্রাচীন পূর্বপুরুষদের বংশগতির অন্যতম নিয়ন্ত্রক জীন সুউচ্চ পর্বত এলাকায় আধুনিক মানুষদের বেঁচে থাকার সহযোগিতা যুগিয়েছে। পর্যবেক্ষণটির বিস্তারিত তথ্য সাময়িকী নেচারে প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের মতো আধুনিক মানুষ হাজার হাজার বছর পূর্বে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ার আগে এশিয়ায় বসবাসকারী ডেনিসোভানরা ছিলেন এক রহস্যময় মানব প্রজাতি। সম্প্রতি সাইবেরিয়ায় ডেনিসোভা গুহায় একটি মাত্র স্থান থেকে মানুষের অস্থি ও দাঁতের কিছু ভগ্নাংশের মাত্র কিছু জীবাশ্ম খুঁজে পাওয়া গেছে। কিন্তু ডিএনএ থেকে বোঝা যায় যে, এগুলো মানবকুলের এক স্বতন্ত্র শাখা। বিজ্ঞানীরা এখন অন্য একটি স্থানের প্রথম ডেনিসোভান জীবাশ্ম শনাক্ত করেছেন। এ জীবাশ্ম পাওয়া গেছে ১৯৮০ সালে ৩ হাজার ২২৮ মিটার ওপরে তিব্বত মালভূমিতে বৈশ্য কার্স্ট গুহা থেকে এবং জীবাশ্ম নিচের চোয়ালের এ অস্থি শনাক্তে ইউরেনিয়াম সিরিজ ডেটিং নামের এক কৌশল ব্যবহার করা হয়। এতে প্রমাণ হয় এ চোয়াল ১ লাখ ৬০ হাজার বছর আগের। এ পর্যবেক্ষণের সহলেখক জার্মানীর লিপজিগে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট যার ইভোলিউশনারি এ্যামথ্রোপলজির অধ্যাপক জীন জ্যাকুস হাবলিন বলেন, এ ধরনের সুউচ্চ ভূমিতে বসবাসকারী প্রাচীন মানব প্রজাতির অস্তিত্বের প্রমাণ আবিষ্কার এক বিস্ময়কর ব্যাপক। তিনি বলেন, ইউরোপে এ সংশ্লিষ্ট পরিস্থিতির দিকে তাকালে দেখা যায়। প্রচুর নিরান ডার্থাল স্থান রয়েছে এবং মানুষ এগুলো অধ্যয়ন করছে এখন থেকে প্রায় দেড়শ বছর আগে থেকে। নিয়ান ডার্থাল মানুষের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে সর্বোচ্চ ২ হাজার মিটার উঁচুতে। কিন্তু তা খুব একটা বেশি নয় এবং এটা স্পষ্ট যে, এরা গ্রীষ্মে ওই উঁচুতে যাওয়া আসা করতেন সম্ভবত বিশেষ শিকারের অন্বেষণে। কিন্তু তারা এ স্থান অন্য উদ্দেশে ব্যবহার করতেন কিনা তা আমরা জানি না। তিনি তিব্বতীয় মালভূমিতে ডেনিসোভানদের অস্তিত্ব সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বলেন, এটি এক মালভূমি এবং যেখানে মানুষের বসবাসের জন্য স্পষ্টত পর্যাপ্ত সম্পদ রয়েছে এবং এগুলো সম্পর্কে প্রায়ই ঠিক জানা যায় না। গবেষকরা জীবাশ্মগুলোতে কোন ডিএনএ’র কোন চিহ্ন খুঁজে না পেয়ে একটি পেষকদ- থেকে প্রোটিন বের করেছেন। তারা যেগুলো বিশ্লেষণ করেন। সহলেখক ডেনমার্কে ইউনিভাসিটি অব কোপেন হেগেনের অধ্যাপক ফ্রিডো ওয়েলকার বলেন, আমাদের প্রোটিন বিশ্লেষণে দেখা যায় যে নিম্নচোয়ালিটি হোমিনিন মানুষের এবং ডেনিসোভা কেইভের ডেনিসোভানদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ততা রয়েছে এবং ডেনিসোভা গুহায় কেন গবেষণা চালানো হয়েছে তার ব্যাখ্যা চাওয়া হতেই পারে। কারণ এ সাইবেরীয় গুহাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ঠিক ৭শ’ মিটার উঁচুতে। বর্তমানকালের শেরপারা, তিব্বতীয়রাও পার্শ্ববর্তী জনগোষ্ঠী কিছুটা একই রকম জীনের অধিকারী। এটা হয়তো সম্ভব হয়েছে অনেক হাজার বছর আগে হোমা য্যাপিয়েনদের সঙ্গে ডেনিসোভানদের মিশ্রণ ঘটার ফলে।
×