ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

লিগ্যাল এইড বিষয়ক আইন-কানুন প্রতিটি ল স্কুলে পাঠ্যসূচীতে রাখুন ॥ প্রধান বিচারপতি

প্রকাশিত: ১০:৪৯, ৬ মে ২০১৯

 লিগ্যাল এইড বিষয়ক  আইন-কানুন প্রতিটি ল স্কুলে পাঠ্যসূচীতে রাখুন ॥ প্রধান বিচারপতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, লিগ্যাল এইড বিষয়ক আইন কানুন প্রতিটি ল’ স্কুলের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। সরকারী খরচে পরিচালিত মামলাগুলো অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে এবং দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক হতে হবে। একই সঙ্গে বিচারকদেরও লিগ্যাল এইড মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য মামলা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে। রবিবার জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উপলক্ষে সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন কর্তৃক অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন। সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। প্রধান বিচারপতি বলেন, ন্যায়বিচার প্রাপ্তি এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকার একটি সার্বজনীন মৌলিক মানবাধিকার। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার সংরক্ষণ এবং দরিদ্রবান্ধব ও জনকল্যাণকর বিচার ব্যবস্থার অন্যতম শক্তি হলো লিগ্যাল এইড তথা আইনগত সহায়তা প্রদান। ‘আইনের দৃষ্টিতে সমতা’র যে অমীয় বাণী আমরা বারবার প্রতিধ্বনি করি, আইনগত সহায়তা ব্যতিরেকে তা কখনই বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। আইনগত সহায়তাকে Access to Justice-এর অন্যতম স্তম্ভ বলা যায়। আমাদের দেশের মামলার পরিসংখ্যানকে ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা করলে প্রতীয়মান হবে জনগণের বিচার অভিগম্যতা ক্রমশ বেড়েই চলছে। লিগ্যাল এইড কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে। আমি এর দ্বিরুক্তি করব না। তিনি আরও বলেন, আইনজীবীগণ তিনভাবে আইন সহায়তা কার্যক্রমে অবদান রাখতে পারেন। প্রথমত : বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আইন সহায়তা বিষয়ে আইনজীবীদের উদ্বুদ্ধ করার নিমিত্তে নানাবিধ নীতি প্রণয়ন করতে পারে যেমন- প্রত্যেক আইনজীবীকে বছরে কমপক্ষে দুইটি মামলা বিনা ফি’তে পরিচালনা করতে হবে। অধিকন্তু, কেন্দ্রীয়ভাবে লিগ্যাল এইড বিষয়ক কর্মসূচী চালু করতে পারে। দ্বিতীয়ত : স্থানীয় বার এ্যাসোসিয়েশন বারের সদস্যদের আইন সহায়তার বিষয়ে উৎসাহিত করতে পারে। তৃতীয়ত : আইনজীবীগণ স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিনা ফি’তে অথবা নামমাত্র ফি’তে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আইনী সেবা দিতে পারে। বিচারকদেরও লিগ্যাল এইড মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য মামলা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, অসহায় বিচারপ্রার্থীদের যত দ্রুত আইনী সেবা দেয়া যাবে ততবেশি তারা আইন সহায়তার সুফল পাবেন। সরকারী আইন সহায়তা কার্যক্রম সত্যিকারভাবে কার্যকর করার ক্ষেত্রে প্যানেল আইনজীবীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তাদের আরও বেশি সংবেদনশীল হতে হবে। ক্লায়েন্টের প্রতি তাদের আচরণ হতে হবে মার্জিত বা সহনশীল। আমি আশা রাখব, সরকারী স্টিকার সম্বলিত মামলাসমূহ দায়ের থেকে নিষ্পত্তি পর্যন্ত জড়িত সকল পক্ষ সর্বোচ্চ মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে নিষ্পত্তির চেষ্টা করবেন, যাতে করে অসহায় মানুষজন অযথা হয়রানির শিকার না হয়। তিনি বলেন, জার্মান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা- জিআইজেডের সাম্প্রতিক এক নিরীক্ষার তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশের ৮৭ ভাগ মানুষ স্থানীয় পর্যায়ে বিরোধ নিষ্পত্তিতে আগ্রহী এবং শতকরা ৩০ ভাগ নাগরিকের প্রাথমিক দ্বন্দ্বের কারণ প্রতিবেশীর সঙ্গে ছোটখাটো বিরোধ বা মারামারি যা স্থানীয়ভাবেই নিষ্পত্তিযোগ্য। সুতরাং, আমাদের আইনী সেবার পরিকল্পনা করার সময় সাধারণ বিরোধের ধরন এবং সেই ধরন অনুযায়ী উপযুক্ত সমাধান কি হতে পারে তা খুঁজে দেখতে হবে; বিরোধ যদি ছোট হয় তাহলে তার সমাধানের আইনী প্রক্রিয়াকেও স্বল্পমূল্যের, সহজতর এবং দ্রুততর হতে হবে; বিচারব্যবস্থাকে স্থানীয় পর্যায়ে অর্থাৎ বিরোধের উৎসমূলে নিয়ে যেতে হবে। আর তা করতে হলে ইউনিয়ন লিগ্যাল এইড কমিটিসহ স্থানীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে তাদের আরও কার্যকর করতে হবে। পাশাপাশি, আইনগত সহায়তার বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ সপ্রণোদিত, দ্রুত ও কার্যকর আইনীসেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী সংস্থার সঙ্গে অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আইনী সহায়তার বিষয়টি নিয়েও নতুন করে ভাববার আছে এবং এ বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের সময় এসেছে। এখন পর্যন্ত আইনীসেবা বলতে আমরা আদালতে মামলা পরিচালনার জন্য আর্থিক সহায়তাকেই বুঝি। আইনী বিষয়ে তথ্য প্রদান, পরামর্শ ও মীমাংসাও কিন্তু কার্যকর আইনী সহায়তা। তিনি মনে করেন, কিছু কিছু বিষয়ে আইনী সহায়তা প্রদানকালে পুঁথিগত আইন প্রয়োগের দৃষ্টির পাশাপাশি সামাজিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণকেও স্থান দেয়া উচিত। যেমন- আপোসযোগ্য মামলা আদালতের বাইরে এবং মাদকের মামলায় মাদকাসক্তদের কারাগারে না পাঠিয়ে সমাজে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পুনর্বাসনের ব্যাপারটা ভেবে দেখা উচিত।
×