ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

প্রকাশিত: ১১:১৮, ৭ মে ২০১৯

 খোশ আমদেদ মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু বিল আমানি ওয়াল ইমান, ওয়াস্ সালামাতি ওয়াল ইসলাম- হে পরওয়ার দিগারে আলম! এ নয়া চাঁদকে আমাদের জন্য নিরাপত্তা এবং ইমানের প্রতীক বানাও আর শান্তি ও ইসলামের পতাকাতলে শামিল হওয়ার ওয়াসিলা বানাও। গতকাল সাঝের বেলা পশ্চিম আকাশে বাঁকা চাঁদের উদয় দেখে মুমিন মুসলমানরা রহমানুর রহীম খোদা তায়ালার কাছে উপরোক্ত ফরিয়াদ করেন। স্বাগত জানান মাহে রমজানের আগমনকে এবং এশার জামাতের সঙ্গে তারাবির নামাজে শামিল হয়ে আনুষ্ঠানিক কৃতজ্ঞতা জানান। মুমিন মুসলমানদের কাছে আজ এক পরম আনন্দ ও তৃপ্তির মুহূর্ত, তারা আজ এক মহা অনুভব ও ইবাদত উপভোগের পুতঃসায়রে সন্তরণ শুরু করেছে। তারা এ মাসকে নিজের জীবন নিষ্পাপ পুণ্যময় করার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে। রমজানুল মোবারক উপলক্ষে কুরআন ও হাদিসে যেসব বাণী এসেছে তা সত্যিই একজন মুমিনকে সৎপথে জীবন রচনার এক দুর্দমনীয় প্রতিযোগিতায় উদ্বেলিত করে তোলে। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা ইরশাদ করেন : শাহরু রামাদানাল লাযি উনযিলা ফিহিল কুরআন হুদাললিন্নাসি ওয়া বায়্যিনাত...। ’ অর্থাৎ ‘রমজান মাস হলো সেই মাস- যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সত্য পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসে রোজা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্যদিনে গণনা পূর্ণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না- যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হিদায়াত দান করার দরুন আল্লাহতায়ালার মহত্ব বর্ণনা কর (আর) যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।’ এর পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে : আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুত আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে তাদের প্রার্থনা কবুল করে নিয়ে থাকি, যখন (তারা) আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্ত কর্তব্য যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে। -(সুরা বাকারাঃ ১৮৫,১৮৬)। উপরোক্ত আয়াত দুটোর প্রথমটিতে রমজান মাসকে অন্য এগারোটি মাস থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যে তুলে ধরা হয়েছে এবং এ মাসকে কুরআনের মাস হিসেবে আখ্যায়িত করে এর মধ্যে সুনির্দিষ্ট করণীয় বিবৃত হয়েছে। এ মাসকে প্রকৃত হিদায়াত ও পথপ্রাপ্তির মোক্ষম মৌসুম বলেও এখানে ইশারা করা হয়েছে। দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ তায়ালার দরবারে আলীশানে ইবাদত বন্দেগি ও প্রার্থনার গুরুত্ব এবং এসব ব্যাপারে খুলুসিয়াত বা আন্তরিক বিশ্বাসের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। আয়াতের মর্মার্থ দ্বারা বুঝা যায়, রমজান মুসলিম জিন্দেগিতে একটি ট্রেনিং পিরিয়ড এবং এ থেকে ফায়দামন্দ হওয়ার জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিবেশ। হাদিস শরিফে বারবার এ মাসকে প্রথম থেকেই অনুধাবন ও সদ্ব্যবহার করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হযরত সালমান ফারেসি (রাদিঃ) একটি দীর্ঘ হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, একদিনকার ঘটনা। আঁ - হযরত (স.) শাবান মাসের শেষ তারিখ আমাদের উদ্দেশে এক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। এতে তিনি ইরশাদ করেছেন, হে লোক সকল! একটি মহান ও বরকতময় মাস তোমাদের সামনে উপস্থিত। এ মাসের রাতগুলোর মধ্যে এমন এক রাত বিদ্যমান যার মর্যাদা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ মাসের রোজাকে ফরজ করেছেন এবং এ মাসের রাত্রিজাগরণকে করেছেন অতিরিক্ত ইবাদতে শামিল। তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি এ মাসে একটি সাধারণ ভাল কাজ করবে অন্য মাসের তুলনায় তাকে একটি ফরজ ইবাদতের সওয়াব প্রদান করা হবে। যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ ইবাদত পালন করবে তাকে সত্তরটি ফরজ ইবাদতের সমপরিমাণ সওয়াব প্রদান করা হবে। এ মোবারক মাস ধৈর্য ও সংযমের মাস। ধৈর্যের বিনিময় অবশ্যই জান্নাত। এ মাস পরোপকারের। এ মাসে বিশেষভাবে মু’মিন বান্দাদের রিজিক বৃদ্ধি করা হয়। কেউ যদি একজন রোজাদারের ইফতারের ব্যবস্থা করে আল্লাহতায়ালা তার পাপরাশি ক্ষমা করে দেন, তাকে দোজখ থেকে মুক্তি দেন এবং (রোজাদারের) রোজার সমান তাকে পুণ্য দান করেন। এ মহান পবিত্র মাস তিন ভাগে বিভক্ত। প্রথমাংশে আল্লাহর বিশেষ রহমত অবতীর্ণ হয়। দ্বিতীয়াংশ ক্ষমা ও মার্জনার এবং শেষ অংশ দোজখ থেকে মুক্তিদানের। যেব্যক্তি এ মাসে তার কর্মচারীর কাজের বোঝা কমিয়ে দেয় আল্লাহ তার গুনাহর বোঝা কমিয়ে দেন এবং দোজখের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করেন। বর্ণিত হাদিসটির মাধ্যমে আমরা দেখি, পবিত্র রমজান মাস আত্মগঠনের, সামাজিক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার, পরস্পর সহানুভূতি ও সহমর্মিতার। এ মাস আধ্যাত্ম সাধনা ও কৃচ্ছ্রতা হাসিলের। এ মাস রহমত, বরকত, ও মাগফিরাতের। এর হুকুম আহকামগুলোও সে একই উদ্দেশ্য লক্ষ্যকে সামনে রেখে তৈরি। যেমন- ইফতার, সেহরি, তারাবি, খতমে কুরআন, জাকাত, ফিতরা, ঈদ-উল ফিতর প্রভৃতি। আমাদের পদে পদে খেয়াল রাখতে হবে, এসব আহকামের দুনিয়াবী, সামাজিক ও ব্যক্তি গঠনের যে দর্শন আর ফায়দা আছে তা আমাদের জীবনে প্রতিফলিত হচ্ছে কিনা।
×