ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরির তাগিদ

৩০ হাজার কোটি টাকা যাকাত আদায়ের সম্ভাবনা ॥ উঠছে কয়েক কোটি

প্রকাশিত: ১১:১০, ৫ মে ২০১৯

৩০ হাজার কোটি টাকা যাকাত আদায়ের সম্ভাবনা ॥ উঠছে কয়েক কোটি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে ৩০ হাজার কোটি টাকা যাকাত আদায়ের সম্ভাবনা থাকলেও সরকারীভাবে আদায় হচ্ছে মাত্র কয়েক কোটি টাকা। ব্যক্তির নিজস্ব উদ্যোগে দেয়া যাকাত বড় অবদান রাখছে না। এজন্য যাকাত আদায় ও বণ্টনে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো থাকা দরকার বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। আর প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যাকাত আদায় দারিদ্র্য বিমোচন তথা বৈষম্য দূরীকরণে ভূমিকা রাখবে বলেও মত দেন বক্তারা। শনিবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে (কেআইবি) ৭ম যাকাত ফেয়ারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্ট (সিজেডএম) এ ফেয়ারের আয়োজন করে। মেলায় যাকাত সংক্রান্ত পরামর্শ ডেস্ক, বিভিন্ন ইসলামিক বই ও যাকাত ভিত্তিক বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরার জন্য কয়েকটি স্টল ছিল। দিনব্যাপী এই মেলা শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টায়। মেলা উপলক্ষে ‘আয় বৈষম্য কমাতে যাকাত ও কর’ শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমাদের দেশে যাকাত মেলা হয়। আমি আগেও এখানে এসেছি। কর মেলা হয়। এসব মেলা অন্য কোথাও হয় কি না আমার জানা নেই। মেলা আমাদের সংস্কৃতির একটা অংশ। মন্ত্রী বলেন, যাকাতের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর হতে পারে। দেশের বিশাল একটি অংশ যাকাত বিষয়ে এখনও সচেতন নয়। দারিদ্র্য এর একটি অন্যতম কারণ। যাকাতের মধ্যেও দারিদ্র্য দূরের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত আছে। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে আমরা যখন ক্ষমতায় এসেছিলাম তখন দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৪ শতাংশ। আমরা তা ২০ থেকে ২১ শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছি। একই সঙ্গে দেশে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে, আয় বাড়ছে; এটি একদিকে ভাল। আবার কোটিপতি বা আয় বাড়ার কারণে দেশে আয় বৈষম্য বাড়ছে বিষয়টিও ভাবতে হচ্ছে। এটা একটি খারাপ দিক। সবকিছুই আমাদের মাথার রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, সরকারের সকল প্রকল্পে দরিদ্ররা কতটুকু উপকৃত হবে তা মাথায় রাখা হয়। কর মেলা করে আমরা উপকৃত হয়েছি। যাকাত ফেয়ারের মাধ্যমে দেশ উপকৃত হতে পারে। এম এ মান্নান বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী কাজপ্রিয় মানুষ। তিনি দেশের উন্নয়ন চান। আমাদের সরকারের কিছু অগ্রাধিকার কাজ রয়েছে আর অগ্রাধিকার কাজের মধ্যে দারিদ্র্য দূর করাও একটি। এই দেশ থেকে দারিদ্র্য দূর করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য হলো সকল নাগরিকের সমঅধিকার ও ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। আমরা আমাদের সরকার সেভাবেই কাজ করছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ, সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ, ইসলামী ব্যাংক কনসালটেটিভ ফোরাম এর ভাইস চেয়ারম্যান এ কে এম নুরুল ফজল বুলবুল প্রমুখ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেশে আয় বৈষম্য ধীরে ধীরে বাড়ছে। গিনি কো ইফিসিয়েন্ট সূচক দিয়ে আয় বৈষম্য পরিমাপ করা হয়, এই সূচকের হিসেবে বাংলাদেশে বৈষম্যের মাত্রা ০.৪৮। দশমিক পাঁচ হলে অতিমাত্রার বৈষম্য রয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়। আমরা সেই অবস্থানেই আছি। তিনি বলেন, দারিদ্র্য ও আয় বৈষম্য কমাতে যাকাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। করের ক্ষেত্রে যেমন অনেকে কর ফাঁকি দেয়, তেমনি অনেকে যাকাত ফাঁকি দেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যক্তি উদ্যোগে যাকাত দেয়া হয়, কিন্তু তা টেকসই না। যাকাতকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপ দিয়ে বেশিসংখ্যক মানুষকে সাহায্য করা যেতে পারে। সাবেক বিচারপতি আব্দুর রউফ বলেন, আমাদের সাপ্লিমেন্টারি বাজেট ভলিউম বাড়ছে। অথচ এটি একটি ভুল ডিসিসন। বিশে^র কোথাও এমন ট্র্যাডিশন দেখা যায় না। অনেকেই যাকাতের টাকা নিজের মনে করে। ইসলামী ভাষায় আমি তো আল্লাহ্র দেয়া সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করছি মাত্র। সিজেডএম প্রতিষ্ঠানটি যে কাজটি করছে তা হলো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আরও সুন্দরভাবে এসব আদায় করা যায় তার ব্যবস্থাটা দেখিয়ে দিচ্ছে। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী বলেন, যাকাত এবং ট্যাক্স দুই বিষয়ে আমাদের একটা নেতিবাচক ভাব কাজ করে। কিন্তু দেশের কল্যাণে উভয় দরকার। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনবিআর এর সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ। দেশে ত্রিশ হাজার কোটি টাকা যাকাত আদায় হতে পারে বলেও বিভিন্ন ভাবে তিনি দেখান। এসময় তিনি পারিবারিক ও সামাজিক পরির্বতনে যাকাতের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, যাকাত ও কর আদায় এবং তার বণ্টনে কিছু অব্যবস্থাপনার কারণে সরকার তার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারছেনা। সেমিনারে অন্য বক্তারা বলেন, ৩০ হাজার কোটি টাকার যাকাত আদায়ের সম্ভাবনা আছে। অথচ যাকাত বোর্ড আদায় করে মাত্র কয়েক কোটি টাকা। যাকাত আইন করা যেতে পারে। এনবিআরের মাধ্যমে যাকাত আদায় করা যায় কিনা ভেবে দেখা যেতে পারে। একই সঙ্গে যাকাত প্রদানকারীকে কর রেয়াত সুবিধা দেয়া যেতে পারে বলেও মনে করেন বক্তারা। যাকাত ফেয়ারে মোট চারটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। নারীদের জন্য ছিল পৃথক ও বিশেষ প্রশ্নোত্তর সেশন।
×