ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সুনামগঞ্জে ফসল রক্ষা বাঁধে ভাঙ্গন

প্রকাশিত: ০৮:২৪, ৬ মে ২০১৯

সুনামগঞ্জে ফসল রক্ষা বাঁধে ভাঙ্গন

নিজস্ব সংবাদদাতা, সুনামগঞ্জ, ৫ মে ॥ ফণীর প্রভাবে অতিবৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলার হালির হাওড় ও শনির হাওড়ে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে বৌলাই নদীর পানি প্রবেশ করেছ। রবিবার ভোরে জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী ও রহমতপুর এলাকা দিয়ে শনির হাওড়ে এবং বদরপুর ও নিতাইপুর এলাকার বাঁধ দিয়ে হালির হাওড়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে তবে রৌদ্রের দেখা পাওয়ায় জনগণের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলেছে। হাওড়ে পানি প্রবেশ ঠেকাতে এলাকাবাসী প্রাণান্ত চেষ্টা করলেও পানির ব্যাপক চাপ থাকায় তা ঠেকানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে কৃষকরা। এখন বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। স্থানীয় একাধিক কৃষকের দাবি এই বাঁধগুলোতে বালু দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। ফলে বাঁধগুলো এখন ভেঙ্গে যেতে বসেছে। শনিবার গভীর রাতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল অবিরাম বৃষ্টিপাতে নেমে আসা পানির চাপে জেলার বিভিন্নœ হাওড়ে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বৌলাই নদীর পানি বাড়ার ফলে এই সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। বাঁধ এলাকায় থাকা লোকজন পানি ঠেকানোর চেষ্টা করলেও পানির প্রচন্ড চাপে তারা বাঁধ রক্ষা করতে পারছেন না। তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)’র দাবি, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে ফসল রক্ষা বাঁধের আপার (উপর) মেরে হাওড়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় পানি প্রবশে করতে শুরু করে এবং ক্রমশ তা বাড়তে থাকে। এই ঘূর্ণিঝড়রে প্রভাবে হাওড়ের জেলা সুনামগঞ্জে ভারিবর্ষণ হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি, হাওড়ের ফসল রক্ষা বাঁধের ডিজাইন লেভেল অতিক্রম করে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে জানানো হয়, ‘হাওড়ের সব জমির ধান কাটা হয়ে গছে। তাহিরপুর, ধর্মপাশা, শাল্লা, দিরাই, জগন্নাথপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, জামালগঞ্জ এসব এলাকার হাওড়ের শতভাগ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। তাদের দাবি, দেরিতে রোপণ করা ধান পাকতে দেরি হচ্ছে বলে, সদর, দোয়ারাবাজার বিশ্বম্ভরপুর এলাকায় কিছু ধান কাটা বাকি রয়েছে। গাইবান্ধা ১৯ ঘণ্টা বিদ্যুতহীন নিজস্ব সংবাদদাতা গাইবান্ধা থেকে জানান, ফণীর প্রভাব খুব কম হলেও এই অজুহাতে গাইবান্ধায় নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো) ডিভিশন-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলীর আওতাধীন শহরের পূর্বাঞ্চলে একটানা ১৯ ঘণ্টা বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ ছিল। শুক্রবার ভোর ৪টা থেকে শনিবার রাত ১১টা পর্যন্ত একটানা এই বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ থাকে। এদিকে শহরের পশ্চিমাঞ্চলে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টা বিদ্যুত বন্ধ ছিল। শহর এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহ করা হলেও জেলার গ্রাম অঞ্চলগুলোতে শুক্রবার ভোর ৪টায় বিদ্যুত বন্ধ হলেও রবিবার ১টা পর্যন্ত বিদ্যুত সরবরাহ করা হয়নি। ফলে এই দাবদাহে গাইবান্ধায় মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এতে বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা শনিবার রাত ১০টায় নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় ঘেরাও করে এবং সীমাহীন বিদ্যুত বিভ্রাটের প্রতিবাদ জানায়। পরে পঞ্চিমাঞ্চলের বিদ্যুত সরবরাহ লাইনের সঙ্গে পূর্বাঞ্চলের সংযোগের মাধ্যমে বিশেষ ব্যবস্থায় রাতে এই বিদ্যুত ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুত সরবরাহ লাইনের কোথাও ফল্ট রয়েছে এ খবর লেখা পর্যন্ত বিদ্যুত কর্তৃপক্ষ ডিভিশন-১ তা খুঁজে বের করতে পারেননি। কলাপাড়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি নিজস্ব সংবাদদাতা কলাপাড়া থেকে জানান, ফণী’র প্রভাবে ঝড়-বৃষ্টিতে কৃষকের রবিশস্য ও শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরকারী হিসাবে এখানে অন্তত ১০ কোটি ৭৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকার ক্ষতির দাবি করা হয়েছে। যাতে ধান-রবিশস্যসহ শাক-সবজির ৬৫৮ হেক্টর জমির ক্ষতি হয়। ৪৭৩০ কৃষকের এ পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল মান্নান জানান, ৪৪ হেক্টর জমির বোরো ধান, ১০ হেক্টর জমির মিষ্টি আলু, ৯০ হেক্টর ভুট্টা, বাঙ্গি ৬ হেক্টর, শসা ১২ হেক্টর, চিনাবাদাম ৭৫ হেক্টর, সূর্যমুখী ৭ হেক্টর, ১৬০ হেক্টর জমির মরিচ, ৮০ হেক্টর জমির মুগডাল, ১৭৪ হেক্টর জমির শাকসবজি বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। আড়িয়াল খাঁয় ভাঙ্গন স্টাফ রিপোর্টার বরিশাল থেকে জানান, ফণীর প্রভাবে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে মুলাদী, বাবুগঞ্জ ও গৌরনদী উপজেলার সীমান্তবর্তী আড়িয়াল খাঁ ও পালরদী নদীর চরদিয়াশুর এলাকার ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এতে করে চরম হুমকির মুখে পড়েছে মিয়ারচর লঞ্চঘাটসহ নদীর তীরবর্তী কয়েকশ’ পরিবার। সরেজমিনে ভুক্তভোগীরা জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে শুক্রবার বিকেল থেকে আড়িয়াল খাঁ ও পালরদী নদীতে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে আড়িয়াল খাঁর গর্ভে ওই এলাকার অসংখ্য ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। গৌরনদীর মীরারচর লঞ্চঘাটের অংশে ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় টার্মিনালটি নদীর মধ্যে চলে গেছে। নদীর তীরবর্তী কয়েকশ’ পরিবার ও শত শত একর ফসলি জমি ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা ভাঙ্গন প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য মন্ত্রী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। শরণখোলায় ২শ’ পরিবার জলমগ্ন বাবুল সরদার বাগেরহাট থেকে জানান, বকুল বেগম, হাওয়া বিবি, সাহিদা বেগমসহ কয়েকজন গৃহিণী বলেন, বাঁধ ভাঙ্গ্যা (ভেঙ্গে) পানি ঢুইক্যা চুলা নষ্ট হইয়া গ্যাছে। এহন রানমু (রান্না) ক্যামনে ? খামু কি ?’ বকুল, হাওয়া, সাহিদার মতো বাগেরহাটের সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বগী, সাতঘর ও দশঘর এলাকার দুই শতাধিক পরিবারের প্রায় একই প্রশ্ন। এই পরিবারগুলো পানিবন্দী জীবন যাপন করছেন। ফণীর প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ার আর উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে এখানে ৩৫/১ পোল্ডারের অধীন বেড়িবাঁধের প্রায় দেড় শ’ মিটার ভেঙ্গে যায়। এখান থেকে জোয়ারের সময় পানি ঢুকে গ্রামগুলো জলমগ্ন হয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধা রুস্তম হাওলাদার (৭০) ও বগী-দশঘর জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাহফুজুর রহমান বলেন, বেড়িবাঁধের কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙ্গনের ফলে আমাদের বাড়িঘর পানিতে ডুবে রয়েছে। হাঁস-মুরগির ঘর, গরুর গোয়াল, রান্নাঘর ও থাকার ঘর সবই পানির নিচে। এখন খুবই বিপদে আছি আমরা।
×