ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুর্যোগ-পরবর্তী করণীয়

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ৭ মে ২০১৯

দুর্যোগ-পরবর্তী করণীয়

প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী শনিবার প্রত্যুষে বাংলাদেশের উপকূলে প্রবেশ করার সময় তার মূল শক্তি নিয়ে ওড়িশায় আঘাত হানার পর দুর্বল হয়ে পড়ে। ২৬ এপ্রিল ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে ভারতের উড়িষ্যার দিকে এগিয়ে যায়। এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থান অতিক্রম করতে করতে শেষ অবধি ওড়িশায় প্রচ- দাপট দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকাটিকে ল-ভ- করে দেয়। এরপর বাংলাদেশের আশপাশের স্থানগুলো পার করতে গিয়ে দুর্বল হওয়ায় ফণী খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি করতে পারেনি। আগাম সতর্কতায় উপকূলীয় স্থানের বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়া হয়। দুর্যোগ মোকাবেলায় নির্মিত আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতেও স্থানীয় লোকজনদের নিয়ে আসা হয়। ফলে দুর্যোগ পরবর্তী আঘাত বাংলাদেশকে সেভাবে বিপাকে না ফেললেও দেশের প্রায় দ্বিগুণ বিস্তৃত ঘূর্ণিঝড়টি বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরনের বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতি তৈরি করে। ৫ জেলায় ঘর চাপা পড়ে কয়েকজনের মৃত্যু হয়। আহত হয়েছে শতাধিক। শক্তিহীন ফণী বাংলাদেশে তেমন দাপট দেখাতে না পারায় দেশের মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে। তবে সবচাইতে বেশি আশ্বস্ত হয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সর্বশক্তিমান আল্লাহর দরবারে শোকরানাও আদায় করেন এর জন্য। তিনি বলেন, ফণীর মূল শক্তি বাংলাদেশে ঢোকার আগেই শেষ হয়ে যায়Ñ এটাও আল্লাহর অশেষ রহমত। ফণীর প্রভাবে বাংলাদেশের যে সব স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেসব দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সরবরাহ ত্বরান্বিত করতে নির্দেশ দেন তিনি। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর আর নদীর পানি ৪-৫ ফুট উচ্চতায় উঠে আসায় জলোচ্ছ্বাস ছাড়াও বন্যার আশঙ্কা দেখা দেয়। এছাড়াও অনেক স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে এলাকার জনজীবনকে বিপর্যস্ত করেছে। এমন সব তাৎক্ষণিক সমস্যা জরুরী ভিত্তিতে সামাল দেয়া প্রয়োজন। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর নজরদারিতে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী দুর্ভোগ মোকাবেলায় জোরালো পদক্ষেপ নেয়া আবশ্যক। এছাড়া সারাদেশে প্রায় ১ কোটি গ্রাহক বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন অবস্থায় কষ্টকর দিনযাপন করছে। এখানেও জরুরী ভিত্তিতে সেবা প্রদানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতি খুব বেশি না হলেও কিছু জায়গায় সাধারণ মানুষ দুর্ভোগের কবলে পড়েছে। তাদের উদ্ভূত সমস্যা থেকে বের করে আনতে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কে সর্বক্ষণিক নজরদারিতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা এই মুহূর্তের আবশ্যকীয় কাজ। আধুনিক এবং তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অনেক জরুরী কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করায় বিপদের সমূহ আশঙ্কা কমে যায়। মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে সক্ষম হয়। প্রতিটি জেলা-উপজেলায় স্থানীয় প্রশাসনকে সংশ্লিষ্ট এলাকার দুর্যোগ মোকাবেলায় সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে যায়। সাবধানতার এমন তাৎক্ষণিক কর্মসূচী বিপদগ্রস্ত মানুষদের অনেক সমস্যা থেকে বের করতে পেরেছে। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও রয়েছে সহনীয় অবস্থায়। সেসব মোকাবেলায়ও তেমন কোন সমস্যা হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করছেন। ভারতের উড়িষ্যাও আরও ল-ভ- হতে পারত কিংবা প্রাণহানির শঙ্কা বেড়ে যেতেও সময় লাগত না, যদি সময় মতো সবাইকে সতর্ক এবং সাবধান করতে ব্যর্থ হতো। এখানে সময়ও অনেক বড় ব্যাপার। প্রচ- বেগে ধেয়ে আসা ফণী যদি তাৎক্ষণিকভাবে তার প্রলয়ঙ্করী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতো, তাহলে অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াত ভাবাও যায় না। তবে এও বলতে হয় যে, রুদ্র মূর্তি ফণীকে সাক্ষাত মোকাবেলা করার পর মনে হয় মানুষ এখনও প্রকৃতির কাছে কত অসহায়। আধুনিক বিজ্ঞান শেষাবধি তাকে জয় করার মতো জ্ঞানশক্তি অর্জন করতে পারবে কিনা, সেটা হয়ত আরও অনেক দিন অজানাই থেকে যাবে।
×