ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন রণতরী

প্রকাশিত: ১২:১২, ৭ মে ২০১৯

মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন রণতরী

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে একটি বিমানবাহী রণতরী ও বোম্বার টাস্কফোর্স পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের অব্যাহত উস্কানি, উত্তেজনাকর আলামত ও হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে রবিবার রাত পর্যন্ত এটা পরিষ্কার হওয়া যায়নি যে, ইরানের কোন ধরনের পদক্ষেপের কথা বলছেন বোল্টন। সম্প্রতি পারস্য উপসাগরে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি যার কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের নৌবাহিনী মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়াচ্ছে। বোল্টনের ঘোষণার এক মাস আগেই পারস্য উপসাগরের দিকে রওনা দিয়েছে বিমানবাহী রণতরী আব্রাহাম লিঙ্কন। বোল্টনের ঘোষণার ফলে এ অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বোল্টন ও তার সহযোগীরা ট্রাম্প প্রশাসনকে নতুন একটি যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছে- ইরান সরকারের এমন উদ্বেগ প্রকাশের একদিন পর বোল্টনের এ ঘোষণা এলো। লিখিত বিবৃতিতে বোল্টন বলেন, জাহাজ ও বিমান পাঠানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে ইরানকে পরিষ্কার ও নির্ভুল বার্তা দেয়া যে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে আঘাত কিংবা এর মিত্রদের ওপর হামলার জবাব দেয়া হবে নির্মমভাবে। বিবৃতিতে বলা হয়, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চায় না যুক্তরাষ্ট্র। তবে ইসলামিক বিপ্লবী বাহিনী বা ইরানের নিয়মিত বাহিনীর যে কোন হামলার জবাব দিতে আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। বিমানবাহী রণতরীর স্ট্রাইক গ্রুপ ও বোমাবর্ষণকারী জাহাজের রোটেশন নিয়মিত হয়ে থাকে। বর্তমানে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড অঞ্চলে কোনটিই নেই। এগুলো মধ্যপ্রাচ্য ও আফগানিস্তানের কাছাকাছি রয়েছে। আব্রাহাম লিঙ্কন রণতরী স্ট্রাইক গ্রুপ গত ১ এপ্রিল নরফোকের ঘাঁটি থেকে রওনা হয়েছে। এটি ভূ-মধ্যসাগরের উদ্দেশে রওনা হয়েছে মহড়ায় অংশ নিতে। এরপর সেটি পারস্য উপসাগরের দিকে রওনা দেবে। গত মার্চে বি-১ বোম্বার মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রত্যাহার করে নেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের জন্য এটিকে প্রত্যাহার করা হয়। যদিও বৈশ্বিকভাবে এই পরিবর্তন নিয়মিত করা হয়, তবে এই মোতায়েনের ঘোষণা পেন্টাগনের পরিবর্তে একজন নিরাপত্তা উপদেষ্টার মাধ্যমে হচ্ছে যা খুবই বিরল। পররাষ্ট্র দফতর ও পেন্টাগনের সাবেক কর্মকর্তা, ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর এ নিউ আমেরিকান সিকিউরিটির সিনিয়র ফেলো ইলান গোল্ডেনবার্গ বলেন, সেন্ট্রাল কমান্ডের রণতরীর বিষয়টি অস্বাভাবিক নয়, এটা নিয়মিত ঘটনা এবং দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ। তবে বোল্টনের উত্তেজনাকর বক্তব্য অস্বাভাবিক। আমার ধারণা হচ্ছে, ইরানীদের ভয় দেখানোর একটা পন্থা মাত্র। এর বেশি কিছু নয়। উত্তর কোরিয়া, ভেনিজুয়েলা ও ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছেন বোল্টন। হোয়াইট হাউসে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ গ্রহণের আগে তিনি যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন ঠেকানোর একমাত্র পথ হচ্ছে দেশটিতে বোমাবর্ষণ করা। গত বছরের মে মাসে ইরানের সঙ্গে একটি বহুপক্ষীয় চুক্তি থেকে হঠাৎ বেরিয়ে যায় ট্রাম্প প্রশাসন। এতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে ইরান পারমাণবিক কর্মসূচী অনেকটা কমিয়ে আনতে রাজি হয়েছিল। এরপর থেকে ইরানের সঙ্গে বিশ্বের যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করে তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তেল রফতানি শূন্যে নামিয়ে আনারও চেষ্টা করছে। জাতিসংঘের পারমাণবিক অস্ত্র পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এটমিক এনার্জি এজেন্সি (আএইএ) জানিয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির শর্ত নিয়মিতভাবে মেনে আসছে ইরান। তবে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সত্ত্বেও চুক্তির অন্য সব পক্ষ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া ও চীন চুক্তির শর্তকে সম্মান জানাবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। গত মাসে নিউইয়র্ক সফরকালে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ সতর্ক করে বলেছিলেন, বোল্টন, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, আরব আমিরাতের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়েদ ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধানোর চেষ্টা করছে। এদের তিনি ‘বি টিম’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সিবিএসের ‘ফেস দ্য নেশন’ অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জারিফ বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি না যে ট্রাম্প যুদ্ধ করতে চান। কিন্তু আমরা জানতে পেরেছি কেউ কেউ সেটার জন্য চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, মার্কিন প্রশাসন এমন চেষ্টা করছে যাতে দুর্ঘটনা ঘটে। সেখানে ব্যাপক নজরদারি করা উচিত যাতে যেসব লোক এই দুর্ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা করছে, চেষ্টা করছে, তারা সেটা করতে না পারে। ইরানের পক্ষ থেকে কী ধরনের হুমকি রয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি বোল্টন। ফাউন্ডেশন ফর দ্য ডিফেন্স অব ডেমোক্রেসিজের প্রধান মার্ক ডুবোউয়িটস যুক্তি দেখান যে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামাসের রকেট হামলার পেছনে ইরানের ইন্ধন থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও এর আঞ্চলিক মিত্রদের বিরুদ্ধে প্রচারের অংশ হিসেবে ইরান এটা করতে থাকতে পারে। -গার্ডিয়ান
×