ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হাসিনা সরকার জঙ্গীবাদ দমন করলেও শিকড় রয়ে গেছে

প্রকাশিত: ১১:১১, ৫ মে ২০১৯

হাসিনা সরকার জঙ্গীবাদ দমন করলেও শিকড় রয়ে গেছে

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ খুলনা শহরে প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়া তথা বাংলাদেশের একমাত্র গণহত্যা-নির্যাতন বিষয়ক জাদুঘর ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয় শনিবার। আগামী ১৭ মে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হলেও শীঘ্রই রমজান শুরু হওয়ায় কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে শনিবার বিকেল ৪টায় নগরীর বিএমএ ভবনের আজহারুল হক মিলনায়তনে ‘৫ম শহীদ স্মৃতি স্মারক বক্তৃতা’র আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ‘সাম্প্রদায়িকতা থেকে জঙ্গীবাদ : ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড’ শিরোনামে স্মারক বক্তৃতা প্রদান করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সরকারী কর্ম কমিশনের সদস্য কবি আসাদ মান্নান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জাদুঘরের ট্রাস্টি শংকর মল্লিক। স্মারক বক্তৃতায় অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে থেকেই যেই শক্তিগুলো বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিল পেছনের দিকে ফিরে গেলে দেখা যায় তারাই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ে নেতৃত্ব দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি খুনীই কোন না কোন আদর্শের পূজারী ছিল। এদের সঙ্গে জড়িত ছিল মওলানা ভাসানী এবং জাসদের মতো শক্তিও। আজকের বাংলাদেশে প্রতিটি সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ কিংবা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার সবকটি প্রয়াসের পেছনেও সেই একই আদর্শ কাজ করেছিল। সেটি হচ্ছে বাংলাদেশকে পাকিস্তানে পরিণত করা। এরাই জয় বাংলা স্লোগানকে উৎখাত করে পাকিস্তানী জিন্দাবাদ স্লোগান আনে।’ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এসে জঙ্গীবাদ দমন করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু জঙ্গীবাদের শেকড় এখনও রয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমরা মানব ধর্ম চাই, মানবতার ধর্ম চাই। বাংলাদেশের মাটিতে আমরা কোন সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দেখতে চাই না। সম্মানিত বক্তা কবি আসাদ মান্নান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের যেমন বীরত্বের ও গৌরবের ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি বেদনার ইতিহাসও আছে। শ্রেষ্ঠ সন্তানদের আত্মদানের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। তাদের ভুলে গেলে চলবে না। তিনি ১৯৭১ : গণহত্যা নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর প্রতিষ্ঠার জন্য অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুনকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, এটি হচ্ছে একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। জীবনের শ্রেষ্ঠতম জায়গা। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘এদেশে জঙ্গীবাদের উত্থান হতো না যদি না ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমাদের যে প্রতিবাদের সংস্কৃতি ছিল সেটা আমরা বজায় রাখতাম। শাসকেরা সব সময়ের মতো এখনও মৌলবাদ আর ধর্মান্ধতার বিষয়গুলোকে কঠোরভাবে দমন করছে না। আজ আমাদের ওপর হামলা হয় এখনও। এখনও হত্যার হুমকি দেয়া হয়। এসবের পেছনে সেই একই শক্তি কাজ করছে। মৌলবাদী শক্তি। পাকিস্তানে মৌলবাদের অভিযোগে ৩০ হাজার মাদ্রাসা সরকার নিয়ে নিয়েছে। জনগণের মুক্তির মূল স্পিরিটটা না বুঝতে পারলে এই সমস্যার সমাধান কখনই হবে না। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন আরও বলেন, গত ৫ বছরে গণহত্যা জাদুঘর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সত্য উদ্ঘাটনের এবং ইতিহাস বিনির্মাণের অন্যতম একটা প্রতিষ্ঠানে রূপলাভ করেছে, এ জাদুঘরের অধীনে বিভিন্ন বধ্যভূমিতে ৩০ স্মৃতিফলক, ৩০ জেলায় গণহত্যা জরিপ, ৮০ গণহত্যা নির্ঘণ্ট প্রকাশ ও ৩০০ জন গবেষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, আর্কাইভে মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত প্রায় ৯ হাজার ছবি, ৬ হাজার গ্রন্থ এবং দুষ্প্রাপ্য পত্র-পত্রিকা রক্ষিত রয়েছে। এই জাদুঘরই প্রথম ডিজিটাল জেনোসাইড ম্যাপ তৈরি করেছে এবং এসব ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। শুধু তাই নয়, মন্ত্রণালয় জাদুঘরের জরাজীর্ণ ভবন ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যবৃন্দ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার কয়েক শ’ মানুষ।
×