ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীবাদের আঁতুড়ঘর

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ৬ মে ২০১৯

 জঙ্গীবাদের আঁতুড়ঘর

যাবতীয় সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের আঁতুড়ঘর পাকিস্তান। সে দেশের সরকার বিশেষ করে সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই সন্ত্রাসী এবং জঙ্গীদের কেবল আশ্রয়-প্রশ্রয়-মদদই দেয় না, বাংলাদেশ-ভারতসহ বিদেশে রফতানিও করে। নিকট অতীতে এর বহু প্রমাণ মিলেছে। সর্বশেষ মিলেছে ভারতের কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী ভয়াবহ জঙ্গী হামলার ঘটনায়। এর বাইরে খোদ পাকিস্তানেও প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও মৌলবাদী সন্ত্রাসী জঙ্গীগোষ্ঠীর হামলার ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ জাতিসংঘ বিশ্বের জন্য বিপজ্জনক ঘোষণা করে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ প্রধান মাসুদ আজহারকে ঘোষণা করেছে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী’ হিসেবে। কিছুদিন আগে মাসুদ আজহারকে কালো তালিকাভুক্ত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সর্বোপরি ভারত প্রস্তাব উত্থাপন করে পুলওয়ামায় ভয়াবহ জঙ্গী হামলার জন্য দায়ী করে। তবে দুঃখজনক হলো, বরাবরের মতো প্রতিবেশী দেশ চীনের ভেটো প্রয়োগের কারণে তা নাকচ হয়ে যায়। স্বস্তির কথা এই যে, শেষ রক্ষা হয়নি। মাসুদ আজহারকে জাতিসংঘ কর্তৃক ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী’ হিসেবে ঘোষণা করার পরই টনক নড়ে পাকিস্তানের। জইশ-ই-মোহাম্মদের সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করাসহ তার বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পাকিস্তান। সাবেক সিআইএ প্রধান মাইকেল মোরেলও বলেছেন, পাকিস্তানের চেয়ে বিপজ্জনক দেশ আর একটিও নেই। পাকিস্তান রাষ্ট্রটি যে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের আঁতুড়ঘর তা উঠে এসেছে শুক্রবার রাজধানীতে আয়োজিত এক সেমিনারে, যার বিষয়বস্তু ছিল ‘জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার শান্তির দর্শন।’ যাবতীয় ধর্মীয় মৌলবাদসহ জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কারণে একেবারে নির্মূল না হোক, দমন হয়েছে অনেকাংশে। শেখ হাসিনার ‘শান্তির দর্শন’ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়েছে। প্রয়োজনে পাকিস্তানও এই মডেল অনুসরণ করতে পারে। তবে দেশটি তা করবে বলে মনে হয় না। কেননা, বহিরঙ্গে তথাকথিত একটি গণতান্ত্রিক সরকার থাকলেও দেশটি প্রকৃতপক্ষে চালায় সেনাবাহিনী ও আইএসআই। ইমরান খান প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর আশা করা গিয়েছিল যে, দেশটিতে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অবসান হবে। বাস্তবে ঘটল বিপরীত। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে যে, পাকিস্তানের রাজনীতির আকাশে আবারও সমূহ সঙ্কট ঘনীভূত হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টারি রাষ্ট্র ব্যবস্থার সঙ্গে কখনই সমন্বিত করা হয়নি। ফলে শক্তিশালী সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব ও ভুল বোঝাবুঝি বরাবরই পরিলক্ষিত হয়েছে। পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিসহ দুর্নীতির অভিযোগ, সাবেক স্বৈরসেনাশাসক জেনারেল পারভেজ মোশারফসহ নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে সপরিবারে বিচারের মুখোমুখি করা, সর্বোপরি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ব্যর্থ চেষ্টা সেনাবাহিনীর সঙ্গে একটি নির্বাচিত সরকারের দূরত্ব সৃষ্টির জন্য কম দায়ী নয়। প্রকৃতপক্ষে সে দেশের সেনাবাহিনী তথা আইএসআই এবং তালেবান, আইএস, জইশ-ই- মোহাম্মদ, লস্কর-ই-তৈয়বাসহ নানা জঙ্গীগোষ্ঠীর ব্যাপক সহিংস তৎপরতা জাতীয় নির্বাচনসহ পকিস্তানের ভবিষ্যতকেই অনিশ্চিত ও বিপন্ন করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও একঘরে হয়ে পড়েছে পাকিস্তান। দেশটির অর্থনীতিও রয়েছে চরম বিপর্যস্ত ও ভঙ্গুর অবস্থায়। চূড়ান্ত পরিণামে যা দেশটির জন্য ভাঙ্গনসহ সমূহ বিপদ ডেকে আনতে পারে।
×