ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম বন্দরে ষাট ঘণ্টা ও বহির্নোঙ্গরে ৫ দিন অচলাবস্থা

ফণীর কারণে আমদানি রফতানি ক্ষতি শত কোটি টাকা ছাড়াবে

প্রকাশিত: ১০:২৫, ৬ মে ২০১৯

 ফণীর কারণে আমদানি রফতানি ক্ষতি শত কোটি টাকা ছাড়াবে

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দর টানা প্রায় ষাট ঘণ্টা অচল ছিল। এ সময় বন্দরের বহির্নোঙ্গর ও জেটিতে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের কোন কাজ হতে পারেনি। এর ফলে দেশের আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যে ক্ষতির পরিমাণ শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি) বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশন ও বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে। ফণীর প্রভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে যখন ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলা হয় তখন অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বন্দরের জেটিসমূহ থেকে একুশ জাহাজকে বহির্নোঙ্গরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এ সময় বহির্নোঙ্গরে মোট জাহাজের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৮ তে। বহির্নোঙ্গরে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের কাজ বন্ধ রাখতে হয় আরও দুদিন আগে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের কোন কাজ হয়নি পাঁচদিন। পক্ষান্তরে, জেটিতে জাহাজে পণ্য ওঠানামা করেনি প্রায় ষাট ঘণ্টা। রবিবার সকাল ১০টা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। সকালে বন্দরের নিজস্ব পাইলটদের তত্ত্বাবধানে বহির্নোঙ্গর থেকে জেটিতে জাহাজ আনার কাজ শুরু হয়। জিসিবি, সিসিটি, এনসিটি, রিভার মুরিং, স্পেশাল জেটিসহ বন্দরের ১৯ জেটিতে জাহাজ ভেড়ানো হয়। এরমধ্যে ১২ কন্টেনার বোঝাই পণ্য ও অবশিষ্ট ৭ বাল্কপণ্য বোঝাই জাহাজ ভেড়ানো হয়। বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোঃ ওমর ফারুক জানিয়েছেন, দুদিনেরও বেশি সময় জেটিতে কোন ধরনের কাজ হয়নি ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতের আশঙ্কায়। শনিবার সকালের পর বিপদ সঙ্কেত কমতে থাকলে দুপুরের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে। তবে রাত পর্যন্ত কোন কাজ হয়নি। রবিবার সকাল থেকে পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে। অপরদিকে ডব্লিউটিসির কো-কনভেনর শফিক আহমদ ও বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আহসানুল হক চৌধুরী যুগপৎভাবে জানিয়েছেন, বহির্নোঙ্গর ও জেটিতে কোন ধরনের পণ্য ওঠানামা না হওয়ায় বাণিজ্যিক ক্ষতি বিপুল অঙ্কের। তাদের মতে, এ ক্ষতির পরিমাণ শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এদিকে বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বহির্নোঙ্গরে প্রতিদিন গড়ে ৬০ লাইটার জাহাজ পণ্য ওঠানামার কাজে নিয়োজিত থাকে। ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে গত পাঁচদিনে প্রায় আড়াই লাইটার জাহাজ বহির্নোঙ্গরে যেতে পারেনি। যা দেশের আমদানি-বাণিজ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতি। এদিকে, বন্দরের নিজস্ব ১৯ জেটিতে এখন পুরোদমে পণ্য খালাসের মৌসুম। কেননা, একদিকে রমজানের পণ্য আমদানি হয়ে এসেছে টনে টনে, অপরদিকে- জাতীয় বাজেট ঘোষণাও আসন্ন। ফলে বিদেশ থেকে আমদানিকারকরা বিভিন্ন ধরনের পণ্য আগে ভাগে আমদানি করে নিয়ে এসেছে। যা খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস না হওয়ায় এখন বহির্নোঙ্গরে ইতোমধ্যে জাহাজের জট লেগেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষীয় সূত্র মতে, এ জট সারাতে কমপক্ষে দুসপ্তাহ সময় লাগতে পারে। উল্লেখ করা যেতে পারে, চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে গড়ে ২৯ লাখ টিইউইএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে। কন্টেনার হ্যান্ডলিং প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ৯ শতাংশ। গেল অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর আয় করেছে আড়াই হাজার কোটি টাকারও বেশি। এ আয় থেকে নিট মুনাফা হয়েছে ৭৯২ কোটি টাকা।
×