ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জঙ্গীদের এবার টার্গেট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী!

প্রকাশিত: ১১:১০, ৫ মে ২০১৯

জঙ্গীদের এবার টার্গেট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী!

শংকর কুমার দে ॥ সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলার চক্রান্ত করছে জঙ্গীরা। এ জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি), কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, ডিবি, সিআইডি ও র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নসহ র‌্যাব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটকে সতর্ক করা হয়েছে। প্রায় এক সপ্তাহ আগে গুলিস্তানে কর্তব্যরত পুলিশের ওপর শক্তিশালী ককটেল ছোড়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র মতে, শ্রীলঙ্কার ভয়াবহ বোমা হামলার পর রাজধানীর বসিলায় জঙ্গীবিরোধী অভিযানে দুই জঙ্গীর আত্মঘাতীর হওয়ায় দিনে গুলিস্তানেই কর্তব্যরত তিন পুলিশের ওপর বোমা হামলা চালায় জঙ্গীরা। মোটরবাইক আরোহীর বেশে শক্তিশালী ককটেল নিক্ষেপ করে মুহূর্তের মধ্যে তারা জনাকীর্র্ণ রাস্তায় মিশে উধাও হয়ে যায়। এ জন্য সারাদেশের থানা, ফাঁড়ির পাশাপাশি পুলিশের প্রতিটি ইউনিট এখন সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। ঢাকায় বারিধারার কূটনীতিক পল্লী, ভিন্ন ধর্মালম্বীদের উপাসনালয়, পুলিশ সদর দফতর, ডিএমপি সদর দফতর, মন্ত্রীপাড়াসহ সর্বত্র দৃশ্যমান নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি ছায়া নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে। কূটনীতিকদের পাশাপাশি বিদেশী নাগরিকদেরও সতর্ক করা হয়েছে। জঙ্গী সংগঠন নব্য জেএমবির জঙ্গীরা প্রায়শ অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্যদের ‘কাফের’ ও ‘তাগুত’ আখ্যা দিয়ে তাদের ওপর হামলা চালানোর আহ্বান জানাচ্ছে। এ কারণে নিরাপত্তা জোরদারের পাশপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রাজধানীতেও জঙ্গী হামলার আশঙ্কায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, কূটনীতিকপাড়াসহ রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও স্পর্শকাতর স্থানসমূহের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ টার্গেট করে হামলা চালানোর জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন বার বার নির্দেশ দিচ্ছে। এ কারণে পুলিশের ওপর হামলার ঝুঁকি বেড়েছে। প্রতিটি পুলিশ সদস্যকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি সম্ভাব্য হামলাকারীদের গ্রেফতারে অভিযান জোরদার করা হয়েছে এবং প্রত্যেক সদস্যকে ব্যক্তিগত সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গী হামলার ঝুঁকি নেই এ কথা বলার সময় এখনও আসেনি। হঠাৎ করেই রাজধানীর বসিলার মতো এক বাড়িতে দুই জঙ্গী আত্মঘাতী হওয়ার বিষয়টি প্রমাণ করে, জঙ্গীরা গোপনে এখনও তৎপর। জঙ্গীরা যে এখন আছে শুধু তাই নয়, তারা। এখনও বহাল আছে। দেশে জঙ্গী তৈরি হওয়ার রাজনৈতিক প্লাটফরম উগ্রবাদী ধর্মান্ধ রাজনীতি যতদিন বহাল থাকবে ততদিন জঙ্গী তৈরি হবেই। তবে জঙ্গীদের সাংগঠনিক কর্মকা- বন্ধ হয়নি তার প্রমাণ রাজধানীর বসিলায় দুই জঙ্গীর আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনা এবং গুলিস্তানে কর্তব্যরত তিন পুলিশের ওপর ককটেল হামলার বিষয়টি। জঙ্গীদের দাওয়াতী কর্মকা- চলছে, অবকাঠামোও বহাল আছে। এ অবস্থায় ঝুঁকি থাকাটাও স্বাভাবিক। গোয়েন্দা সংস্থার এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার পর চল্লিশটির বেশি সম্ভাব্য জঙ্গী হামলার ছক নস্যাত করে দিয়েছে পুলিশ-র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ জন্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর ক্ষিপ্ত ও ক্ষুব্ধ জঙ্গীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক নজরদারি ও অভিযানের মুখে দেশের বিভিন্ন গোপন ডেরায় ঘাপটি মেরে আছে জঙ্গীরা। ওদের অবস্থান, হামলার মোকাবেলায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সব সময়ই সতর্ক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকরী বাহিনী । র‌্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, বসিলায় আত্মঘাতী হওয়া দুই জঙ্গীর পরিচয় মেলেনি। ’১৭ সালে মিরপুরের বর্ধনবাড়ি এবং সীতাকু-ের জঙ্গী আস্তানার জেএমবির দু’জনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। বসিলায় নিহত দুজন তারা কি না সে বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। আত্মঘাতী হওয়ার আগে দুই জঙ্গী সুজন ও সুমন বসিলায় বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল। অবশ্য তাদের নাম দুটি ভুয়া বলে মনে হচ্ছে। কারণ জঙ্গীরা কোন সময়েই প্রকৃত নাম পরিচয় ব্যবহার করে না। আত্মঘাতী হওয়া দুই জঙ্গীর আরও সহযোগী থাকতে পারে, যারা সাধারণ মানুষজনের সঙ্গে মিলেমিশে ঘাপটি মেরে থাকতে পারে।
×