ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আমচাষীদের ‘আশীর্বাদ’ নিয়ে এলো ‘ফণী’র বৃষ্টি

প্রকাশিত: ১২:০৫, ৬ মে ২০১৯

আমচাষীদের ‘আশীর্বাদ’ নিয়ে  এলো ‘ফণী’র বৃষ্টি

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী অঞ্চলের গাছে গাছে যখন বাড়ন্ত আমের থোকা ঠিক তখনই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড়টির অবস্থান এবং তার গতিপথ অনুযায়ী রাজশাহী অঞ্চলে কেন্দ্রে থাকতে পারে বলে তথ্য থাকায় গাছের আম নিয়ে চরম শঙ্কায় ছিলেন আমচাষী ও বাগান মালিকরা। এ নিয়ে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ছিলেন তারা। তবে গতিপথ বদল করে শনিবার দুপুরে ফণী রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এড়িয়ে যায়। আর তার প্রভাবে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে শুরু হয় ভারী বৃষ্টিপাত। গত ২৪ ঘণ্টায় এ অঞ্চলে প্রায় ৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টির কারণে শেষ পর্যন্ত আমের জন্য আশীর্বাদ বয়ে নিয়ে এসেছে। আমচাষী ও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এপ্রিলের শেষ সপ্তাহজুড়ে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে সর্বোচ্চ দাবদাহে আমে ব্যাপকভাবে বালাইয়ের উপদ্রব শুরু হয়। বোটা শুকিয়ে ঝরে পড়ারও ব্যাপক শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। তবে ফণীর প্রভাবে যে বৃষ্টি হয়েছে, তা আমের জন্য ব্যাপক উপকারী। রাজশাহীর বানেশ্বর এলাকার আমচাষী সাইদুর রহমান বলেন, একদিন আগেও ‘ফণী ঝড় নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। আমের ভরা মৌসুমে ঝড় হলে ব্যাপকভাবে ঝরে পড়ার আশঙ্কা ছিল। তবে ঝড় না আসলেও যে বৃষ্টি হয়েছে, তাতে ব্যাপক উপকার হয়েছে। এই বৃষ্টিতে আম দ্রুত বড় হবে এবং তাড়াতাড়ি বাগান থেকে নামানো যাবে। বাজারে ভাল দামে বিক্রি হবে। রাজশাহীর বাঘা, চারঘাটের কয়েকজন আমচাষীও বৃষ্টিতে খুশি বলে জানিয়েছেন। তারা জানান, ঝড়ের প্রভাবে যে বৃষ্টি হয়েছে, তা খুব দরকার ছিল। হাইকোর্টের নির্দেশে বাগানে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ টহল করায় তারা স্প্রে করতে পারছিলেন না। তবে বৃষ্টির কারণে এখন আর স্প্রে করারও প্রয়োজন পড়বে না। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার আমচাষী ও বিদেশে আম রফতানিকারক ইসমাঈল হোসেন খান শামিম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ফণী আঘাত হানলে আমের ব্যাপক ক্ষতি হতো। এনিয়ে উদ্বেগ-আতঙ্কে দিন কেটেছে সবার। তবে কোন রকম ঝড় ছাড়াই ফণীর প্রভাবে শুধু বৃষ্টি হওয়ায় এখন স্বস্তিতে জেলার আম ব্যবসায়ী ও বাগান মালিক সবাই। ভোলাহাট উপজেলার আমচাষী আবদুস সাত্তার জানান, মুকুল আসার পর থেকেই বৃষ্টির দেখা মেলেনি। পাম্পের মাধ্যমে বাগানে পানি দিতে হয়েছে। সেটাও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। পানি না পাওয়ায় আম বড় হচ্ছিল না। ফলে সময়মতো আম নামানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। এই বৃষ্টি সেই দুশ্চিন্তা দূর করে দিয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ফণীর প্রভাবে শুধু বৃষ্টি হওয়ায় এটি আমের জন্য আশীর্বাদ। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় আমে রোগবালাই দেখা দিয়েছিল। বৃষ্টি হওয়ায় এখন আম দ্রুত বড় হবে এবং ঝরে পড়বে না। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় ৩২ হাজার হেক্টর জমির বাগান থেকে ৩ লাখ টন আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিন বলেন, ‘ফণীর প্রভাবে যে বৃষ্টি হয়েছে, তাতে আমের ‘বাড়-বাড়ন্ত’ বেশি হবে। বাগানের যে আমগুলো এক মাস পরে বাজারজাত করা যেত, তা এখন অন্তত ৭ থেকে ১০ দিন আগে নামানো যাবে। এতে আমচাষীরা একদিকে ভাল দাম পাবেন, অন্যদিকে ভোক্তারা বাজারে পুষ্ট ও সুস্বাদু আম পাবেন। রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি দফতর জানিয়েছে, চলতি বছর রাজশাহীতে রেকর্ড ১৭ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমিতে দুই লাখ ১৩ হাজার ৪২৬ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ২০১৭-১৮ কৃষি বর্ষে এই অঞ্চলে আমবাগান ছিল ৭০ হাজার ৩৪৬ হেক্টর। তা থেকে আম উৎপাদন হয় ৮ লাখ ৬৬ হাজার ৩৬১ টন। এর আগে ২০১১-১২ কৃষি বর্ষে রাজশাহী অঞ্চলে আমবাগান ছিল ৪২ হাজার ৪১৭ হেক্টর। সেইবার আম উৎপাদন হয় ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৭৩ টন।
×