ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিশুসহ নিহত চার, দুটি ভবন বিধ্বস্ত ॥ ইসরাইলের প্রতি ট্রাম্পের সমর্থন, এরদোগানের নিন্দা

গাজায় ইসরাইলী বিমান হামলা

প্রকাশিত: ০৮:১০, ৬ মে ২০১৯

গাজায় ইসরাইলী বিমান হামলা

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা থেকে হামাস ও ইসলামিক জিহাদের যোদ্ধারা শনিবার থেকে ইসরাইলে চার শতাধিক রকেট হামলা চালিয়েছে। এর জবাবে ইসরাইল ট্যাঙ্ক ও বিমান হামালা চালিয়েছে। এতে চার ফিলিস্তিনী নিহত হন। নিহতদের মধ্যে একটি শিশু রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলে রকেট হামলার নিন্দা জানিয়ে গাজায় ইসরাইলের হামলার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। তারা বলেছে, ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগান তুর্কী সংবাদ সংস্থার দফতরে বোমা হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এএফপি ও ওয়েবসাইট। ইসরাইলের বিমান হামলায় গাজায় দুটি বহুতল ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরাইল জানিয়েছে, ভবন দুটির একটিতে হামাসের সামরিক গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা দফতর ছিল। তুরস্ক জানিয়েছে, ইসরাইলের বিমান হামলায় বিধ্বস্ত একটি ভবনে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদোলুর অফিস ছিল। ফিলিস্তিনের সরাসরি পক্ষ নেয়া রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে অন্যতম হলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। তিনি টুইটারে জানিয়েছেন, গাজায় আনাদোলু এজেন্সির অফিসে ইসরাইলী হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তুর্কী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগ্লু বলেন, বেসামরিক লোকদের ওপর হামলা মানবতাবিরোধী অপরাধ। ইসরাইল লক্ষ্য করে ছোড়া কয়েক শ’ রকেটের জবাবে গাজায় ট্যাঙ্ক থেকে গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইলী সামরিক বাহিনী। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এ পাল্টাপাল্টি হামলা রবিবার তৃতীয় দিনে গড়িয়েছে এবং এতে দু’পক্ষের অন্তত সাত জন নিহত হয়েছে। রবিবার গাজা থেকে ছোড়া একটি রকেটের বিস্ফোরণে এক বেসামরিক ইসরাইলী নিহত আর ইসরাইলী হামলায় দুই ফিলিস্তিনী বন্দুকধারী নিহত হয় বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। শনিবার রাতে গাজার সীমান্তবর্তী ইসরাইলী এলাকাগুলোতে বারবার রকেট হামলার সাইরেন বেজে ওঠে। এতে ওই এলাকার ইসরাইলীদের রাতভর আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যাওয়া-আসার মধ্যে থাকতে হয়। এ সময় ইসরাইলী রকেট প্রতিরোধী ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আকাশে ফিলিস্তিনী রকেট নিষ্ক্রিয় করে দেয়। ইসরাইলী পুলিশ জানিয়েছে, গাজা থেকে ছোড়া রকেটগুলোর একটি আশকেলন শহরের একটি বাড়িতে আঘাত হেনেছে। এতে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। অপরদিকে ইসরাইলী বোমাবর্ষণে গাজার ভবনগুলো কেঁপে কেঁপে উঠেছে এবং ফিলিস্তিনীরা পালিয়ে আড়াল নিতে বাধ্য হয়েছে বল জানিয়েছেন স্থানীয়রা। রবিবার ভোরের আগে তাদের দুই সদস্য নিহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনী সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামী জিহাদ জানিয়েছে। শুক্রবার ইসলামিক জিহাদের এক স্নাইপার ইসরাইলী সেনাদের দিকে গুলি ছোড়ার পর গাজা সীমান্তে নতুন করে সহিংসতার সূত্রপাত হয়। ওই স্নাইপারের গুলিতে তাদের দুই সেনা আহত হয়েছেন বলে ভাষ্য ইসরাইলী সামরিক বাহিনীর। এর প্রতিক্রিয়ায় গাজায় বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। এতে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের দুই যোদ্ধা নিহত হন। একইদিন ইসরাইলী সীমান্তের কাছে প্রতিবাদরত দুই ফিলিস্তিনীকেও ইসরাইলী বাহিনী গুলি করে হত্যা করে বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনী কর্মকর্তারা। শনিবার থেকে হামাস ও ইসলামিক জিহাদের যোদ্ধারা ইসরাইলের গ্রাম ও শহরগুলো লক্ষ্য করে চার শতাধিক রকেট ছুড়েছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলী সামরিক বাহিনী। এর জবাবে গাজার প্রায় ২০০টি লক্ষ্যে পাল্টা গোলা ও বিমান হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। এক বিবৃতিতে ইসলামিক জিহাদ জানিয়েছে, শুক্রবারের হামলা এবং কায়রোর মধ্যস্থতায় হওয়া আগের দফা সমঝোতা বাস্তবায়নে ইসরাইলের সময় ক্ষেপণের প্রতিক্রিয়ায় রকেটগুলো ছোড়া হয়েছে। শনিবার ইসরাইলী সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল জনাথন কনরিকাস জানিয়েছেন, হামলার মাত্রা আরও বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইল। ইসলামিক জিহাদ সীমান্তকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে আর হামাস তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ তার। অপরদিকে একইদিন এক যৌথ বিবৃতিতে হামাস ও ইসলামিক জিহাদ বলেছে, শত্রু যদি যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে তাহলে আমাদের প্রতিক্রিয়া আরও বিস্তৃত ও আরও যন্ত্রণাদায়ক হবে। মুসলিমদের পবিত্র মাস রমজান ও ইসরাইলের স্বাধীনতা দিবসের ছুটির ঠিক আগে ইসরাইল-গাজা সংঘাত ফের উস্কে উঠল। দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে তেলআবিবে ইউরোভিশন সঙ্গীত প্রতিযোগিতা-২০১৯ এর ফাইনাল হওয়ারও কথা রয়েছে। মার্চে গাজা থেকে তেলআবিব লক্ষ্য করে দূর-পাল্লার রকেট ছোড়া হয়েছিল, এ কারণে সংঘাত না কমলে আয়োজকরা ওই অনুষ্ঠান নিয়ে শঙ্কায় পড়তে পারেন। দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি রকেট ও বিমান হামলা নিয়মিত ঘটনা হলেও গত পাঁচ বছর ধরে সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়াতে পেরেছে বৈরী পক্ষ দুটি।
×