ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি নিয়মিত অভিযানে কমেছে

প্রকাশিত: ১০:২৪, ৬ মে ২০১৯

 পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি নিয়মিত অভিযানে কমেছে

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ পাহাড়ে অবৈধ আধুনিক অস্ত্রের ঝনঝনানি দিন দিন মজুদ বেড়েই চলেছে। নিয়মিত অভিযান চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো সেসব আধুনিক অস্ত্র উদ্ধার করছে। অভিযানে জার্মানির তৈরি এম কে-১১, এইচ কে-৩৩, রাশিয়ার জি-৩, একে-৪৭, একে-২২, এম-১৬ রাইফেল, নাইন এমএম পিস্তল, চায়নিজ এসএমজি, সাব মেশিনগান, এসবিবিএল বন্দুকের মতো অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় নিয়মিত অভিযান চলছে। উদ্ধার হওয়া অস্ত্র মানের দিক দিয়ে যেমন অত্যাধুনিক তেমনি দামের দিক দিয়েও ব্যয়বহুল। তবে অভিযান চললেও রুট বদল করে পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এসব অস্ত্র আনছে। চিহ্নিত রুটগুলোতে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। কিন্ত দীর্ঘ সীমান্ত দিয়ে নতুন নতুন রুট তৈরি করছে তারা। যেখানে দুর্গম ওসব রুটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চালানো সম্ভব হয় না। গোয়েন্দা সূত্রমতে, এম কে-১১ এর মতো অত্যাধুনিক রাইফেল দিয়ে প্রায় এক মাইল দূর থেকে আঘাত হানা সম্ভব। এই অস্ত্রের কার্যকর রেঞ্জ দেড় হাজার গজ। প্রতি মিনিটে ফায়ার করা যায় ৭৫০ রাউন্ড গুলি। একটি নতুন এমকে রাইফেলের দাম প্রায় ৮ লাখ টাকা। পাহাড়ীদের হাত ঘুরে এসব অস্ত্র পৌঁছে যাচ্ছে দেশে সক্রিয় বিভিন্ন জঙ্গীর হাতে। ব্যবহার হচ্ছে দেশবিরোধী সন্ত্রাসী কাজে। আটক জঙ্গীরা পাহাড় থেকে অস্ত্র সংগ্রহের বিষয়টি এরই মধ্যে স্বীকারও করেছে। জঙ্গীদের এ ধরনের তথ্যের পর তিন পার্বত্য জেলায় পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, দুর্গম পাহাড়ে সক্রিয় সন্ত্রাসীরা অস্ত্র কেনাবেচার রুট হিসেবে ব্যবহার করছে তিন পার্বত্য জেলাকে। জঙ্গীরাও এ অঞ্চল থেকে অস্ত্র সংগ্রহকে নিরাপদ হিসেবে মনে করছে। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে থাকা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গে তারা সখ্য গড়ে তুলছে। বিষয়টিকে রাষ্ট্রের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পার্বত্য অঞ্চল যেহেতু অস্ত্রের রুট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে সেহেতু ওখান থেকে অস্ত্র জঙ্গীদের হাতে যেতেই পারে। এটা জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়। এখানে বিভিন্ন নিরাপত্তা এজেন্সি কাজ করছে। তাদের উচিত হবে অস্ত্রের এসব রুট বন্ধ করা। বর্তমানে সেনাবাহিনী ও পুলিশের অভিযানের ফলে অস্ত্রের ঝনঝনানি অনেক কমেছে। একে সফলতা বলে আমরা মনে করি। পার্বত্য জেলায় উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলো দেশী অস্ত্র নয়। বাইরে থেকেই এসব অস্ত্র যে আসছে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। এ নিয়ে গোয়েন্দাদেরও রিপোর্ট রয়েছে। তারা বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন। পুলিশের পক্ষ থেকেও অস্ত্রের কানেকশন নিয়ে নজরদারি করা হচ্ছে। একইসঙ্গে পাহাড়ের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে জঙ্গীদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে আটক অনেক জেএমবি জঙ্গী জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে তারা পাহাড়ী অঞ্চল থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করেছে। এরপরই এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে সীমান্ত পয়েন্টগুলো আরও সুরক্ষিত করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন গোয়েন্দারা। পাহাড়ে সক্রিয় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগসাজশে সমতলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা চলছে। গোয়েন্দাদের তালিকায় তিন পার্বত্য জেলায় অস্ত্র কেনাবেচায় সম্পৃক্ত থাকা ১৫ বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের নাম রয়েছে। এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (এআরএসও), ন্যাশনাল ইউনাইটেড পার্টি অব আরাকান (এনইউএ), আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি), পিপলস পার্টি অব আরাকান (পিপিএ), আরাকান আর্মি (এএ), আরাকান রোহিঙ্গা ইসলামী ফ্রন্ট (এআরআইএফ), ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অব আরাকান (ডিপিএ)। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাইরের এসব বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের জন্য সতর্কতা অবলম্বনের অংশ হিসেবে এরইমধ্যে সীমান্তঘেঁষা বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে বেশ কিছু নতুন চেকপোস্ট। প্রয়োজন অনুযায়ী আরও নতুন চেকপোস্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এদিকে তিন পার্বত্য জেলার বেশ কয়েকটি স্থানকে অস্ত্র আসার রুট হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। বিশেষ করে বান্দরবানের থানচি ও নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তবর্তী এলাকা, রাঙ্গামাটি জেলার বরকল উপজেলার ছোট হরিণা, বড় হরিণা, বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক, জুরাছড়ির আন্ধারমানিক, ফকিরাছড়ি, বিলাইছড়ি, খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার নারাইছড়ি, পানছড়ির দুদকছড়ি, কেদারাছড়া, মাটিরাঙ্গা উপজেলার আচালং, রামগড় উপজেলার বাগানবাজার, বড়বিল, রামগড় বাজার ইত্যাদি। এসব এলাকাকে নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে দুর্বৃত্তরা। বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে ২৮১ কিলোমিটার সীমান্তের এরইমধ্যে ১৩০ কিলোমিটার সুরক্ষিত করা হয়েছে। অন্যদিকে মিয়ানমারের লাগোয়া ১৯৮ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্তের মধ্যে ৮৫ কিলোমিটার সুরক্ষিত করা হয়েছে। সীমান্ত সুরক্ষিত করার অংশ হিসেবে কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হচ্ছে চেকপোস্ট।
×