ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর অভয়ে দরপতন থামল শেয়ারে

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ৬ মে ২০১৯

 প্রধানমন্ত্রীর অভয়ে দরপতন থামল শেয়ারে

অপূর্ব কুমার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাতেই বিনিয়োগকারীদের আস্থা। শেয়ারবাজার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অভয়বাণীতেই দরপতনের যে পরিসমাপ্তি ঘটেছে টানা দুদিনের সূচকের বড় উত্থানে সেটিই ফের প্রমাণ হলো। ফলে কয়েকদিন ধরে শেয়ারবাজারের অস্থিরতা নিয়ে মতিঝিল পাড়ায় চলমান উত্তেজনাও থেমে গেছে। রাস্তায় নেই কোন বিনিয়োগকারী। জাতীয় সংসদের একাদশ সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনে গত মঙ্গলবার শেখ হাসিনার শেয়ারবাজার নিয়ে চিন্তার কিছু নেই বক্তব্যের পরই দুদিনে সূচক ১৯২ পয়েন্ট বেড়েছে। সার্বিক লেনদেন প্রধান শেয়ারবাজারে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫শ’ কোটির ওপরে। যেটি কমতে কমতে এক পর্যায়ে ২শ’ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছিল। গত মঙ্গলবার পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করে তাদের শঙ্কিত না হতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, পুঁজিবাজার ভাল করতে সব ধরনের পদক্ষেপ সরকার বাস্তবায়ন করছে। একাদশ সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে সরকারপ্রধান বলেন, আমি বলব, খুব বেশি শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটা কীভাবে ঠিক করা যায়, আমি এই পার্লামেন্টে বসেই কয়েকদিন আগে প্রায় রাত ১০টা পর্যন্ত সভা করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, এই শেয়ারবাজার নিয়ে অতীতে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। এটা যেন স্থিতিশীল থাকে তার জন্য অনেক ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থাপনায় যা যা করা দরকার, এটা তো আমরা করে যাচ্ছি। সব রকম সুযোগও আমরা দিচ্ছি। হঠাৎ খুব বেশি ওঠে আবার পড়ে না যায়, সে ব্যাপারে যা নিয়ন্ত্রণ করার, আমরা নিচ্ছি। পুঁজিবাজারে কারসাজি ঠেকাতেও সজাগ থাকার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে কেউ যদি কোনরকম গেম খেলতে চায়, অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এবং নেয়া হবে। সেই সঙ্গে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শও দেন তিনি। এর আগে একই দিনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল পুঁজিবাজারে চলমান মন্দার মধ্যে শেয়ার বিক্রি না করতে বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ দিয়েছেন। পরবর্তীতে বৃহস্পতিবারে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আসন্ন বাজেটকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই আগামী বাজেটে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ কিছু থাকবে। একইসঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনও বারবার বলছিলেন, শেয়ারবাজার নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদে বক্তব্য প্রদানের পরদিন বৃহস্পতিবারেই অর্থ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংককে পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের ৮৫৬ কোটি টাকার পুনঃবরাদ্দের আদেশ দেয়। মূলত এই অর্থ পুনঃবরাদ্দের দিন থেকেই শেয়ারবাজারে বড় ধরনের সূচকের উত্থান ঘটে। এর আগে ২০১০ সালের ধসের পর প্রণোদনা স্কিমের আওতায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহজ শর্তে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মাধ্যমে ঋণ বিতরণকৃত ঋণের ৮৫৬ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। যে অর্থ আবার বা পুনরায় বিনিয়োগে সম্মতি দেয় অর্থ বিভাগ। এটির মেয়াদ ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। ডিএসই ব্রোকার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, আস্থার সঙ্কটের কারণে বাজারে দরপতন হচ্ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাজার নিয়ে ‘ইতিবাচক’ বক্তব্য দেয়ায় সেই আস্থা ফিরে এসেছে। যে বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন; তারা আবার বাজারমুখী হয়েছেন। এই ৮৫৬ কোটি টাকা বাজারে আরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন ডিএসইর সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী। বাজার পরিস্থিতি ॥ সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রবিবারে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১০৮ পয়েন্ট বা ২ শতাংশ। ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। দিনটিতে ডিএসইতে মোট ৫৩৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ৪৭৫ কোটি ২৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। এই হিসাবে ডিএসইতে ৬০ কোটি ৬৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন বেড়েছে। এদিন ডিএসইতে মোট লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৩৪৫টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২৯২টির, কমেছে ৩৮টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫টি কোম্পানির শেয়ার দর। বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ডিএসইএক্স বা প্রধান মূল্যসূচক ১০৮ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৩৯৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ১৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে এক হাজার ২৪০ পয়েন্টে। আর ডিএস৩০ সূচক ৩১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে এক হাজার ৯০১ পয়েন্টে।
×