ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশসেরা চৌগাছা মডেল হাসপাতালের বেহাল দশা

প্রকাশিত: ১১:০৩, ৫ মে ২০১৯

দেশসেরা চৌগাছা মডেল হাসপাতালের বেহাল দশা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ চিকিৎসাসেবায় আদর্শ দৃষ্টান্ত স্থাপন করা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নাম যশোরের চৌগাছা উপজেলা মডেল ৫০ শয্যা হাসপাতাল। মোট ১২ বার অর্জন করেছে দেশসেরার পুরস্কার। সর্বশেষ স্বাস্থ্যসেবায় সারাদেশে প্রথম স্থান অধিকার করে ৭ এপ্রিল পেয়েছে ‘হেল্থ মিনিস্টার ন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড-২০১৮’। কিন্তু দেশসেরা এই হাসপাতালের বাস্তবতায় খুবই দুরবস্থা বিরাজ করছে। গাইনি বিশেষজ্ঞ না থাকায় মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ সুব্রত কুমার বাগচি প্রসূতিদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। তিনিই করছেন সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার। বর্তমানে চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সঙ্কটের মধ্যেই চলছে কার্যক্রম। এখানকার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সিভিল সার্জন পদোন্নতি পেয়ে ঝিনাইদহে যোগদান করেছেন। আবার আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ আওরঙ্গজেব উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনে তিন বছরের ছুটিতে গেছেন। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার নাহিদ সিরাজের নেতৃত্বে চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, এই হাসপাতালে মোট চিকিৎসকের পদ রয়েছে ২১। কিন্তু বিপরীতে ৮ জন চিকিৎসক কর্মরত ছিলেন। ওই ৮ পদের মধ্যে ১ জন উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, কার্ডিওলজিস্ট চিকিৎসক ১জন, অর্থোপেডিক চিকিৎসক ১জন, আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ১জন ও মেডিক্যাল অফিসার ৪জন। বর্তমানে ৬ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে এখানকার চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সেলিনা বেগম পদোন্নতি পেয়ে গত ১১ এপ্রিল ঝিনাইদহে সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদান করেছেন। আবার উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনে গত ৭ এপ্রিল তিন বছরের জন্য অন্যত্র গেছেন আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ আওরঙ্গজেব। এর আগে বছরের পর বছর ধরে ফাঁকা রয়েছে গাইনি বিশেষজ্ঞ, চক্ষু বিশেষজ্ঞ, চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ, সার্জারি বিশেষজ্ঞ, ইএনটি বিশেষজ্ঞ ও অজ্ঞান করা চিকিৎসকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো। এছাড়া সহকারী সার্জন ১, প্যাথলোজিস্ট ১, ৫ সিনিয়র স্টাফ নার্স, প্রধান সহকারী, হিসাবরক্ষক, ক্যাশিয়ার, অফিস সহকারী ২, এমএলএসএস ২ ওয়ার্ড বয় ১ আয়ার পদগুলোও রয়েছে শূন্য। বর্তমানে জোড়াতালি দিয়ে চলছে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম। হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, বিগত দিনে চৌগাছা মডেল হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সাবেক চিকিৎসক ইমদাদুল হকের চেষ্টায় অন্তঃসত্ত্বাদের উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেন। একজন প্রিয় চিকিৎসক হিসেবেও তিনি পরিচিত অর্জন করেন। মা ও প্রসূতিসেবায় ব্যাপক অবদান রাখার ফলে ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এটি উপজেলা পর্যায়ে একটানা দেশসেরা হাসপাতাল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০১৬ সালেও হাসপাতাল অর্জন করেছে জাতীয় পুরস্কার। সর্বশেষ স্বাস্থ্যসেবায় সারাদেশে প্রথম স্থান অর্জন করে গত ৭ এপ্রিল পেয়েছে ‘হেল্থ মিনিস্টার ন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড-২০১৮’। এদিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার গ্রহণ করেন প্রতিষ্ঠান প্রধান সেলিনা বেগম। মোট ১২ বারের দেশসেরা এই হাসপাতালের বর্তমান অবস্থা রুগ্ন। চৌগাছা পৌরসভার পাঁচনামনা গ্রামের সুমি খাতুন, উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের পারভীন খাতুনসহ অনেকেই জানিয়েছেন, জরুরী মুহূর্তে কোন সেবা মেলেনা এখানে। গাইনি বিভাগে দায়িত্বরত মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ সুব্রত কুমার বাগচিকে দুপুর আড়াইটার পর আর খুঁজে পাওয়া যায়না। অন্য বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসকরাও কর্মস্থলে আসেন না নিয়মিত। ফলে সামান্য সমস্যায় রোগীদের ছুটতে হচ্ছে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালসহ বেসরকারী বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। দেশসেরা হাসপাতালে সেরা চিকিৎসাসেবা নেই বলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হাসপাতালের সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সেলিনা বেগমের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, তারা মোট ৮ জন দায়িত্বে ছিলেন। বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে অনেক কষ্ট করে হাসপাতাল পরিচালনা করতেন। তিনি সিভিল সার্জন পদে পদোন্নতি পেয়ে ঝিনাইদহে যোগদান করেছেন। এছাড়া আরএমও তিন বছরের জন্য ছুটিতে গেছেন। বর্তমানে ৬ জন রয়েছেন সেখানে। দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো পূরণ না হলে দেশসেরা এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায় খুবই ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে। একজন মেডিক্যাল অফিসারের পক্ষে কোনভাবেই গাইনি রোগীদের সামাল দেয়া সম্ভব হবেনা। যশোরের সিভিল সার্জন ডাঃ দিলীপ কুমার রায় জানিয়েছেন, চৌগাছা মডেল হাসপাতালে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার পদ দ্রুত পূরণ হবে। এছাড়া গাইনি কনসালটেন্ট ও গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসকের পদগুলো পূরণের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নতুন একজন মেডিক্যাল অফিসার সেখানে যোগদান করবেন বলেও জানান সিভিল সার্জন।
×