ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে মনিটরিং সেল

রোজায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের পদক্ষেপ

প্রকাশিত: ১১:০১, ৭ মে ২০১৯

 রোজায় দ্রব্যমূল্য  নিয়ন্ত্রণে সব  ধরনের পদক্ষেপ

এম শাহজাহান ॥ রোজায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সরকারী-বেসরকারীখাতে ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ বাড়ানো হয়েছে। এবার মজুদকৃত পণ্য ভোক্তাদের কাছে সঠিক দামে বিক্রি করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এলক্ষ্যে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করতে মনিটরিং সেল গঠন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এই সেলে যেকোন ভোক্তা দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে টেলিফোনে অভিযোগ ও অভিমত ব্যক্ত করতে পারবেন। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, সার্বক্ষণিক মনিটরিং টিম বাজারে থাকবে। ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন নির্ধারিত দামে মাংস বিক্রির নির্দেশনা দিয়েছেন। বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে মূল্য বেশি নেয়া হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাৎক্ষণিক জেলজরিমানার মতো শাস্তি প্রদান করবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে র‌্যাব-পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন ৬ বাজারে নিয়োজিত থাকবে। দাম বেশি নেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে অভিযুক্ত ব্যবসায়ীকে শাস্তি দেয়া হবে। টিসিবি পুরো রমজানে ভর্তুকি মূল্যে ট্রাকসেলে বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। এদিকে, রোজায় পর্যাপ্ত আমদানি, মজুদ ও সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সরকার। পণ্যম স্বাভাবিক দামে ভোক্তাদের হাতে পণ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া। এজন্য বেসরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি এবার সরকারীভাবেও বাজারে পণ্যসামগ্রীর যোগান দেয়া হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রমজানের চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি পণ্যসামগ্রী দেশে মজুদ রয়েছে। তাই ম্যানুপুলেট করে বাজার নিয়ন্ত্রণের কারসাজি হলে কোন রকম ছাড় দেয়া হবে না। এ ব্যাপারে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও নজরদারি করা হচ্ছে। এছাড়া দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে-পর্যাপ্ত আমদানি ও মজুদের বিষয়টি নিশ্চিত করা, ম্যানুপুলেটের সুযোগ বন্ধ করে বাজারে চাহিদা মতো পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা, বাজারগুলোতে গোয়েন্দা সংস্থা, র‌্যাব ও পুলিশের তদারকি কার্যক্রম বাড়ানো, ফেরি পারাপারে পণ্যবাহী ট্রাক অগ্রাধিকার দেয়া, মহাসড়কে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে পণ্যবাহী ট্রাক নিরাপদে বাজার পর্যন্ত নিয়ে আসা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর ও অধিদফতরের নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা, ট্রাকসেলে টিসিবির বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত রাখা ও পণ্যের পরিমাণ বাড়ানো, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের কার্যক্রম বাড়ানো, ভেজাল খাদ্যরোধে নিরাপদ খাদ্য অধিদফতরের উদ্যোগ গ্রহণ, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন ভর্তুকি মূল্যে বাজারে চিনি বিক্রি করবে, পণ্যসরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে রাস্তায় ট্রাফিক জট কমানো, ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিত করা, এক মাস রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ, স্থল বন্দরগুলোতে পেঁয়াজ, রসুনসহ মসলা জাতীয় পণ্যের দ্রুত ছাড়করণ, বাজারে সবজির সরবরাহ বাড়ানো এবং প্রয়োনীয় নিত্যপণ্যের মূল্য তালিকা টানানো প্রভৃতি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রোজার শুরুতে সবজির দাম চড়া ॥ রোজার শুরুতেই অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার। বেড়ে গেছে সব ধরনের সবজির দাম। একদিনের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ দামে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। এছাড়া শসা, টমেটো কাঁচা মরিচসহ অন্যান্য সবজির দামও চড়া। গড়ে ৬০ টাকার নিচে কোন সবজি নেই বাজারে। সবজি ব্যবসায়ীরা দাম আরও বাড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে বলেছে, ঘূর্ণিঝড় ফণীর ক্ষয়ক্ষতির কারণে চাহিদামতো সবজি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে সরবরাহও কিছুটা কম। এছাড়া বেড়ে গেছে মাছ, মাংস ও ব্রয়লার মুরগির দাম। মাংসের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের বেঁধে দেয়া দাম নগরীর কোথাও কার্যকর হচ্ছে না। প্রতিকেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকায়। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে মনিটরিং সেল খুলেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। রমজান মাসের যেকোন সময় ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের বিষয়ে এই সেলে ফোন দিতে পারবেন ভোক্তারা। এদিকে, খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করায় পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও বেশকিছু মুদিপণ্য বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগেও প্রতিকেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে ৭০-৭৫ টাকায়, কিন্তু এখন সেই একই ছোলা কিনতে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকা। কেজিতে ৮-১০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি চিনি ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। ইফতারিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় খেজুর। মানভেদে প্রতিকেজি খেজুর ২৫০-২০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মাছ, মাংসের বাজার চড়া। সোমবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সব ধরনের মাংসের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কিন্তু সিটি করপোরেশন নির্ধারিত দামে নগরীর কোথাও মাংস বিক্রি হতে দেখা যায়নি। প্রতিকেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাংস ব্যবসায়ীরা সাফ জানিয়ে দিয়েছে-নির্ধারিত দামে মাংস বিক্রি করা সম্ভব নয়। কারণ হিসেবে তারা ইজারাদারদের অতিরিক্ত হারে খাজনা ও হাসিল আদায়, পথে পথে চাঁদাবাজি এবং চামড়ার দাম কমে যাওয়াকে দায়ী করেছে। এদিকে, ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে রোজায় প্রতিকেজি দেশী গরুর মাংস ৫২৫, বোল্ডার গরু ৫০০, মহিষ ৪৫০, খাসির মাংস ৭৫০ এবং ভেড়ার মাংস ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। রেওয়াজ অনুযায়ী নির্ধারিত এই দাম ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনেও কার্যকর হবে। গত বছর প্রতিকেজি দেশী গরুর মাংস ৪৫০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। ওই হিসেবে এবার কেজিতে প্রায় ৭৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে গরুর মাংসের দাম। তবে এই দামের চেয়েও বেশি দামে মাংস বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা। এছাড়া খাসির মাংস কিনতে ভোক্তাতে ৮০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। আর মহিষের মাংস বলে নগরীতে কোন মাংস বিক্রি হয় না। রাতের আঁধারে জবাইকৃত মহিষ যুগের পর যুগ গরুর মাংষ হিসেবে বিক্রি করছে মাংস ব্যবসায়ীরা। সোমবার নগর ভবনে মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি রাখা হলে শাস্তি দেয়া হবে। তিনি বলেন, গত বছর রোজায় দেশী মাংসের দাম ছিল ৪৫০ টাকা। সেই হিসেবে গতবারের চেয়ে কেজিতে ৭৫ টাকা দাম বেড়েছে। তবে কোনভাবেই এই দামের চেয়ে বেশি রাখার কোন সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশন তদারকি করবে। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, এই সিদ্ধান্ত মাংস ব্যবসায়ীদের মেনে চলতে হবে। কেউ যদি এর চেয়ে বেশি দাম রাখেন তাহলে সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবে। নির্ধারিত এই দামে সুপারশপেও মাংস বিক্রি করা হবে। ওই সভায় ঢাকা মহানগর মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা, বিভিন্ন সুপারশপের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। দাম নির্ধারণের পর দেখা গেছে নগরীর সর্বত্র ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি গরুর মাংস। এছাড়া সিটি করপোরেশনের বেঁধে দেয়া দাম কার্যকরেও খুচরা ব্যবসায়ীদের মধ্যে কোন আগ্রহ দেখা যায়নি। বিক্রেতারা বলছে, হাট ইজারাদারদের খাজনা বেশি হওয়া ও চামড়ার দাম কমে যাওয়ার কারণেই মাংসের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া দেশে চামড়ার সঠিক দাম নিশ্চিত হলে মাংসের দাম কমে আসত। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, বেশ কয়েকটি কারণে মাংসের দাম বেড়ে গেছে। পণ্যমূল্য নিয়ে টেলিফোনে অভিযোগ নেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ॥ পণ্যমূল্য নিয়ে টেলিফোনে অভিযোগ দেয়াসহ যেকোন ব্যাপারে যোগাযোগ করতে পারবেন ভোক্তারা। এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। এ সেলকে মূল্যবৃদ্ধি সংক্রান্ত তথ্য প্রদানের জন্য ৯৫৪৯১৩৩, ০১৭১২-১৬৮৯১৭, ৯৫১৫৩৪৪ ও ০১৯৮৭-৭৮৭২০৯ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বেসরকারী টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন এ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের (অ্যাটকো) সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। কোন সঙ্কট নেই। রমজান মাস সংযমের মাস। চাল, ডাল, ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজ ও আটার দাম স্থিতিশীল ॥ রোজার শুরুতে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সবজির দাম। তবে সেই তুলনায় চাল, ডাল, ভোজ্যতলে ও আটার দাম স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা। মোটা চাল ৪০ টাকার নিচে নেমে এসেছে। এছাড়া উন্নত মানের মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আটা বিক্রি হচ্ছে ২৭-৩৬ টাকায়। তবে গড়ে ৬০ টাকার নিচে কোন সবজি নেই। টমেটো ও শসার দাম বেড়ে ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচ মানভেদে ৮-১০০, বেগুন মানভেদে ৮০-১১০, পেঁপে ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। ব্যবসায়ীরা বলছেন ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে সবজি উৎপাদন সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে।
×