ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

ছায়ানটে নালন্দার শিশুদের ওয়াহিদুল হক স্মরণোৎসব

প্রকাশিত: ১১:১৩, ৫ মে ২০১৯

ছায়ানটে নালন্দার শিশুদের ওয়াহিদুল হক স্মরণোৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিশু শিল্পীদের বহুমাত্রিক পরিবেশনায় উৎসব হয়ে ওঠে প্রাণময়। ভেসে বেড়ায় গানের সুর। নজরে পড়ে শাস্ত্রীয় নৃত্যের স্নিগ্ধতা। কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে স্পন্দিত হয়েছে হৃদয়। পরিবেশনার সঙ্গে সোনামণিদের আঁকা ছবিসহ বিভিন্ন কাজের প্রদর্শনীতে পুরো আয়োজনে যুক্ত হয়েছে ভিন্ন মাত্রা। এভাবেই শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হলো সংস্কৃতির শাণিত হাতিয়ারকে সঙ্গী করে পথ চলো ওয়াহিদুল হককে। সুর ও সংস্কৃতির শক্তিতে ভর করে অসুরের বিরুদ্ধে লড়াই করা এই বরেণ্য ব্যক্তিত্বকে জানানো হলো ভালবাসা। শিশুদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, ‘ঘাসের মত বাঁচো। বড় বৃক্ষ হওয়ার দরকার নেই, সবাইকে নিয়ে সবার সঙ্গে ঘাস হয়ে থাকো’। ছোট্ট বন্ধুদের পরিবেশনা বারবার যেন মনে করিয়ে দিয়েছে ওয়াহিদুল হক আজও ঘাস হয়ে বেঁচে আছেন শিশুদের মনে। গত ১৬ মার্চ ছিল এই বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক ও সংগঠকের জন্মদিন। এ উপলক্ষে শনিবার থেকে শুরু হলো ছায়ানটের সংস্কৃতিক সমন্বিত বিদ্যালয় নালন্দার উৎসব। বৃষ্টি স্রোত বৈশাখী সন্ধ্যায় ‘অভয় বাজে হৃদয় বাজে’ প্রতিপাদ্যে দুই দিনব্যাপী উৎসবের সূচনা হয়। ওয়াহিদুল হকের জন্মদিনের এ উৎসবে চমৎকারভাবে সজ্জিত হয়েছে ধানম-ির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন। প্রথম তলা থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়েছে খুদে চিত্রকরদের রঙিন ক্যানভাসে। আবহমান গ্রাম বাংলা, মুক্তিযুদ্ধসহ বিবিধ বিষয়ের ছবিগুলো দারুণভাবে নজর কাড়ে দর্শনার্থীদের। সব মিলিয়ে ছায়ানটের ভবনজুড়েই ছড়িয়েছে কচি-কাঁচার অসীম আবেগমাখা প্রাণের প্রবাহ। ওয়াহিদুল হক বাঙালী হয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার জন্য আজীবন মানুষ গড়েছেন, তাদের সংঘবদ্ধ করেছেন, পথ দেখিয়েছেন সংস্কৃতির। ছায়ানটসহ অসংখ্য সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলায় অগ্রগণ্য ব্যক্তি তিনি। সারাদেশে রবীন্দ্র সঙ্গীত চর্চায় মানুষকে আগ্রহী করে তোলার ক্ষেত্রে তার অবদান চিরস্মরণীয়। নালন্দার শিশুরা গানে গানে, নানা আয়োজনে স্মরণ করছে সংস্কৃতির পথ নির্মাণের এই অগ্রপথিককে। এবারের উৎসব ভাবনা ‘শিক্ষা ও মানবিকতা’। বিকেলে উৎসব উদ্বোধন করেন প্রাবন্ধিক, লেখক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। এরপর শুরু হয় নালন্দার শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান শুরু হয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে। কচিকণ্ঠে পরিবেশিত হয়েছে খেয়াল। এরপর ছিল মণিপুরী নৃত্য পরিবেশনা। সবই ছিল বৃন্দ পরিবেশনা। মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা ‘এমন মানব জনম আর কি হবে’ গানের উপস্থাপন করেছে লোকনৃত্য। কিশলয়ের শিশুরা ‘সাতটি রঙের মাঝে’ গানের সুরে পরিবেশন করে নৃত্য। এছাড়া পরিবেশিত হয় ব্রতচারী ছড়া, জারি নৃত্য, গীতরঙ্গ প্রযোজনা ‘স্বাধীনতার অভিযাত্রা’। ছিল শিশুদের স্বরচিত পাঠ। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে শেষ হয় অনুষ্ঠান। ছায়ানট ভবনের দেয়ালজুড়ে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে শিশুদের আঁকা ছবির প্রদর্শনী। উৎসবের দ্বিতীয় দিন আজ রবিবার রয়েছে সঙ্গীত অনুষ্ঠান। বিকেল চারটা ও সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় উপস্থাপিত হবে শিশুদের মঞ্চ পরিবেশনা।
×